Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রয়োজন দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগ

দ্রুত ‘ব্লু-ইকোনমি পলিসি’ করার তাগিদ এফবিসিসিআই’র কর্মশালায় সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনার সুযোগ নিতে দ্রুত ‘ব্লু-ইকোনমি পলিসি’ করার উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বিশাল সমুদ্রের মালিকানা পেয়েও সেই সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এর মূল কারণ পলিসিগত সহায়তার অভাব এবং এখাতে বিনিয়োগ নেই। এ পর্যন্ত যা হয়েছে সবই আলোচনার টেবিলে রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারীখাত ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ব্লু-ইকোনমিতে দেশে-বিদেশী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আসতে হলে যৌথ বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর সেই বিনিয়োগের জন্য ব্লু-ইকোনমি পলিসি এখন সময়ের দাবি।

গতকাল মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে বেসরকারী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘ব্লু- ইকোনমি ঃ সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সালমান এফ রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট এর সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুসহ সংগঠনটির অন্যান্য পরিচালক বৃন্দ।

বক্তব্যে সালমান এফ রহমান আরও বলেন, সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাময় খাত। এ খাত থেকে আগামী কয়েক বছরেই ১’শ বিলিয়ন ডলার রফতানি করা সম্ভব। বাংলাদেশের এক সময়ের উদীয়মান খাত জাহাজ শিল্পের অগ্রগতি কেন ধীর হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ব্লু-ইকোনমি খাত বিকাশে নীতি কৌশল ঠিক করতে এফবিসিসিআই ও বিডাকে একসাথে কাজ করতে হবে। এছাড়া গভীর সমুদ্রের উপযোগী মাছ ধরার ট্রলার বা জাহাজ নির্মাণে দেশী বিদেশী যৌথ মালিকানায় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নীতির সংশোধন জরুরি। তিনি বলেন, দেশের পোশাকশিল্প একদিনে এ অবস্থানে আসেনি। আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প ছিল জাহাজ তৈরি। ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জাহাজ রফতানি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই রফতানির খবর আর সামনে আসে না। এই সম্ভাবনাময় শিল্পের সমস্যা সমাধান করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। করোনার পর থেকেই আমাদের কনটেইনার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সঙ্কটে সুযোগ এসেছে কনটেইনার উৎপাদনের, আমাদের সেদিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ইলেক্ট্রনিকস ও আইসিটি সেক্টরেরও সুযোগ এসেছে। শিল্পখাতের জন্য সরকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। সালমান এফ রহমান বলেন, ইলেক্ট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাত রফতানিতে পোশাকশিল্পকেও ওভারটেক করবে। এখন আইসিটি বিলিয়ন ডলার রফতানি করছে, যা হয়তো দু-তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সমুদ্রে আমাদের ফিশিং নিয়ে কাজ করতে হবে। সেখানে যে পরিমাণ মাছ ধরা হচ্ছে ভালো প্রযুক্তি পেলে সেটা আরও অনেক বেশি হবে।

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল অঞ্চল লাভ করেছে। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। এর সঙ্গে রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সব ধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার। দুই বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত এ রায় দুটিকে প্রত্যেকেই বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় বলে অভিহিত করেছে। এই সামুদ্রিক এলাকা প্রাকৃতিক গ্যাস ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এখন এই সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

সমুদ্র অর্থনীতি কেবল নতুন বাজারের সুযোগই তৈরি করে না বরং এটি সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা দেয়। এর আওতায় সম্পদের সমৃদ্ধি বাড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা করা ও টেকসইভাবে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নত জীবিকা সংস্থানের লক্ষ্যে সামুদ্রিক পরিবেশের উন্নয়নে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু মাছ কিংবা খনিজ সম্পদ নয়, নিজেদের সীমানার সাগরকে ব্যবহার করে পাল্টে দেয়া যেতে পারে বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতির চিত্র। সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন, জাহাজ শিল্প, গভীর সাগরে মাছ ধরার উপযোগী জাহাজ নির্মাণ, কনটেইনার, ওষুধ, প্রসাধনীসহ নানা শিল্প বিকশিত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম বলেন, দেশের সমুদ্র পথে জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রফতানিতে ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে নিজস্ব পরিবহনে। সমুদ্র পথে ৫০ শতাংশ পণ্য নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি করতে পারলে সাড়ে ৪ হাজার বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের পর বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার সঙ্কটে পড়েছে। জাহাজের পাশাপাশি সুযোগ এসেছে কন্টেইনার উৎপাদনের। এসব সুযোগ এখনই কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনার সাথে সাথে এই সম্পদ সংরক্ষণের নীতিও গ্রহণ করতে হবে। সরকারের নেয়া নদী ভাঙন প্রতিরোধ কর্মসূচির কারণে উপকুলীয় এলাকায় মানুষ এই বিপর্যয়ের হাত থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত বলে জানান উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

কর্মশালার বিশেষ অতিথি বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৮-২৯ নবেম্বরে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ঐ সম্মেলনে ব্লু-ইকোনমি নিয়ে আলাদা আলোচনা করা হবে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন ব্লু- ইকোনমির নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ খাতের সম্ভাবনা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু এখনো কোন পরিকল্পনা নেই। এই খাতের অভিভাবক কে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যার যার মতো কাজ না করে, বিডা নিজে তত্ত্বাবধান করলে দ্রুত সুফল পাওয়া যেতে পারে।

ইরাকি চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ ॥ ইরাকি চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গতকাল দুপুরে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরাকের রাষ্ট্রদূত আবদুস সালাম সাদ্দাম মোহাইসেন। এ সময় তিনি জানান, এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে চিঠির একটি কপি এফবিসিসিআই সভাপতির কাছে হস্তান্তর করেন। সাক্ষাত অনুষ্ঠানে মো. জসিম উদ্দিন বলেন এফবিসিসিআই’র সাথে বিভিন্ন দেশের ১৩২টি বাণিজ্য সংগঠনের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। ইরাকের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গেও চুক্তিতে আগ্রহী। এ জন্য শিগগিরই ইরাক দূতাবাসে এমওইউ’র একটি খসড়া কপি পাঠানো হবে। তিনি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ইরাককে আহ্বান জানান।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ