পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘ভাল আছি, ভালো থেকো/ আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ (রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ)। গত তিন দশকে বাংলাভাষায় রচিত যেসব গান মানুষের হৃদয়-মন ছুঁয়েছে এ গান সেগুলোর অন্যতম। দ্রোহের কবি রুদ্র বিয়ে করেছিলেন দেশ থেকে বিতাড়িত বহুগামী কবি তসলিমা নাসরিনকে। প্রেম করেই ইসলাম বিদ্বেষী তসলিমাকে বিয়ে করেন কবি রুদ্র। বোহেমিয়ান কবির আড্ডায় যত মন ছিল সংসার-আয় রোজগারে তত মন ছিল না। স্ত্রী বহুগামী তসলিমা ‘আয় তবে বিয়ে করি’ ‘চলো একসঙ্গে ঘুমাই’ ‘যাকে খুশি তার সঙ্গে যাই’ নীতিতে ছিলেন বিশ্বাসী। নষ্ট চরিত্রের স্ত্রীকে গভীর রাতে এক সাংবাদিকের বিছানায় দেখার দৃশ্য বোহেমিয়ান কবি মেনে নিতে পারেননি। যথারীতি ডিভোর্স। হৃদয় বলে কথা! স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পরও মন থেকে তসলিমাকে মুঁছে ফেলতে পারেননি। জীবন থেকে নষ্ট স্ত্রীকে দূরে ঠেলে দিয়ে কবি মনের দুঃখে লিখলেন ‘ভাল আছি ভাল থেকো---’ হৃদয় ছোঁয়া গান।
কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তালাক দেয়া স্ত্রীর ঠিকানা না জানায় ‘আকাশের ঠিকানায়’ চিঠি লিখেছেন। কিন্তু আমারা কি ঠিকানা বিহীন? ধর্মীয় পরিচয় আমাদের নেই! না হলে মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও আমাদের এই হাল কেন? কেন আমরা ধর্মীয় পরিচয় মুছে দিতে চাইছি? ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে আমরা কোন সংস্কৃতি চর্চায় মেতে উঠেছি?
বাংলাদেশের সৌহাদ্য সম্প্রীতির ঐতিহ্য হাজার বছরের। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এ দেশে এক সঙ্গে গলাগলি করে বসবাস করছে। মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সবাই সবার প্রতি প্রীত। যুগের পর যুগ ধরে একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছি। সেই মিলেমিশে বসবাসে যেন ছেদ পড়ার উপক্রম হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রায় এক সঙ্গে পালিত হলো দুই ধর্মের মানুষের দু’টি ধর্মীয় উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর মুসলমানদের আশুরা। আশুরা কার্যত উৎসব নয় শোকের। মহররম মাসের আশুরা (১০ তারিখ) ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে কারবালার প্রান্তরে বিপথগামী শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বাহিনীর হাতে মহানবী (সা.) দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতবরণের কারণে। শুধু তাই নয় মানবজাতির ইতিহাসে মহররমের ১০ তারিখের ফজিলত অপরিসীম। এই মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেন। দুনিয়ার প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে আল্লাহর দেওয়া কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হন। তাঁদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়। হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) আল্লাহর নির্দেশ ভঙের অপরাধের ক্ষমা পেতে দিনের পর দিন আহাজারি করলে মুহাররমের ১০ তারিখে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। ফলে দিবসটি বিশ্বের মুসলমানদের জন্য খুবই তৎপর্যপূর্ণ।
সৌহাদ্য সম্প্রীতির এই দেশে ‘উৎসবে’ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাবেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ভাবে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ নীতি গ্রহণ করায় সব ধর্মের মানুষ যাতে নিজ নিজ ধর্ম সাচ্ছন্দ্যে পালন করতে পারেন সেজন্য সবার সহযোগিতা করা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবে মুসলমান বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানাবেন। আবার মুসলমানের ধর্মীয় উৎসবে সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার দেখা গেল অন্যরকম চিত্র। মুসলমানদের আশুরা ও হিন্দুদের দুর্গাপূজা এক সঙ্গে পালিত হলো। এ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটিও ছিল দুই দিন। ফেসবুকে কিছু মুসলিম ধর্মাবলম্বীর যে স্খলনের চিত্র দেখা গেল তা রীতিমতো উদ্বেগের।
ব্যাক্তিভাবে আমি ফেসবুক তেমন ঘাঁটাঘাঁটি করি না। অনুজ সহকর্মীরা জোর করেই ফেসবুক খুলে দিয়েছে। সে ফেসবুকে আইডি নম্বর হারানোয় দীর্ঘদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির কপাট বন্ধ ছিল। সেই আইডি নম্বর খুঁজে পাওয়ায় আবার যোগাযোগ মাধ্যম সচল হয়। কাজের ফাঁকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক মিনিট সেটা দেখি। এবার ফেসবুকে দেখলাম সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এতে খুশিই হয়েছি। কিন্তু মুসলিম বন্ধুদের মধ্যে প্রায় শতাধিক বন্ধু শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুধু ফেসবুকে নয় ই-মেইলেও অনেক মুসলিম বন্ধু শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অনাকাঙ্খিত এ শুভেচ্ছা পেয়ে অবাক হয়েছি। হায় আল্লাহ! এ কোন যন্ত্রণায় পড়লাম! ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা শারদীয় শুভেচ্ছা জানাবেন সেটা স্বাভাবিক। বছরের পর বছর সেটা হয়ে আসছে। কিন্তু আশুরার আগের দিন একজন মুসলিম বন্ধু আরেকজন মুসলিম বন্ধুকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাবেন কেন? মুসলমানরা কি দূর্গা উৎসব ধারণ করেন? অধোঃপতিত হয়ে আমরা কোন সংস্কৃতির মধ্যে ডুবতে বসেছি? ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নির্বাচন নভেম্বরে। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় এ সংগঠনে ‘ভোটের বাতাস’ বইতে শুরু করেছে। কিছু সাংবাদিক আছেন প্রতিবছর নির্বাচন এলেই ‘লাফ দিয়ে প্রার্থী’ হয়ে যান। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তাদের কারো পেশা, কারো ফ্যাশন। প্রার্থী হলে নির্বাচনী খরচের অজুহাতে চাঁদাবাজী করা যায়, ভোট করার কথা বলে ব্যবসায়ী-বন্ধু-বান্ধবদের পকেট কেটে নিজের পকেট ভারী করা যায়। ভোটে প্রার্থী হলে আয়-রোজগার ভালই বৈকি! এবারের নির্বাচনের যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের অধিকাংশই (সবাই মুসলমান) ফেসবুক ও ই-মেইলে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একজন সহকর্মী জানালেন, তাকেও ২০ জন মুসলিম বন্ধু শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রশ্ন হলো একজন মুসলমানকে আরেকজন মুসলমানের ‘শারদীয় শুভেচ্ছা’ জানানো কি ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে? আশুরা হলো শোক পালনের দিবস। দুর্গাপূজা ও আশুরা একই সময় পালিত হলো। মুসলমান হয়ে শারদীয় শুভেচ্ছা জানালেও একজন সম্ভাব্য প্রার্থী এবং একজন বন্ধুও আশুরা উপলক্ষ্যে শোকাভিভূত, শোক প্রকাশ বা সমবেদনা জ্ঞাপন করে ফেসবুকে স্টাট্যাস দেননি। অথচ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। ক্রমান্বয়ে আমরা কোন সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছি?
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রাম-গঞ্জ, চরাঞ্চল ও সীমান্ত এলাকায় ঘুরেছি। মফস্বল শহর ও চরাঞ্চলে শুক্রবার দেখেছি জুম্মার নামাজে মসজিদে জায়গা হয় না। মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে কিশোর-তরুণ-যুবক মু শুল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি। রাজধানী ঢাকাও শুক্রবার অভিন্ন চিত্র। জুম্মার নামাজে ঢাকা শহরের হাজার হাজার ৪ তলা ৫ তলা মসজিদে মু শুল্লিদের যায়গা না হওয়ায় রাস্তা বন্ধ করে পথেই জুম্মার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। বিদ্বেষমূলক প্রচারণার মধ্যেও ইসলাম ধর্মের প্রতি দেশের কিশোর-তরুণ-যুবকদের অনুরাগ একদিকে বাড়ছে; অন্যদিকে মুসলিম ঘরের কিছু সন্তান তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে জন্ম-ধর্ম পরিচয় ভুলে শারদীয় শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতিতে ডুবে যাচ্ছেন?
যাকে নিয়ে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলেন কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ; সেই ইসলাম বিদ্বেষী তসলিমা ‘লজ্জা’ নামক বই লিখে এদেশে মুসলিম-হিন্দুর মধ্যে বিরোধ বাধানোর অপচেষ্টা করেছেন। দেশের মানুষের তীব্র প্রতিবাদে শান্তি বিনষ্টকারী ইসলাম বিদ্বেষী লেখিকাকে বাংলাদেশ সরকার দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। সব ধর্মের মানুষের এক সঙ্গে বসবাসের সম্প্রীতির এই দেশে মুসলিম হয়ে মুসলিমকে অন্য ধর্মের শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতি চর্চা কী বার্তা দিচ্ছে? নাকি উচ্চ শিক্ষিত লোকজন অজ্ঞতাবশত এসব কা- করছেন? শিক্ষিত ব্যক্তিরা যদি এমন অজ্ঞ হন তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।