পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দ্য হিন্দুকে শেখ হাসিনা
বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার সম্পর্ক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা নীতি এবং অন্যান্য বিষয়ে ভারতকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার গণভবনে দ্য হিন্দুর সাথে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। ১৫-১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণভবনে এই সাক্ষাৎকারটি নেন ‘দ্য হিন্দু’র সাংবাদিক সুহাসিনি হায়দার। সাক্ষাৎকারে সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের যোগদান না করার কারণ, ভারত-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান, সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। দ্য হিন্দুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সাক্ষাৎকারটির কিছু উল্লেখযোগ্য প্রশ্নোত্তর তুলে ধরা হলো।
দ্য হিন্দু: চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, প্রতিরক্ষা অংশীদার। বাংলাদেশ চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আঞ্চলিকভাবে বাংলাদেশ চীনের কথিত ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ হয়ে উঠছে বলে ভারতের যে উদ্বেগ রয়েছে তা কি বাস্তবসম্মত নয়?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ভালো সম্পর্কের কথা বলেছেন। আপনাদের যদি সেটা মনে হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে বলে কী করে অভিযোগ করতে পারেন? না, আমাদের নীতিমালা খুব পরিষ্কার। আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা তা বজায় রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, সুসম্পর্কের জন্য কানেকটিভিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিআইএন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছি এবং এর ফলে ভুটান, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়েছে। চীন, ভারত আর মিয়ানমারের সঙ্গেও আমরা বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর স্থাপন করেছি, যেন আমরা সবাই একসঙ্গে হয়ে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পারি। আর তাতে আমাদের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে। আমাদের জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। আর তাতে আমাদের অঞ্চলে সবচেয়ে লাভবান কে হবে? ভারত। বাংলাদেশের বাজারে ভারতই বেশি সুবিধা নিতে পারে। আপনাদের সেটা অনুধাবন করা প্রয়োজন।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে ভারত পিছিয়ে আছে কেন’ দ্য হিন্দুর এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত আমাদেরকে ২০০৭-০৮ সালে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার পর বাণিজ্য আরো জোরালো হয়েছে। অতীতে আমরা ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতাম, কিন্তু এখন আমাদের প্রয়োজনমাফিক খাদ্যশস্য রয়েছে। বাণিজ্য কমে যাওয়ার সেটি একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা অনেক অভোগ্য পণ্য তুলা, মেশিন ও ভারত থেকে আমদানি করছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক ভাল এবং সেটি আরো বাড়বে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
দ্য হিন্দু: পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত হওয়া সন্ত্রাসবাদ কী আপনার জন্য প্রধান ইস্যু নয়? বাস্তবতা হলো, উরি হামলার পর একই সময়ে বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান ও ভারতের সার্ক সম্মেলন বর্জনকে সমন্বিত সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানকে একঘরে করতে এমনটা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
দ্য হিন্দুর এই প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা পাকিস্তানের পরিস্থিতির কারণে। (পাকিস্তান থেকে) সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়েছে, যে কারণে আমাদের অনেকেই পাকিস্তানের ওপর হতাশ। ভারত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে এসেছে (উরি হামলার) কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারণটি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন।
তিনি বলেন, সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসার পেছনে তার সরকারের কাছে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার ও সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়া। যুদ্ধের সময় ও পরে ভারতের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আমার উপর অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আমি বলেছি, সম্পর্ক থাকবে এবং আমাদেরকে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। মূল কথা হলো- আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি, এবং তারা ছিল পরাজিত শক্তি।
প্রতিবেশী দুই দেশকে সংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকুক। দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রকম সংঘাত হোক, কোনো রকম উত্তেজনা হোক, সেটা আমরা কখনও চাই না। এই অঞ্চলের এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সংঘাত হলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।
দ্য হিন্দু: বাংলাদেশ ১৯৮০ সালে গঠিত সার্কের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু এ বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলন বর্জনকারী দেশগুলোরও একটি বাংলাদেশ। এর মানে কি সার্কের সমাপ্তি ঘটছে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘না, সার্ক বর্জনের ক্ষেত্রে আমরা যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছি তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সার্ক অঞ্চলে এখন যে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা এ সময়ে সার্ক সম্মেলন করার উপযোগী নয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান অসন্তুষ্টি জানিয়েছে এবং তাদের পার্লামেন্টে এ ইস্যুটি উত্থাপিত হয়েছে। অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। এটা তাদের ভাবার বিষয় নয়। পাকিস্তানের এ ধরনের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমার ওপর চাপ রয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি সম্পর্ক থাকবে। আমরা পারস্পরিক বিরোধ মীমাংসা করে নেবো। বাস্তবতা হলো, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় পেয়েছি এবং তারা পরাজিত শক্তি। আমরা যুদ্ধে জিতেছি এবং তাদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করেছি। আর তারা যে এটা ভালোভাবে নেবে না তা প্রত্যাশিত ছিল।
দ্য হিন্দু: সন্ত্রাসীদের নিধন করতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে অভিযান চালানোর ব্যাপারে ভারতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন কি?
শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) এর অলঙ্ঘনীয়তা মেনে চলা উচিত এবং এর মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
দ্য হিন্দু: কিন্তু আপনি কি এ নীতিকে সমর্থন করেন? গত বছরও সরকার (ভারত সরকার) ঘোষণা দিয়েছিল মিয়ানমার সীমানা অতিক্রম করে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। বাংলাদেশেও একই ধরনের অভিযান কি আপনি সমর্থন করবেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এই প্রশ্নটি আপনার দেশের সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে করা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, সীমান্ত ও এর নিয়ন্ত্রণরেখা পুরোপুরি মেনে চলা উচিত।
দ্য হিন্দু: আপনাকে জিজ্ঞেস করার কারণ, আপনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপনার সরকারের ধরপাকড়, জঙ্গি ঘাঁটিগুলো বন্ধ করা এবং ২০ জনেরও বেশি শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীকে হস্তান্তর করার মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূল চালিকা শক্তি। সন্ত্রাসবিরোধী পারস্পরিক সহযোগিতার আজকে কী হলো?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখুন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদেরকে শেকড় গজাতে দেওয়া যাবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের সীমান্তবর্তী দেশ ভারত কিংবা মিয়ানমার যে দেশের সঙ্গেই হোক না কেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তার ফলাফল আপনারা দেখছেন। আমাদের সীমান্ত এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সহিংসতা, বোমাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলতো এবং আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। অন্য দেশে জঙ্গি হামলা চালাতে কোনও গোষ্ঠীকে আমরা আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করতে দেব না। বাংলাদেশ এখন আর সন্ত্রাসবাদের উৎপত্তির দেশ নয়, কিংবা আগের মতো অস্ত্র পাচারের সিল্ক রুটও নয়।
দ্য হিন্দু: মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং গুম করার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ চালানোর কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমর্থন হারাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভুক্তভোগীদের চেয়ে অপরাধীদের অধিকারের পক্ষেই বেশি সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্রে কী হচ্ছে? যখন সেদেশের স্কুল কিংবা অন্য কোথাও হামলা হয়, তখন সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কী করে? তারা কি হামলাকারীদের হত্যা করে জিম্মিদের উদ্ধার করে না? নিজেদের ওপর হামলা করলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি হামলাকারীদের হত্যা করবে না?’
দ্য হিন্দু: হোলি আর্টিজানে হামলা হওয়ার পর আপনার সরকার বলেছিল যারা হামলায় জড়িত তারা আইএস সদস্য নয়, স্থানীয়। কিন্তু যেখানে আইএসের পক্ষ থেকে এ হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে, যেখানে প্রধান সন্দেহভাজনই আইএস দ্বারা প্রশিক্ষিতÑ সেক্ষেত্রে অভিযোগটি অস্বীকার করার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হতে পারে তাদের কেউ কেউ আইএস দ্বারা উদ্বুদ্ধ। তবে এখানে আইএসের কোনও সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। কারও কাছে এখানে আইএসের ঘাঁটি থাকার প্রমাণ থাকলে সেই প্রমাণ দেওয়া উচিত। আমরা হামলাকারীদের শনাক্ত করেছি। আমরা জানি তারা কোথা থেকে এসেছে। তারা স্থানীয়।
দ্য হিন্দু: গণতন্ত্রের আরেকটি অংশ হলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। এরপরও সম্প্রতি এক স্বনামধন্য সম্পাদককে গ্রেফতার, কঠোর সাজার বিধান রেখে নতুন ডিজিটাল আইন চালুর মধ্য দিয়ে সেই ইঙ্গিতই মিলছে যে আপনি সংবাদমাধ্যমকে কঠোর হাতে দমন করছেন....
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ক্ষমতায় এসেছি তখন আমাদের একটিমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল, এখন ২৩টি আছে। কারা চালু করেছে এগুলো? কারা শত শত সংবাদপত্রকে অনুমোদন দিয়েছে? আর যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাই না থাকতো তবে স্বাধীনতা যে নেই এ কথাটিই বা তারা লেখার সুযোগ পায় কিভাবে? আমরা সম্পাদক শফিক রেহমানকে অন্য অপরাধে গ্রেফতার করেছি। তিনি যদি দেশবিরোধী কাজ করেন, তবে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশেতো অনেক সম্পাদক রয়েছেন। কয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।