পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আ’লীগের সম্পর্ক আরও গভীর হবে : অন্যান্য রাষ্ট্রকেও বাংলাদেশ সম্পর্কে আকৃষ্ট করবে : শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হবে : তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত
তারেক সালমান : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ আশা করছে সরকার। প্রায় ২৭টি প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যেমন ঘটবে, তেমনি জনপ্রিয়তা বাড়বে আওয়ামী লীগের। আর এই জনপ্রিয়তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে দেশ-বিদেশে প্রশংসিত করবে। এমনটি মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা। কেবল সরকার নয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফর শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে দেশ-বিদেশে আরও প্রশংসিত করেছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।
চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে সফল দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কত টাকা দিল, কত চাল দিল, কত ডাল দিল; এটা কোনো বিষয় নয়, বিষয়টা হলো কানেকটিভিটি। চীন আমাদের সঙ্গে আছে। এটাই একটা পরিপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবকাঠামোসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। গতকাল শনিবার হযরত শাহ জালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বিদায় জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সৈয়দ আশরাফ এ সব কথা বলেন।
আশরাফ বলেন, চীন এখন সুপার পাওয়ার। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি, তারা গঠনমূলক। এখানে চীনকে নিয়ে আতংকের কোনো কারণ নেই। বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা চীন নিজেদের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নেও সহযোগিতা করতে চায় বলে মনে করেন তিনি।
দলের একাধিক নেতা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে এ সফরের সুফল আওয়ামী লীগই পাবে। এছাড়া এ সফরের মধ্য দিয়ে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলেও আশাবাদী নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে মাঠের নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা ও উজ্জীবিত। আর মাঠও এখন তৃণমূলের দখলে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এজন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নানামুখী পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তার সঠিক সিদ্ধান্তের কারণেই সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আজ উজ্জীবিত।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জিনপিংয়ের সফরটি আওয়ামী লীগের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্যে নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ ছিল। সরকার চীনকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করেছে।
দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে এখনও যারা প্রশ্ন তোলেন, সমালোচনা করেন, তাদের সেই প্রশ্ন কিংবা সমালোচনা জিনপিংয়ের সফরের মধ্য দিয়ে দূর হয়ে গেছে। এ সফরে একদিকে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। অপরদিকে শক্তিশালী একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সফর অন্যান্য রাষ্ট্রকেও বাংলাদেশের প্রতি আরও আকৃষ্ট করবে।
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে এই সফর আওয়ামী লীগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এই সফরে এ যাবৎ কালের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করতে পারে বাংলাদেশ। তা নিশ্চিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হবে।
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, স্বনির্ভর ও শক্তিশালী একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেছেনÑ এটি সরকারের জন্য যেমন আনন্দের, আওয়ামী লীগের জন্যও। এ সফর শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এদিকে আর মাত্র ছয়দিন পর ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন। সম্মেলনের আগে জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে দলটির। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অবশ্যই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি বিশাল অর্জন। সরকারের কূটনীতি কতটা সফল, এই সফর তা প্রমাণ করেছে।
শি জিনপিংয়ের সফরে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে দু’দেশের সম্পর্কের যে উন্নতি হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে পারলে মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সুগম হবে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগকৃত অর্থের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। সোনালি দিন কিংবা নতুন দিগন্তের সূচনা চীনের প্রেসিডেন্টের সফরটিকে দু’ভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে দু’দেশের সরকারি শীর্ষ পর্যায় থেকে। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে মিলেছে সে নিশ্চয়তাও। রেকর্ড বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা নিয়ে ৩০ বছর পর ঢাকায় পা রাখলেন চীনা প্রেসিডেন্ট, প্রাপ্তিও মিলেছে সমান তালে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামো নির্মাণ, সন্ত্রাসবাদ দমন, কৃষি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মিলেছে উন্নয়নের নিশ্চয়তা। বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরাশক্তি দেশটির ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড প্রকল্পেও বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়টি এখন চূড়ান্ত। অনেক প্রাপ্তির এ সফর নিয়ে তাই আশাবাদী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর। তবে প্রশ্ন থেকে যায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতার। সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের আশঙ্কার জায়গা তাই বিনিয়োগকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর। চীনের সঙ্গে প্রায় শত কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। তাই শুধু অভ্যন্তরীণ কাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ নয়, তৈরি পোশাক ও চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের বাণিজ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে এলে হবে সুষম উন্নয়ন, এমনটাই মনে করছেন কূটনীতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।