পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত এক বছরে দেশে ব্রেন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে। ব্রেন স্ট্রোকের পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে মারা গিয়েছিলেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে মৃত্যুও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে আজ ২৯ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে হৃদ্রোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান। এ ছাড়া পঙ্গুত্ব বা শারীরিক অক্ষমতার জন্য স্ট্রোককেই বেশি দায়ী করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, স্ট্রোক দুই ধরনের। এক, রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দুই, রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে চোখে কম দেখা, মাথা ঘোরানো, অচেতন হয়ে পড়া, শরীরের এক দিক অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে বছরে দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকজনিত সমস্যায় ভোগে। এর মধ্যে স্ট্রোকে মৃত্যু হয় প্রায় ৫০ লাখের। বাকিদের স্ট্রোকের কারণে পক্ষাঘাতজনিত সমস্যা বরণ করে নিতে হয়। এই রোগীরা পরিবারের বোঝা হয়ে যান। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। তবে শিশুদেরও স্ট্রোক হতে পারে।
দেশে স্ট্রোকের রোগী বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক মো. বদরুল আলম বলেন, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বয়স বাড়লে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। সে হিসেবে মৃত্যুও বাড়বে। এছাড়া ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেশি থাকা, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। দেশে এসব গ্রহণের হার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের প্রবণতা। করোনার সময়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা ও নানা মানসিক চাপে ছিল। স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। সে কারণেও ২০২০ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল ২০১৮ সালে স্ট্রোক নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। দেশের ৬৪টি জেলার ২৫ হাজার ২৮৭ মানুষের ওপর করা ওই জরিপের ফলাফলে বলা হয়, দেশে এখন প্রতি হাজারে ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী আছে। ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। স্ট্রোকের প্রকোপ শহরের চেয়ে গ্রামে কিছুটা বেশি।
ময়মনসিংহে স্ট্রোকের রোগী বেশি
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের গবেষণায় বলা হয়, অন্যান্য বিভাগের তুলনায় ময়মনসিংহ বিভাগে স্ট্রোকের রোগী বেশি। এ বিভাগে প্রতি হাজারে ১৪ দশমিক ৭১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত। সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন এখানে ২০ থেকে ২৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। এ হাসপাতালে মাসে ৬০০ জনের বেশি স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগে রোগী বেশি থাকার বিষয়ে অধ্যাপক মো. বদরুল আলম বলেন, গবেষণায় এই কারণ খোঁজা হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, এই অঞ্চলে গ্রামের মানুষের মধ্যে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া অনেকে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়েও সচেতন নন।
হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান হারুন উর রশিদ বলেন, ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই প্রবীণ। তাঁদের অনেকেই শারীরিক সমস্যা অনুভব করলেও নিয়মিত চিকিৎসা নেন না। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না।
জরিপে আরো বলা হয়, এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত হয়ে গত দুই বছরে দেশে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। ২০১৯ সালে চিকুনগুনিয়ায় ৪ হাজার ৪৫৮ জনের মৃত্যু হলেও ২০২০ সালে তা কমে ৫২৪ জনে নেমে এসেছে। ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু কমেছে। ২০১৯ সালে ম্যালেরিয়ায় ২০ হাজার ৯৮ জন মারা গেছেন। গত বছর তা কমে ৬৫৫ জনে নেমে এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।