পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের বিরোধী দলকে গুরুত্ব না দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে জনগণের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে চাই, দুই দেশের জনগণের স্বার্থে, উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই। সরকার আসে যায় কিন্তু জনগণই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির মূল্যায়ন সরকার নয় জনগণের সাথে বন্ধুত্ব চায় চীন। জনগণের সম্পর্কে বিশ্বাসী বলেই দেশটির প্রেসিডেন্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন। দুই দেশের উন্নয়ন, জনগণের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা হবেÑ এ রকম চুক্তি অবশ্যই চীন বাস্তবায়ন করবেÑ বিএনপির প্রত্যাশাও সেটাই। গত শুক্রবার ২২ ঘণ্টার সফরকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেন। ৪০ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান সাবিহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সারাংশ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চীন জনগণের বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে। আপনারা দেখেছেন যে, প্রেসিডেন্টগণ কোনো দেশ সফর করলে সে দেশের সরকারি ও বিরোধী দলের সাথে কথা বলেন। আর বিরোধী দলকে স্বীকৃতি দেয় সেই বিরোধী দল যারা পার্লামেন্টে আছে। এটা পরিষ্কারভাবে এদেশের জনগণকে চীনের প্রেসিডেন্ট এই ম্যাসেজ দিয়ে গেলেন যে, এই পার্লামেন্ট (দশম) যেহেতু নির্বাচিত পার্লামেন্ট নয়, এই পার্লামেন্টে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি বা বিরোধী দল নেই। সেজন্য বিরোধী দলকে মহামান্য চীনের প্রেসিডেন্ট কোনো গুরুত্ব দেয়নি। গুরুত্ব দিয়েছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। অতত্রব এটাও আমরা মনে করি যে, চীনের মহামান্য প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি বার্তা বা ইশারা এই দেশের জনগণের জন্য দিয়ে গেছেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শি জিনপিং এদেশের জনগণকে এই বার্তাই দিয়ে গেছেন, বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে জনগণের পাশে চীন আছে। এ দেশের জনগণ যাতে করে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পাশে আছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট নিজেও বলেছেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে তিনি বন্ধুত্ব চান। এই বন্ধুত্ব এজন্য চান যে, জনগণের মধ্যে যদি বন্ধুত্ব হয়, সেটা টেকসই হয়, জেনারেশন টু জেনারেশন এই বন্ধুত্ব চলতে থাকবে। সেজন্য চীন জনগণের বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে। এর মাধ্যমে চীনের প্রেসিডেন্ট এ কথাও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সরকার আসে যায় কিন্তু জনগণই তাদের কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সরকার যেমন জনগণকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে, জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন, উন্নয়ন করেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তেমনিভাবে বাংলাদেশের জনগণকেও তিনি (চীনের প্রেসিডেন্ট) এই বার্তা দিলেন যে, আমরা (চীন) জনগণ যখন তাদের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, তাদের মনোভাবের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চাই।
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সভাপতি ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে একটি ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আমরা আশা করি যে, এ দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য চীন বাংলাদেশকে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাতে চীন বিশাল অবদান রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
‘এক চীন নীতি’ সম্পর্কে দলের অবস্থান তুলে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা এক চীন নীতির সমর্থক। হংকং আজকে চীনের সাথে যুক্ত হয়েছে কোনো রকমের ঝগড়া-বিবাদ কিছু ছাড়াই। যেহেতু চীন সহাবস্থানে বিশ্বাস করে, তার জন্য ম্যাকাও ও হংকং তারা স্বেচ্ছায় চীনের মূল ভূখ-ের সাথে যুক্ত হয়েছে। তাইওয়ান এখনো চীনের মূল ভূ-খ-ের সাথে যোগ দেয়নি। আমরা আশা করি, তারাও এই মূল ভূ-খ-ের সাথে যুক্ত হয়ে চীনকে আরো শক্তিশালী করবে।
চীন ‘আধিপত্য ও সম্প্রসারণ নীতিতে বিশ্বাসী নয়’ উল্লেখ করে এক্ষেত্রে বিএনপিও চীনের এই নীতিকে সমর্থন করে বলে জানান তিনি। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে চীনের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, চীনের সাথে কানেটিভি সম্প্রসারণ করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার থাকা অবস্থায় চীনের সাথে আকাশ পথে ঢাকা-কুম্বিং ফ্লাইট শুরু হয়েছিল যা এখন সম্প্রসারণ হয়েছে। আমাদের সরকারের সময় প্রস্তাব ছিল, এশিয়ান হাইওয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে ৩৭ কিলোমিটার নতুন রাস্তা করে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীনের হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত হয়ে গোটা পশ্চিম এশিয়ার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলব। চীন এতে সমর্থন করেছিল। আমরা এ ব্যাপারে কাজে অগ্রসর হয়েছিলাম। আমরা আশা করি, চীন এই ব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন এবং চীনের সাথে কানেকটিভির জন্য এই সিলক রোডকে বাস্তবায়ন করবেন।
সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চারদলীয় জোট সরকারের প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলোম। চীনও সমর্থন করেছিল। এই বন্দর হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুফল হবে, চীনও সুফল পাবে। আশা করি, এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চীন বাস্তবায়ন করে বন্ধুত্বকে আরো সুদৃঢ় করবে।
ঢকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) উদ্যোগে ‘চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর : ভূ-আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন বার্তা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাগপা সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার আমিনুর রহমান, আসাদুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।