পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : খুশির খবর বটে। হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খাদিজা আক্তার নার্গিসের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গতকাল লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছে। ডাক্তাররা জানান খাদিজাকে এখন অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ৩ অক্টোবর ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের হামলায় গুরুতর আহত হন সে। চাপাতির আঘাতে মাথার খুলি ভেদ করে ব্রেইনে ইনজুরি হওয়া খাদিজার ৪ অক্টোবর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। সে সময় ডাক্তাররা বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ জানালেও এখন বলেছেন, দুই সপ্তাহ পর খাজিদার নিউরোলজিক্যাল অবস্থা বোঝা যাবে। খাদিজার বেঁচে ওঠার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে সারাদেশের মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজে দোয়া মাহফিল হয়। ঘটনার হোতা বদরুলের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ-মানববন্ধন হয় সারাদেশে। সিলেটে টানা কয়েকদিন কর্মসূচি পালিত হয়। বদরুলের প্রতি ঘৃণা জানাতে সিলেট নগরীর চৌহ্ট্টাায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অস্থায়ী ‘থুথু স্তম্ভ’ নির্মাণ করে থুথু নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করে সাধারণ মানুষ। ১১ অক্টোবর এ কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিভিন্ন সংগঠনে নেতারা অংশ গ্রহণ করেন। সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্রী খাদিজার জন্য এতো মানুষের কান্না-আহাজারী; ঘাতক বদরুলের প্রতি ধিক্কার; তার বিচারের দাবিতে এতো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বিবেক তাড়নায় পথে নেমে এসেছেন শিক্ষক-ছাত্র-সাংবাদিক-সাধারণ মানুষ; মানববন্ধনে শামিল হচ্ছেন। কিন্তু নীরব রয়েছেন সিলেটের অধিকাংশ আন্দোলনের শিরোমণি অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার অনুসারীরা। মানুষ তৈরির এই কারিগরের নেতৃত্বে কথায় কথায় সিলেটে মানববন্ধন হয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেয়া হয়। অথচ খাদিজার মতো ছাত্রীর উপর আক্রমণের পর জ্ঞানতাপস অধ্যাপক জাফর ইকবাল নীরব! নাকি মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকের কন্যা হওয়ায় খাদিজার ওপর এ ধরনের পাশবিক ঘটনায় প্রতিবাদের দায় তার ওপর বর্তায় না! পান থেকে চুন খসলেই যে জাফর ইকবালরা তাঁতিয়ে উঠেন এখন তার ঘুমিয়ে থাকার নেপথ্যের রহস্য কি?
রহস্য আর কিছুই নয়। অধ্যাপক জাফর ইকবালদের কাছে এই বদরুল আলম সোনার ছেলে। ২০১২ সালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্কুল-কলেজে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। মিডিয়াগুলো মন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকারীদের নিবৃত্ত করতে প্রচারণা চালায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে কয়েকটি এলাকায় ইভটিজারদের বিচারও হয়। ওই বছরের জানুয়ারি মাসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এই বদরুলের ইভটিজিংয়ের শিকার হন সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। প্রকাশ্যে খাজিদাকে লাঞ্ছিত করায় ওই সময় জনতা বদরুলকে গণধোলাই দেয়। গণপিটুনিতে বদরুল পায়ে প্রচ- আঘাতপ্রাপ্ত হন। বদরুলের সাঙ্গপাঙ্গরা ওই গণধোলাইকে ‘ঘাতক জামায়াত শিবিরের’ কাজ প্রচার করে। সরকার সমর্থিত কিছু মিডিয়া ঘটনার যাচাই-বাছাই না করে বদরুলের পক্ষে সাফাই গায়। গরীব ঘরের মেয়ে নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রী খাজিদা নীরবে চোখের পানি ফেলেন। ওই ঘটনা অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালদের ‘বিবেকে’ নাড়া দেয়! তারা প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের সমর্থন পেতে ‘উল্টো স্রোতে’ গিয়ে মানববন্ধন করেন। ‘ইভটিজিংয়ের’ ঘটনা চাপা দিয়ে বদরুলের করুণ চিত্র তুলে ধরেন। বদরুল খুব ভাল ছেলে দাবি করে অধ্যাপক জাফর ইকবাল আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘বদরুল আর কখনো পা দিয়ে হাঁটতে পারবে না।’ বদরুলের পরিণতি আর যেন কোনো ছাত্রের না হয় প্রশাসনের প্রতি সে দাবি জানান তিনি। অথচ পত্র-পত্রিকায় খবর বের হয়েছে বদরুল আগে থেকেই ‘বদ’ প্রকৃতির ছেলে। তাকে সিলেট ছাত্রলীগের ‘কলঙ্কতিলক’ বলা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ছাড়াও সব মহলে বদরুল ছিল ঘৃণিত-ধিকৃত। এমন পৈশাচিক মানসিকতার ছাত্রের পক্ষ নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল মায়াকান্না করেছেন।
এদিকে মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে। বুধবার রাত ১টার দিকে তাকে এ হুমকি দেয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আনু মুহাম্মদ জানান, রাত একটার দিকে একটি এয়ারটেল নম্বর থেকে হুমকি পান। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মৃত্যুর কোনো দিনপঞ্জী নেই। আনসারুল্লাহ কোনো সময় মানে না’। এ ঘটনায় তিনি জিডি করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকির পর বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি প্রতিবাদ করছেন। অথচ জাফর ইকবালরা নীরব!
দেশের মানুষের কাছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জাফর ইকবাল একই আদর্শে বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত। দু’জনই সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। সুন্দরবনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এই অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিবাদে কয়েক দফায় রোড মার্চ, লংমার্চ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচি পালনের সময় মানুষ গড়ার কারিগর আনু মুহাম্মদকে পুলিশের হাতে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে অনেকদিন চিকিৎসা নিতে হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যারা রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করছেন তারা ভারত বিরোধী বিএনপি-জামায়াত। অর্থাৎ আনু মুহাম্মদ ইতোমধ্যেই ভারত বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত। মানুষ নিঃশ্বাসে নাইট্রোজেন ত্যাগ করে; আর গাছের অক্সিজেন নিয়ে বাঁচে। এ জন্য সুন্দরবনকে বলা হয় বাংলাদেশের ফুসফুস। ফুসফুস ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমিন সুন্দরবন ছাড়া বাংলাদেশ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারবে না। সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলনরত সেই ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে; অথচ জাফর ইকবালরা নীরব! আনু মুহাম্মদের নামের সঙ্গে ভারত বিরোধী তকমা দেয়ায় কি জাফর ইকবালরা তার হত্যার হুমকির প্রতিবাদ করছেন না?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে অধ্যাপক জাফর ইকবালরা সমাজের মধ্যমণি। শিক্ষা নিয়ে তার কিছু বক্তব্য মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমেরিকা ঘুরে এসে তিনি যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা শিক্ষণীয়। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক মরহুম হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবাল লেখক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার লেখা সাইন্স ফিকসন ও বিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস দেশের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর দশটা শিক্ষকের চেয়ে তার অবস্থান সমাজে আলাদাই বৈকি। তার প্রতি মানুষের কিছু প্রত্যাশা থাকবে। কিন্তু তিনি সিলেটের বদ বদরুলের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে মানববন্ধনে মায়াকান্না করেন; অথচ খাদিজাদের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই? সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ খাদিজার উপর পৈশাচিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করছেন; ঘাতকের প্রতি থুথু নিক্ষেপ করছেন; অথচ কারণে অকারণে সিলেটে আন্দোলনের মধ্যমণি জাফর ইকবাল একেবারে নিশ্চুুপ!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।