পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের অর্থনীতির চেয়ে চীনের অর্থনীতি কয়েক গুণ বড়। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হওয়ার পরও কখনোই কোনো সূচকে চীনকে টপকাতে পারেনি ভারত। বাংলাদেশের অর্থনীতির ১০ গুণ বড় ভারতের অর্থনীতি। অথচ কয়েকটি সূচকে ভারতকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষার হার, নবজাতক ও ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনায় বাংলাদেশের সূচক ভারতের চেয়ে অনেক উপরে। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠা এবং করোনাকালে উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখার পারদ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ উপরে। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ২ হাজার ১৩৮ দশমিক ৭৯ ডলার। আর একই সময়ে ভারতের জনগণের মাথাপিছু আয় হবে ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৪৪ ডলার। করোনাকালীন সময়ে বিশ্ব মন্দা অর্থনীতির বাজারে বাংলাদেশ সবকিছু মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। অথচ বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ার পরও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল কয়লার মজুদ কমে যাওয়া এবং তেল ও গ্যাস আমদানিনির্ভর হওয়ায় সামনে আরো কঠিন সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে ভারত। দেশটির জাতপাতের সঙ্কট প্রকট, কৃষকরা রাজপথে, রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপির হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের বিরুদ্ধে একাট্টা। অথচ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে উদারনীতি গ্রহণ করায় বাংলাদেশ ছোট অর্থনীতির দেশ হয়েও পেছনে ফেলতে যাচ্ছে ভারতকে।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া অবশ্যই বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা প্রতিফলন। কভিডের কারণে আয়, ভোগ, সম্পদ বৈষম্য আরো বেড়েছে। তাই আমাদের কেবল মাথাপিছু আয় দেখা উচিত না। বণ্টনে নজর দিতে হবে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু টুইটে লিখেছেন, আইএমএফের প্রাক্কলন দেখাচ্ছে বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। যেকোনো উদীয়মান অর্থনীতির ভালো করাটা সুসংবাদ। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পাঁচ বছর আগেও যে ভারত ২৫ শতাংশ বেশি এগিয়ে ছিল, সেই ভারত এখন পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন ভারতের প্রয়োজন একটি সাহসী আর্থিক ও মুদ্রানীতি তৈরি করা।
মূলত মাথাপিছু আয়ে পরপর দুই বছর ভারতকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে চিন্তিত নয় ভারতীয় বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সমস্যা অন্য জায়গায়। বর্তমানে অভূতপূর্ব বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে ভারত। মহামারির ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু চাহিদার সঙ্গে ঠিক তাল মেলাতে পারছে না সরবরাহ। দেশটির সিংহভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ আসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে। বিদ্যুতের আকাশচুম্বী মূল্যে এবং কয়লার মজুদ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কমে যাওয়ায় ভারতের ১৩৫টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্ধেকেরও বেশি এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে, যা বিদ্যুৎতের ঘাটতি মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে আরো জটিল করে তুলছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও গ্যাস ভারতকে আমদানি করতে হয়। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সঙ্কট ও দাম বাড়ছে। তাই জিডিপিতে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এটার চেয়ে বড় সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে চলমান ভারতের অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো বাড়ছে।
সূত্র মতে, মহামারির ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু চাহিদার সঙ্গে ঠিক তাল মেলাতে পারছে না সরবরাহ। সম্প্রতি ভারতে রাজ্য সরকারের নেতা-নেত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে কয়লার ঘাটতি সম্বন্ধে সতর্ক করছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, অচিরেই বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারে রাজধানী। সম্ভাব্য জ্বালানি সঙ্কট সম্পর্কে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠিও লিখেছেন বলে জানান তিনি। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডিও সম্প্রতি মোদিকে বলেছেন, তার অঞ্চলে জ্বালানি পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’। এদিকে ভারতের বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার মজুদ আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (সিইএ) গত রোববার এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের ১৩৫টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৬১টিতেই কয়লার সরবরাহ সপ্তাহে দুই দিনও থাকছে না। এদের মধ্যে ১৬টিতে কয়লার মজুদ নেই বললেই চলে। বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যুৎ ঘাটতি এভাবে আরো এক মাস থাকলে পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে ভারতকে, যা ভারতের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে আরো সঙ্কটে ফেলবে।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ প্রকাশিত ইকোনমিক আউটলুক ২০২১ প্রতিবেদনে আইএমএফ বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ ভাগ। এর আগের বছর সাড়ে তিন ভাগ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া আগামী বছর সাড়ে ছয় ভাগ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানায় আইএমএফ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার দেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। এ বছর মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ ভাগ ধরা হয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনার ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারে পুরো বিশ্ব আরো পিছিয়ে গেছে। যার কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক জিডিপির হার কমিয়ে ৫ দশমিক ৯ ভাগে নামিয়ে এনেছে সংস্থাটি। পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকলেও, একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাও বেড়েছে।
আইএমএফ বলছে, করোনার প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত-উভয় দেশই বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এর মধ্যে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে বেশি, ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, আর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ভারতের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আগের বছর ভারতের অর্থনীতি বেশি মাত্রায় সংকুচিত হয়েছিল। এ কারণেই আবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে।
ঠিক এক বছর আগে আইএমএফ এবারের মতোই ডব্লিউইও প্রকাশ করে জানিয়েছিল, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, আর ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ঋণাত্মক, অর্থাৎ (-) ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার ও ভারতের হবে ১ হাজার ৮৮৭ ডলার। সুতরাং গতবার বাংলাদেশ ছিল ঠিক এক ডলারে এগিয়ে।
আইএমএফ অবশ্য এখন এসে বলছে, ২০২০ সালে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, (-) ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের হিসাবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হয় ১ হাজার ৯৬১ দশমিক ৬১৪ ডলার এবং ভারতের ১ হাজার ৯২৯ দশমিক ৬৭৭ ডলার। সুতরাং আসলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেশি হয়েছিল ৩১ দশমিক ৯৩৭ ডলার।
মূলত এবার রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা বলা হলেও আগের বছরের উচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রভাবেই এখনো পিছিয়ে আছে ভারত। এমনকি আগামী বছরও ভারত পিছিয়ে থাকবে বলে আইএমএফ মনে করে। চলতি বছরের পূর্বাভাসে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেশি হবে ২২ দশমিক ৩৫ ডলার।
তবে জিডিপিতে বাংলাদেশ পরপর দুই বছর ছাড়িয়ে গেলেও বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশটিকে ছাড়িয়ে গেছে আরো সাত বছর আগে। যেমন ভারতের মেয়েদের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের শিক্ষার হার বেশি ও নারীপ্রতি জন্মহার কম। আবার ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে নবজাতকের ও পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হারও কম।
সূত্র মতে, চলতি আর্থিক বছরেও মাথাপিছু উৎপাদনে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে বাংলাদেশ! এমন আভাস উঠতেই গতবারের মতো এবারো মোাদ সরকারের দিকে ধেয়ে আসছে বিরোধীদের ব্যঙ্গবিদ্রƒপ। গতবার রাহুল গান্ধী যেমন বলেছিলেন, গত ৬ বছরে মোদি সরকারের থেকে এটাই বড় পাওনা যে, মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশও ভারতকে ছাপিয়ে যাচ্ছে! ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশিদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, উইপোকার মতো বাংলাদেশিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে, যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছিল ঢাকা। আইএমএফের পূর্বাভাসের পর শাহের সেই ‘উইপোকা’ তত্ত্ব নতুন করে সামনে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সেই ‘উইপোকা’ই এবার হাতিকে টপকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া মোটেই আকস্মিক কিছু নয়। তবে ২০০৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি অনেক বেশি দ্রুত হারে এগিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়া বজায় ছিল ২০১৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ২০১৭ থেকে। এর পর থেকে ভারতের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়া শ্লথ হয়ে পড়ে, আর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে দ্রুতগতিতে। আবার গত ১৫ বছরে ভারতের জনসংখ্যা বেড়েছে ২১ শতাংশ, আর বাংলাদেশের বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এসবের প্রভাব পড়েছে মাথাপিছু আয়ে। ২০০৭ সালেও কিন্তু বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের অর্ধেক। আর ২০০৪ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।