পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : সময়োপযোগী আবহাওয়া চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষীদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় সেচ খরচ বাদেই তারা রকমারি সবজি উৎপাদন করতে পেরেছেন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। মাঠ ভরে গেছে সবজিতে।
দেশের মোট সবজি চাহিদার প্রায় ৬৫ ভাগ যোগান হয় যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) দেশে কত হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাকে দেয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এবার বাজারে উঠতে কয়েকদিন দেরি হলেও শীতকালীন সবজির ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নানা কারণে যশোর অঞ্চল আগামীতে সবজি আবাদ ও উৎপাদনে শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে পারবে কিনা তাতে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠা, বাজারজাতের সমস্যা, উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় চাষীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট। বাজারের খবর হচ্ছে এবারও মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিমাত্রায় মুনাফা লুটছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দু’টি মৌসুমে সরকার সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৬ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। বাস্তবে তার অনেক বেশি জমিতে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। যার একটা বড় অংশ হচ্ছে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।
সূত্র জানায়, প্রতি বছর ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০ লাখ মেট্রিক টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়। যশোরের পাইকারি বাজারের দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দৃষ্টি দিলে সারাদেশের একটা বড় অংশের ভোক্তা তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে সবজি ক্রয় করতে পারতেন। সবজি চাষীরাও পেতেন উপযুক্ত মূল্য। কিন্তু বরাবরই এই বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে। যশোরের সবজির বড় পাইকারি বাজার বারীনগরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর শীতকালীন সবজি উঠেছে। মাঠে মাঠেও সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। সিম, বেগুন, মুলা ও লাউসহ সব ধরণের শীতকালীন সবজিতে ছেয়ে গেছে কাঁচাবাজার। শুধু যশোর নয় আশপাশের জেলা ও উপজেলা এলাকার মাঠে এখন বাণিজ্যিকভাবে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের মতো এখন আর শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজির পার্থক্য খুব একটা নেই। বছরের বারোমাসই সবজির পর সবজি আবাদ হয়। পাল্টে গেছে গতানুগতিক ধারা। সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিকল্পিভাবে আরো আধুনিক প্রযুক্তি অনুযায়ী চাষাবাদ করা হলে যশোরের সবজি অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ নিষেধ করে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সবজি চাষীরা বছরের বারোমাসই শাক-সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তাদের উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় না কখনো। নিত্যনতুন কৌশলে সিম, পটল ও বেগুনসহ সবজির আবাদ ও উৎপাদনেও বিপ্লব ঘটেছে। তিনি জানান, এবার সবজি আবাদে সেচ খরচ হয়নি বললেই চলে। কারণ সময় ও পরিমাণ মতো বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে হাওড় ও পানিবদ্ধ এলাকাতেও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সবজি উৎপাদন করতে পারদর্শী হয়েছেন চাষীরা। তার মতে, মাঠের দাম আর বাজার দামের বিরাট পার্থক্য ঘোচানোর ব্যবস্থা খুবই জরুরি। চাষীদের কথা, সবজি বিপ্লবের সুফল পাচ্ছি না। সূত্র মতে, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ছাড়াও নরসিংদী, কুমিল্লা, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, চট্টগ্রাম, রংপুর, ঠাকুরগাও ও দিনাজপুর এলাকায় সবজি আবাদ ও উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবজি আবাদে সরকারি যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তার সিংহভাগই আবাদ ও উৎপাদন হয় যশোর জেলায়। জেলার মধ্যে আবার যশোর সদর উপজেলার বারীনগরসহ গ্রামে গ্রামে বাড়ির আঙিনায় ও মাঠে মাঠে প্রধান আবাদি ফসল হিসেবে সবজি স্থান করে নিয়েছে। যশোরের হৈবতপুর, তীরেরহাট, মানিকদীহি, মথুরাপুর, মুরাদগড়, মশিয়াহাটি, মাঝদিয়া, সুবর্ণসরা, গৌরিনাথপুর, ফুলবাড়ী, ঝনঝনিয়া, নিশ্চিন্তপুর, দৌলতদিহি, বালিয়াঘাট, সৈয়দপুর, কুটালীপুর, ললিতাদাহ, বালিয়াডাঙ্গা, বেনেয়ালী, ডহেরপাড়া, লাউখালী, কাউদিয়া, নাটুয়াপাড়া, সালতা, ফুলবাড়ী, আব্দুলপুর, চুড়ামনকাঠি, সাহাবাজপুর, বিজয়নগর, ছাতিয়ানতলা, সানতলা, নুরপুর, বাগডাঙ্গা, দোগাছিয়া, সাজিয়ালী, শ্যামনগর ও কমলাপুরসহ এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে শাক-সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয় না। ওইসব গ্রামের সবজি চাষীরা সাধারণত বারীনগর, আমবটতলা ও খাজুরা বাজার এলাকায় পাইকারি মূল্যে সবজি বিক্রি করে থাকেন। সেখানে সরেজমিনে খোঁজ নিলেই দেখা যাবে পাইকারি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও দালালরা ট্রাক ভিড়িয়ে নামমাত্র মূল্যে সবজি ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে সবজি নিয়ে যাচ্ছে। বিক্রি করছে অতিরিক্ত মূল্যে।
কয়েকজন সবজি চাষী বললেন, এক কেজি সিম পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে ক্রয় করছে মাত্র ৩৫ টাকা কেজিদরে। খুচরা বাজারে সিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজিদরে। শীতকালীন অন্যান্য সবজির মূল্যেরও বিরাট ফারাক থাকছে। সবজির বাজারের দিকে সরকার নজর দিলে মধ্যস্বত্বভোগীরা কম মুনাফা লুটলে উৎপাদক চাষী ও ভোক্তা উভয়েই লাভবান হতে পারতেন।
যশোরের বারীনগর ও খাজুরা ‘ভেজিটেবল জোন’ হিসেবে পরিচিত। একসময় সন্ত্রাসের কারণে গ্রামাঞ্চলের এসব এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও একপর্যায়ে পিছিয়ে যেতেন শিল্পপতিরা। বর্তমানে সেই পরিবেশ নেই। এলাকার সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে সব ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীরও ঘোষণা ছিল। কিন্তু উদ্যোগের অভাবে তা হচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে পরিশ্রমী সবজি চাষীরা দেশের সবজি চাহিদা পুরণ করছেন। অথচ সব সময়ই তারা বঞ্চিত নানাভাবে। তাদের সমস্যা কোথায়, কেন উপযুক্ত মূল্য পায় না, মধ্যস্বত্বভোগী মুনাফালোভীদের লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে অসুবিধাটা কোথায়Ñ এসব ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে কোনো তদারকি নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।