Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিনপিংয়ের সফর ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ

চীনের পিপলস ডেইলি’র নিবন্ধ

প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীনের বৃহত্তম পত্রিকা ও দেশটির শাসক দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মালিকানাধীন পত্রিকা পিপল’স ডেইলিতে গতকাল একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে ‘ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করা হয়। সেই নিবন্ধের অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হল।
“বাংলাদেশে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাষ্ট্রীয় সফর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে মাইলফলক হয়ে থাকবে। ৩০ বছরে প্রথম কোন চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলছেন।
চাইনিজ একাডেমিক অব সোস্যাল সাইয়েন্সেস-এর সাউথ এশিয়া স্টাডিজের পরিচালক ইয়ে হাইলিন বলেন, সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট ও একুশ শতকের ম্যারিটাইম সিল্ক রোড গড়ে তুলতে বাংলাদেশ চীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে। ‘বেল্ট এন্ড রোড’ বলে পরিচিত এ প্রকল্পদ্বয় বাস্তবায়নে বঙ্গোপসাগরের পাশে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি ব্যাখ্যার সুরে বলেন, চীন ‘বেল্ট এন্ড রোড’ উদ্যোগের প্রস্তাব দেওয়ারও আগ থেকে চীন-বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে এই মেকানিজম প্রস্তাব করেছিল চীন। বঙ্গোপসাগরের তীরে বলেই নয়, দক্ষিণাঞ্চলীয় সিল্ক রোডে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ দেশটি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতার অন্যতম শীর্ষ অংশীদার।
আরও বড় কথা হলো, বাংলাদেশের বিপুল তরুণ জনসংখ্যা ও বলিষ্ঠ উৎপাদন সক্ষমতাকে চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক সুযোগ হিসেবে নিতে পারে। ঐতিহ্যবাহী বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী হিসেবে, ৪১ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকেই চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রগাঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রায়ই দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ সহযোগিতা বেড়েছে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীন-বাংলাদেশের সময়োচিত সম্পর্কের প্রশংসা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক চীনা রাষ্ট্রদূত চাই শি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ নয়। এছাড়া প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানায় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে চীনের কাছ থেকে বিপুল সহযোগিতা পেয়েছে দেশটি। তিনি আরও যোগ করেন, যখনই বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে, তখনই সবার আগে সাহায্যপূর্ণ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীন।
এ ধরনের সহযোগিতা ছাড়াও, চীন বাংলাদেশের সড়ক উন্নয়ন ও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে। আশির দশকের পর থেকে বাংলাদেশে সাতটি সেতু নির্মাণ করেছে চীন। এছাড়া আরও ৮টি সেতু বর্তমানে নির্মাণাধীন। চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ আশির দশকে বেইজিং-এর একটি প্রাথমিক স্কুল নির্মাণে ১০ লাখ ডলার দান করেছিল বাংলাদেশ। ওই স্কুলটি চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামেও পরিচিত। এছাড়া আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ চীনকে সমর্থন দিয়েছে। ফলে দু’দেশ ভালো প্রতিবেশী ও বিশ্বস্ত অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতার উজ্জ্বল সম্ভাবনার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারেও উভয় দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এ ধরনের সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র হলো পরিপূরকতার ভিত্তিতে শিল্প চেইন তৈরি করা। যেমন, বাংলাদেশ নিজেদের টেক্সটাইল শিল্প উন্নত করতে চায়। অপরদিকে চীন চায় উৎপাদন ‘আউটসোর্স’ করতে বা নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা রপ্তানি করতে। এ খাতে উভয় দেশের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা লুকায়িত রয়েছে। রাষ্ট্রদূত চাই মনে করেন, এক নতুন ঐতিহাসিক পটভূমিতে বাংলাদেশ সফর করছেন প্রেসিডেন্ট শি। এর গুরুত্ব অপরিসীম। ‘বেল্ট এন্ড রোড’ ও চার দেশের অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণে বাস্তব ফল বয়ে আনবে তার সফর। কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। অপরদিকে ইয়ে হাইলিনের প্রত্যাশা এ সফরে অবকাঠামো, শিল্প হালনাগাদ ও দুর্যোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত ইস্যুতে অনেক চুক্তি হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিনপিংয়ের সফর ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ