পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শাহীরুল ইসলাম সিকদার। এইচএসসি পাসের পর একটি পরিবহনে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত এই চাকরি করেন। পরবর্তীতে ‘সিকিউরিটি গার্ড’ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এভাবে চাকরির নামে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। পরবর্তীতে সেই অফিস বন্ধ করে শুরু করেন ফ্ল্যাট ও জমির ব্যবসা। ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও ফ্ল্যাট কিংবা জমি বুঝিয়ে দেননি। কেউ টাকা ফেরত চাইলে দিতেন হুমকি। নিজেকে কখনও সরকারি ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আবার মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচয় দিতেন। প্রতারণা করতে নামিদামি ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখতেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে প্রতারণা করে শাহীরুল ৫০ কোটি টাকার মতো মালিক হলেও তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে শাহীরুলের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, রাজধানীতে শাহীরুলের একাধিক ফ্ল্যাট ও জমিসহ দৃশ্যমান প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার কথিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এন্ড গার্ড সার্ভিসেস লি, হোমল্যান্ড ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, মানবাধিকার সংস্থা, শাহীরুল এন্ড ডেভলপমেন্ট কো. লিমিটেড, হোমল্যান্ড হাউজিং, হোমল্যান্ড বেভারেজ এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মাদারল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড, শাহীরুল ইসলাম বাংলাদেশ আউট সোর্সিং এন্ড পাওয়ার সাপ্লাইয়ার্স এসোশিয়েশন।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, শাহীরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়। তাদের অভিযোগের পর র্যাবের গোয়েন্দারা ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে আমরা জানতে পারি শাহীরুল নিজেকে একটি কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এন্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’ নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। চাকরি দেওয়ার নামে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে এমন অভিযোগে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় শাহীরুলের নিজের বাসা ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময় শাহীরুলের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি শর্টগান, একটি এয়ারগান, একটি এয়ার রাইফেল, ২৩৭ রাউন্ড গুলি, পাঁচটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি খালি খোসা, ২২টি কার্তুজ, চারটি চাকু, তিনটি ডামি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এন্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেডের চাকরির আবেদন ফরম, চুক্তিপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যানার, প্যাড, স্ট্যাম্প, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, গোপন ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ভিজিটিং কার্ড, আইডি কার্ড, নেইম প্লেট, বিভিন্ন নামীদামী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তোলা ছবি, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, পাসপোর্ট, মানি রিসিভ বই, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড, মোবাইল ফোন উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, উচ্চ মাধ্যমিক পাস শাহীরুল কর্মজীবন শুরু করেন গাড়ি ব্যবসা দিয়ে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সৌখিন পরিবহনে কাজ করেছেন। এরপর শুরু করেন প্রতারণা ব্যবসা। ২০০৩ সালে সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহ প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এরপর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে প্রাতিষ্ঠান করেন। অল্প সময়ে বিপুল টাকার লোভে ২০১৪ সালে রামপুরায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এন্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেন অর্থ আত্মসাৎ। এরপর থেকে তিনি অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হতে শুরু করেন। প্রতারণার অভিযোগ আড়াল করতে শাহীরুল তার অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের পরিবর্তে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি বেনামী মানবাধিকার সংস্থা খুলে নিজেকে চেয়ারম্যান পরিচয় দিতেন।
এছাড়া ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নামিদামি ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রদর্শন করে এবং বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে। প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী ও পুরুষকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড, ড্রাইভার, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, বিক্রয় কর্মকর্তা, লাইনম্যান হিসেবে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
র্যাব আরো জানায়, শাহীরুল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিতে চাকরির চটকাদার বিজ্ঞাপন দিত। দেশের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আবেদন করলে, তাদেরকে কৌশলে তার পরিচালিত কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে প্রতিশ্রুতি দিত। এরপর চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১৫-২৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করত। তাছাড়া সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫-১০ লক্ষ টাকা নিতেন।
র্যাব জানিয়েছে, শাহীরুল নিজেকে শুটিং ক্লাবের সদস্য বলে পরিচয় দিত। প্রশিক্ষণ, ইউনিফরম ও আনুসাঙ্গিক খরচ হিসেবেও টাকা নেওয়া হতো। এভাবে অনেকের কাছ থেকে নামমাত্র নিয়োগ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার অফিস বা বাসায় ঘোরাঘুরি করেও টাকা ফেরত পেত না। বরং টাকা চাইলে অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে ভূক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখাত। এছাড়া প্রতারক শাহীরুল নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অপরাধে ডিএমপির রামপুরা থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে।
শাহীরুলের কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, ২০০৩ সাল থেকে তিনি প্রতারণায় জড়িত। সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় দুটি বাড়ি, দুটি ফ্ল্যাট, দুটি গাড়ি ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা তার নামে ২৪ কাঠা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ আমরা পেয়েছি। তবে ব্যাংক, ফিক্সড ডিপোজিট, স্বজনদের নামে কী পরিমাণ সম্পদ আছে, তা এখনো জানা যায়নি। অস্ত্রগুলো কোথায় থেকে কিনেছে বা সংগ্রহ করেছে জানতে চাইলে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, উনি বলেছে সবগুলোর লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু কোনোটারই লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।