Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে থাকা শেভরনের সম্পদ কিনতে চায় সরকার

প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশে থাকা তাদের সকল সম্পদ বিক্রি করতে চাইছে। মার্কিন কোম্পানিটির এসব সম্পদ কিনে নিতে আগ্রহী সরকার। তবে চীন ও ভারতের সাথেও কোম্পানিটি তাদের সম্পদ বিক্রি নিয়ে বাণিজ্যিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস ঘাটতি মোকাবেলায় বাংলাদেশে থাকা শেভরনের সকল সম্পদ কিনে নিতে চায় সরকার। এ নিয়ে সরকারের সাথে মার্কিন এই বহুজাতিক কোম্পানিটির আলোচনাও চলছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। আমরা যখন বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি এবং দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের উপর গুরুত্বারোপ করছিÑ তখন বাংলাদেশ থেকে কোন কোম্পানি তার স্বত্ব বিক্রি করে যেতে চাইলে সরকার অবশ্যই তা রাখার চেষ্টা করবে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনে বিশ্বব্যাপী লোকসানে পড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন তাদের সম্পদ বিক্রির এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয়- লোকসান কাটাতে শেভরন বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের সম্পদও বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশে শেভরনের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা কোম্পানিটি ২০০ কোটি ডলারে বিক্রি করতে চায়।
এদিকে, বাংলাদেশে থাকা তাদের সকল সম্পদ বিক্রির ব্যাপারে শেভরনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিও দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা বাংলাদেশে আমাদের সম্পদের বিপরীতে আকর্ষণীয় দাম পেলেই কেবল তা বিক্রি চূড়ান্ত করব।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এই কোম্পানি গত বছরের অক্টোবরে জানায়, তারা ২০১৭ সাল নাগাদ প্রায় ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সমমূল্যের সম্পদ বিক্রির পরিকল্পনা করছে।
এর আগে ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে শেভরনের যে সম্পদ আছে, তা ২০০ কোটি ডলারে বিক্রি করতে চায় কোম্পানিটি। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে এমন তথ্য পরিবেশন করে ব্লুমবার্গ।
এদিকে শেভরনের বাংলাদেশের সম্পদ কেনার ব্যাপারে ভারত ও চীনা তেল কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শেভরনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী তারা বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে তিনটি গ্যাসফিল্ড থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ও কনডেনসেট উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেভরন বাংলাদেশের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, সম্পদ একীভূত, অধিগ্রহণ বা বিক্রি করা-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করার বিষয়ে শেভরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে অর্ধেকের বেশি কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। এ অবস্থায় জ্বালানি খাতের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান শেভরনের কার্যক্রমও বিশ্বব্যাপী সংকোচন হবে, এমন আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এর প্রভাব দেখা গেছে বাংলাদেশেও। কর্মী সংখ্যাসহ কমে গেছে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ প্রবাহ। ১৯৯৪ সালে সরকারের সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলনে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে মোট তিনটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্বে আছে শেভরন। সম্মিলিতভাবে এ তিনটি ব্লকে এক বছরের ব্যবধানে শেভরনের বিনিয়োগ (মূলধনী ও পরিচালন) কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ। গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশে শেভরনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ রয়েছে ১২ নং ব্লক বা বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে।
এদিকে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে বিনিয়োগ কমলেও মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে মূলধনী ও পরিচালন ব্যয় বেড়েছে শেভরনের। যদিও বাংলাদেশে শেভরনের মোট বিনিয়োগের তুলনায় এ দুই গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। বাংলাদেশে শেভরনের কার্যক্রমের সঙ্গে স্থায়ী, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পন্থায় প্রায় ৪ হাজার কর্মী যুক্ত আছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত শেভরনের সবগুলো ব্লকের প্লান্ট ও প্রধান কার্যালয়সহ কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার। এরা সবাই অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পন্থায় বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে শেভরনের হয়ে গ্যাস উত্তোলন কাজে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেভরন চুক্তিভিত্তিক কর্মীর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করায় এখন এ ধরনের কর্মী ২৫ শতাংশ কমে ৭শ’তে এসে দাঁড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশে থাকা শেভরনের সম্পদ কিনতে চায় সরকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ