Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈধ ডিলারে অবৈধ কারবার

অস্ত্র চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করা একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। চক্রটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে আসছিল। ওই চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করত। অবশেষে গত রোববার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ওই চারজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রামের বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির একটি পাড়ার হেডম্যান লাল তন পাংখোয়া ও চট্টগ্রাম এলাকার মো. হোসেনের দুই সহযোগী মো. আলী আকবর এবং মো. আদিলুর রহমান।

গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ও টিমের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রামে তার একটি অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকান ব্যবহার করে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতেন তিনি। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো- বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতেন, এখন মারা গেছেন বা অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না, এমন মানুষদের কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন হোসেন। ওই লাইসেন্সগুলা দিয়ে অস্ত্র কিনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এরকম একটি লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা।

তিনি আরও বলেন, লাল তন পাংখোয়ার বাড়ি রাঙ্গামাটির বরককলের সাইচালে। তিনি পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবানের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র-গুলি চোরাচালানানের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। মো. হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে অস্ত্র-গুলি কিনে আকবর এবং আদিলুর রহমান সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো সরবরাহ করতেন।

আদিলুর রহমান সুজন মো. হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা দীর্ঘদিন ধরে হোসেনের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র-গুলি কিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। এরা আবার অবৈধ অস্ত্র-গুলি চট্টগ্রামের হামিদুল হক,আবদুল মান্নান আহমেদ সফা, কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলদের কাছে বিক্রি করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক নাম পেয়েছি। যাদের কাছ থেকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতেন। আমরা রিমান্ডে তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করবো বলে আশা করছি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এই চক্রের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো। আমরা আশঙ্কা করছি তারা ইতোপূর্বে অনেক অস্ত্র ও গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করেছেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করবো। আমাদের আরও আশঙ্কা তাদের কাছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একে-৪৭ এর গুলি অর্ডার করেছিল। কার কাছে তারা একে-৪৭ এর গুলি বিক্রি করতে চেয়েছিল, সেগুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। আমাদের ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বড় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে।

ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত বড় অস্ত্রের চালান নিয়ে আসতে পারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, তবে অবশ্যই এটা হুমকি তো বটেই। অস্ত্রগুলো হয়তো বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারত। যেটা আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতো।

তারা কতজনের কাছে এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা তাদের কালকে গ্রেফতার করেছি, এ বিষয়ে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। দীর্ঘদিন তারা এই ব্যবসা করে আসছে। আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আমরা আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাবো। গ্রেফতার হওয়া সবাই বাংলাদেশের নাগরিক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রেফতারের সময় অস্ত্রগুলো তাদের ব্যাগের মধ্যে ছিল। তিনজনের কাছে আমরা অস্ত্রগুলো পেয়েছি, আরেকজনের কাছে গুলি পেয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৈধ ডিলার

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ