পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশের সময়োপযোগী পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে : পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন : ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার আহবান মসজিদের ইমাম-খতিব-পীর মাশায়েখদের প্রতি
সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বাংলাদেশে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। রাজধানী ঢাকায় ২৩৮টিসহ সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মন্ডপে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। দুর্গা পূজায় নিরাপত্তা দিতে আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ছাড়াও ২২ জেলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় আগেই প্রতিমা বিসর্জনে শোভাযাত্রা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ। আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এবার একটি পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন কথিত অবমাননার গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন এবং অপরাধীদের বিচারের দাবি উঠে সর্বমহল থেকে। গতকালই প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ডান-বাম ও মধ্যপন্থী সব রাজনৈতিক দল ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি’ রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। তবে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ বিশ্বাসী মানুষের এই দেশে কেউ কেউ এমন অপ্রীতিকর ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড় পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কুমিল্লা, চাঁদপুরহ দেশের কয়েকটি এলাকায় হামলা-ভাংচুর-সংঘাতের পর দুর্গা পূজায় নিরাপত্তা দিতে ২২ জেলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনার জেরে গত বুধবার রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ায় বেশ কিছু মন্দির ও পূজা মন্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর তাৎক্ষণিক তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, জেলা প্রশাসনের চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গা পূজার সময় নিরাপত্তা রক্ষায় এ পর্যন্ত কুমিল্লা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ ২২টি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ চাইলে রাজধানী ঢাকাতেও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ জনতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ইনবিলাবের চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল এবং মন্দিরে হামলার ঘটনায় সাধারণ জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া (ত্রিনয়নী) পূজা মন্ডপ এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনায় বাবলু, আল-আমিন হৃদয়, শামীম, মানিক সাহা নিহত হন। মৃত্যুর বিষয়টি হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন।
পঞ্জিকার হিসেব মতে শরদোৎসব শুরু হয় ১১ অক্টোবর। তার আগে দেবী পক্ষ থেকে ৬ অক্টোবর মহালয়ায় শুরু হয়। তবে ১১ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে চলে ১৫ অক্টোবর দশমী পর্যন্ত। এর মধ্যে ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী ও ১৪ অক্টোবর মহানবমী উদযাপিত হয়। সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা চলার মধ্যে হঠাৎ গত বুধবার কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অথিত অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক দেবির পায়ের ওপর পবিত্র কোরআন মাজীদ রাখা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। মুহূর্তে এ ছবিসহ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলোর আলেম এবং তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ শুরু করেন। এমনকি কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভে এসে ঘটনার বিবরণ দেন, কেউ প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা তোপের মুখে পড়েন, বাধে সংঘর্ষ।
ইনকিলাবের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সংবাদদাতারা জানান, সবখানে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হচ্ছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে মানুষের ঢল নেমেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মমতে পূজা আর্চনা করলেও মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পূজা মন্ডবে যাচ্ছেন। তবে কুমিল্লার ঘটনার সূত্র ধরে পূজা মন্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, কক্সবাজারের পেকুয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। বিক্ষোভ সংঘর্ষের সে ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের আলেম সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দল এবং আলেম-ওলামাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতির সংগঠনগুলো পবিত্র কোরআন কথিত অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দেন।
এদিকে কুমিল্লার ‘অভিযোগ ও অপ্রীতিকর ঘটনা’ খতিয়ে দেখার জন্য গত বুধবারই স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় স¤প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন হাতে তুলে না নিতে এবং ধর্মীয় স¤প্রীতি ও শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে সবার প্রতি আহবান জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ‘উসকানি দিয়ে’ মন্দিরে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় ৪৩ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন আইন-শৃংখলা বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড় পূজা মন্ডপ পরিদর্শনের সময় এ তথ্য জানান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, উসকানি দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নানুয়া দিঘীর পাড়ের ঘটনায় প্রথম যে ভিডিওটি ফেইসবুকে প্রকাশ পেয়েছে, তাতে খুবই উসকানিমূলকভাবে ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ ওই ভিডিও পোস্টকারী ফায়েজকে আটক করেছে। ফায়েজের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সেগুলোর যাচাই চলছে।
গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে, আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। এখন ডিজিটাল যুগ, আমরা খুঁজে বের করবই। সে যেই হোক না কেন, আর যে ধর্মের হোক না কেন, আমরা তাদের খুঁজে বের করব।
এ সময় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল বক্তব্যের শুরুতে কুমিল্লায় ঘটনার প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। তিনি সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, কুমিল্লার ঘটনা বিষয়ে আপনাকে বিব্রত করব না। শুধু এইটুকু বলব, আমাদের লোকেরা ভাল নেই, তারা ভীত। আমাদের কাছে খবর আছে, শুক্রবার জুমার পর তারা ঝামেলা করতে চায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই খুঁজে বের করব। কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। আমরা মনে করছি, খুব শিগগির তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। সেই জায়গায় আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। যারাই এটি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবো।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, হাতিয়ায় পূজা মন্ডপ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ ৪ জনকে আটক করে। গত বুধবার রাতে হাতিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের লোক শ্রী শ্রী প্রিতম সাধুর বাড়ির পূজা মন্ডপে ও উপজেলার নলচিরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাবা লোকনাথ পূজা মন্ডপে এ ঘটনা ঘটে। হাতিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
অপরদিকে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বজয়া পূজা মন্ডপ, শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির, বনিকপাড়া পূজা মন্ডপে একদল দুর্বৃত্ত ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। এ সময় তারা পূজামন্ডপের সামনের গেটে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পূজামন্ডপে কর্তব্যরত পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বেগমগঞ্জের পূজা মন্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নোয়াখালীতে বিজিবি ও র্যাব টিম মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কোর কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিটি উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ৩৬২ জন আনসার সদস্য নিয়োগ ও প্রতিটি পূজা মন্ডপে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব টিম টহল মোতায়েন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রায় ৭টি মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গত বুধবার রাতে উপজেলার গুনাইগাছ, থেতরাই ও হাতিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। মন্দিরে হামলা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় উপজেলার সর্বত্রই চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় উলিপুর মসজিদুল হুদা থেকে একদল বিক্ষুব্ধ মুসল্লি শহরের প্রধান সড়কে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। এরপর রাতে একদল উৎসুক জনতা ফের শহরের মূল পয়েন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্ষোভ করেন।
হোকডাঙা ভারতপাড়া সর্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কমলেন্দু রায় জানান, লাঠিসোঁঠা নিয়ে একদল লোক এসে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও পাশের বাড়িতে হামলা করে তারা। উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, এখন পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের শরণখোলায় মিছিল করে প্রতিবাদ ও উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে একটি মহল। উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের মালিয়া গ্রামে তারা মিছিল বের করে। মিছিলে খবর পেয়ে শরণখোলা থানা পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, আইম্মা পরিষদ খুলনার নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, কুমিল্লায় পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর হামলা করে ও গুলি চালিয়ে অনেককে আহত করা হয়েছে। এ খবরে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আমরা এ ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানাই। বিবৃতিদাতারা হলেন, খুলনা মহানগর সভাপতি মুফতী গোলামুর রহমান, জেলা সভাপতি মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুফতী আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিসবাহ উদ্দিন প্রমূখ।
এদিকে কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় স¤প্রতি অক্ষুন্ন রাখতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গতকাল তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এ দেশ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির পূন্যভুমি। এদেশে ধর্মীয় সম্পীতির বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ়। আমাদের পবিত্র সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতিটি ধর্মের অনুসারীগণকে নিজ নিজ ধর্মমতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবাদি পালনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।
বিগত ১২ বছর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দেশের এ উন্নয়নবান্ধব, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ব্যাহত করতে তৎপর রয়েছে। তাদের অপতৎপরতার বিষয়ে আমাদের সরকার সজাগ রয়েছে। আমরা কোন মতেই এদের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেব না ইন শা আল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে কুমিল্লার একটি পূজা মন্ডপে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ রাখার একটি খবরকে কেন্দ্র করে দেশের কিছু কিছু জায়গায় পূজামন্ডপে বিচ্ছিন্নভাবে হামলার খবর পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এ বিষয়ে দেশের স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। উদ্ভ‚ত এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে- এ বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য আমি আপনাদের উদাত্ত আহŸান জানাচ্ছি। একইসাথে দেশের সম্মানিত ইমাম, খতিব, পীর মাশায়েখসহ সকল ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবি সংগঠনসহ সকল জনগণকে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ধর্মীয় স¤প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার ঘটনা মুসলিম সমাজ ও ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর পরিকল্পিত আঘাত। অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কুমিল্লায় পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের দ্রæত শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘে্ন নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করে। এটা মুসলমানদের ওপর এবং বাংলাদেশে আবহমানকাল থেকে চলে আসা ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর পরিকল্পিত আঘাত। যৌথ বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়াউদ্দীন, সহ-সভাপতি মাওলানা জহীরুল হক ভুইয়াঁ, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সভাপতি এড. বদরুদ্দোজা সুজা, মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এক বিবৃতিতে পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় গভীর নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নেতৃদ্বয় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানান। বাংলাদেশ ইসলামিক পার্র্টির চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরী, মহাসচিব আবুল কাশেম ও ভাইস চেয়ারম্যান এজাজ হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে কোরআন অবমাননার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলিতে আহতদের বিনা খরচে সু-চিকিৎসার আহবান জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান চেয়ারম্যান ও সম্মিলিত ইসলামি ঐক্য জোট আমিরে শরিয়াত শাইখুল হাদীস মাওলানা মোহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান বলেছেন, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননায় সা¤প্রদায়িকতার উস্কানিদাতা কারা? সরকারকে নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখা উচিৎ এবং যথাযথ শাস্তি দানের ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য্য। সরকার এ ন্যক্কারজনক ঘটনার তড়িৎ বিচার করবেন, নতুবা অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী হবেন।
কুমিল্লায় পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী। এক তিনি বলেন, কোরআন অবমাননা কিছুতেই বরদাশত করা যায় না। যারা কোরআনুল কারিমের অবমাননা করেছে তারা বাংলাদেশের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। তারা দেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতাকে সা¤প্রদায়িকতার উসকানি দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এর পরিণতি মোটেও শুভ হবে না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০২০ সালে কারোনার মধ্যে বাংলাদেশে ৩০ হাজার ২১৩টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এবার পূজা হচ্ছে ৩২ হাজার ১১৮টি মন্ডপে। ঢাকা মহানগরে পূজা হবে ২৩৮টি। পূজার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবার তিন কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। এ ছাড়াও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে দেয়া একশ’ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত হতে প্রাপ্ত সুদের অর্থ মঠ, মন্দিরে দেয়া হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও সে অর্থ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি ও নিরপাত্তা সংক্রান্ত ২৮ দফা নির্দেশনা সব মন্ডপের পূজা উদযাপন পরিষদকে কেন্দ্রীয়ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়। ১১ অক্টোবর পূজা শুরু হয়ে আজ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে। আজ জুমার নামাজ থাকায় নামাজের সময় দুপুরে বিসর্জন অনুষ্ঠান না করতে বলা হয়েছে। উদযাপন করতে গিয়ে অন্য ধর্মের অনুভ‚তিতে যাতে আঘাত না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ বছর মহালয়া অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করা ছাড়াও দর্শনার্থী, ভক্ত, পুরোহিত সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রতিমা বিসর্জনে শোভাযাত্রা করা যাবে না। মন্ডপে হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।