Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে সমুদ্রে ভাসছে ট্রলার

নতুন করে নিপীড়নে জাতিসংঘের উদ্বেগ

প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৯ এএম, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক
মিয়ানমারে গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান রাষ্ট্রীয় বর্বরতা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। জাতিসংঘের হুঁশিয়ারির পর গতকাল মালয়েশিয়ান সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, ইতোমধ্যে ২০০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে বহনকারী একটি অন্ততঃ চারটি ট্রলার সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে।
মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইট টাইমস অনলাইন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটির মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি গত ৫ দিন আগে চারটি ট্রলার মালেশিয়ার উপকূলে ভিড়তে পারে বলে খবর পায়। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত ট্রলারগুলো পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন মেরিটাইম এজেন্সির মহাপরিচালক দাতো সেরি আহমদ পুজি আবদুল কাহার। তিনি বলেন, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে ট্রলারগুলো উপকূলরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতে না পারলে আশপাশে অন্য কোনো দেশের দিকে রওয়ানা দেয়। আবদুল কাহার আরো জানান, তারা বিষয়টিকে সিরিয়াসলিই নিয়েছেন এবং উপকূলে কোনো সন্দেহজনক বিচরণ চোখে পড়লে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মিয়ানমার সীমান্তে কিছু সন্ত্রাসীর হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার জের ধরে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম বর্বরতা শুরু করে সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন এবং কয়েক হাজার বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন।
নতুন করে নিপীড়নে জাতিসংঘের উদ্বেগ
রাখাইন রাজ্যে নিপিড়ীত জনগোষ্ঠি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নতুন করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে শুরু হওয়া বর্বরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গতকাল সংস্থাটির মানবিক সহায়তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি স্টিফেন ও’ব্রায়েন এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সহিংসতার পরিবর্তে সবপক্ষকেই সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে। নির্যাতনের শিকার এবং ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদকৃত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবানও জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন থেকে এই বিবৃতি দেয়ার আগে গত তিন দিন ধরে সহিংসতার মধ্যেই মিয়ানমারের রাখাইন এবং কচিন প্রদেশ সফর করেন ও’ব্রায়েন।
সীমান্ত চৌকিতে হামলার জন্য আকামুল মুজাহিদিন দায়ী : মিয়ানমার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সীমান্ত পুলিশের চৌকিতে হামলার জন্য ইসলামি ভাবাদর্শ আকামুল মুজাহিদিনের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত একটি গোষ্ঠী দায়ী বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াওয়ের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মংডু শহরের কাছে চালানো ওই হামলার জন্য স্বল্প পরিচিত আকামুল মুজাহিদিন গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। মংডু শহরটি দেশটির পশ্চিম সীমান্তের কাছাকাছি একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্মীয় চরমপন্থা ব্যবহার করে তারা তরুণদের প্ররোচিত করেছে, এছাড়া তারা বাইরে থেকে আর্থিক সহায়তাও পেয়েছে। আইএসআইএস (আইএস), তালিবান ও আল কায়েদার মতো তারাও তাদের ভিডিও ইন্টারনেটে সম্প্রচার করছে। এখন মংডু অঞ্চলে লড়াইরত তাদের ৪০০ বিদ্রোহী আছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। চলতি সপ্তাহে ইন্টারনেটে ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের রোহিঙ্গাদের ভাষায় কথা বলতে দেখা গেছে। এসব ভিডিওর সত্যাসত্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বার্তা সংস্থা। তবে মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব ভিডিওতে ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে জড়িত হামলাকারীদের দেখা গেছে বলে বিশ্বাস করেন তারা। ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সহিংসতায় ১শ’র বেশি মানুষ নিহত ও ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন। নিহতদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে নতুন বিদ্রোহ শুরু হওয়ার শঙ্কায় আছেন।রাখাইন রাজ্যে হঠাৎ শুরু হওয়া এ সহিংসতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দেশটির ছয়মাস বয়সী সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। গেল বছর মিয়ানমারের প্রথম অবাধ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে সু চির নেতৃত্বাধীন দল। কিন্তু রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিমদের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটির সরকার। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনা দেশেটির সরকার। মিয়ানমারের বৌদ্ধরা মনে করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে। রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বৈষম্য, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং চাকরি-বঞ্চিত করা হচ্ছে। সরকারিভাবে স্বীকৃত মিয়ানমারের ১৩৫টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়া হয়নি। সূত্র: জাতিসংঘ নিউজ সেন্টার, রয়টার্স, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে সমুদ্রে ভাসছে ট্রলার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ