পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবেÑ বাংলাদেশ সরকারকে লেখা ইউনেস্কোর এমন প্রতিবেদনের জবাব দিয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
সোমবার ইউনেস্কোর কাছে পাঠানো প্রতি-উত্তরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, ফারাক্কার কোন বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের নদ-নদীতে পড়ছে না। ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা ঠিকই পাচ্ছে বাংলাদেশ। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে ভাটিতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নদ-নদী ও সুন্দরবনকে লবণাক্ততা থেকে বাঁচাতে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বলা হয়েছে, গঙ্গার পানি পেতে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এক চুক্তি সই করেছে ভারতের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে। বাংলাদেশ যাতে চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার পানি পায়, সেজন্য শুষ্ক মৌসুম শুরু হলেই (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত) উভয় দেশের কারিগরি কমিটি বৈঠকে বসে কোন দেশ কতটুকু পানি পাচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করে।
ইউনেস্কোর চিঠির জবাবে বাংলাদেশ আরও জানায়, বর্ষা মাসে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যে পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয় এবং বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের নদ-নদীতে যে পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পায় তা ধরে রাখতে বাংলাদেশ একটি রিজার্ভার বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যা গঙ্গা ব্যারেজ নামে অভিহিত হবে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত এই গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পটি নির্মাণ হলে বর্ষা এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
প্রসঙ্গত, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইউনেস্কোর চিঠির জবাবে ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া নিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে; যৌথ নদী কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তা আদৌ সঠিক নয়। বরং যৌথ নদী কমিশনের তথ্যেই বলা আছে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ শুষ্ক মৌসুমে চুক্তি মোতাবেক পানি পাচ্ছে না। গেল শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর সর্বনিম্ন পানি পেয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধ পেরিয়ে এত কম পানি আর কখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে জোটেনি। এমনকি গঙ্গা চুক্তি যখন ছিলনা; সেই সময়টাতে পানি নিয়ে এমন দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। এ নিয়ে দেশের পানি বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ওই দশদিনে ভারত বাংলাদেশকে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে। যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানির রেকর্ড। যৌথ নদী কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে ১১ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই দশদিনে ফারাক্কা পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন পানি পাওয়ার রেকর্ড ছিল ১৭ হাজার ৫১৯ কিউসেক। একইভাবে ১ থেকে ১০ মে পর্যন্ত পেয়েছে ১৬ হাজার ৬৪৮ কিউসেক পানি। দেশের নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত গঙ্গার পানি আটকে রাখায় পদ্মা অববাহিকার সকল নদ-নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে।
শুষ্ক মৌসুমে চুক্তি মোতাবেক গঙ্গার পানি না পাওয়ার বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে ভারতকে জানানোও হয়েছে। এছাড়াও দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত জেআরসি’র কারিগরি বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের অনীহার কারণে দীর্ঘ ৬ বছর যাবত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া, তিস্তা চুক্তির বিষয়টি ঝুলে থাকাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি ভাগাভাগিসহ অমীমাংসিত অনেক কিছুই বাংলাদেশ আলোচনা করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ একাধিকবার বলেছেন, বাংলাদেশ পানি কম পাওয়া বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে। ভারতে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকেও কথাও বলেছি। তারা দিনক্ষণ জানালেই বৈঠক বসবে।
আর গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের বিষয়ে ইউনেস্কোর চিঠিতে যে জবাব দেয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জালে আটকা আছে। ভারত এই ব্যারাজ নির্মাণ চাচ্ছে না বিধায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন কারার পরও গত তিন বছরেও বাংলাদেশ ব্যারাজ নির্মাণের মূল কাজ শুরু করতে পারছে না।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারত এই ব্যারাজ নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করতে ১৭ দফার নানা খুঁটিনাটি জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিটি চিঠিরই জবাব দিয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে গঙ্গা ব্যারাজ ভারতের কোন ক্ষতি করবে না। বরং এরফলে ভারত লাভবান হবে। অথচ ভারতের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে যে, এই ব্যারাজ নির্মাণ হলে পানি ‘ব্যাক ফ্লো’ ভারতীয় অংশে ভাঙনের সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, এমন আশঙ্কা একেবারেই অমূলক।
সর্বশেষ আরও এক দফা চিঠি দিয়ে ভারত গঙ্গা ব্যারাজের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এর জবাবও তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও এই ব্যারাজ নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গেল সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু আসেনি।
এ ব্যাপারে পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, চলতি মাসে ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে আসতে পারে। তবে কবে আসবে সে ব্যাপারে এখন কোন দিনক্ষণ আমাদেরকে জানানো হয়নি।
এদিকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে রামপাল নিয়ে বলা হয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রযুক্তি নিয়ে ইউনেস্কো যা বলেছে তা ঠিক নয়। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতেই এই কেন্দ্র হবে। এছাড়াও ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে অনেক ভুল আছে। ইউনেস্কোর খসড়া প্রতিবেদনের জবাবে এমনই উত্তর দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের জবাব সোমবার পাঠিয়ে দিয়েছি। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে পয়েন্ট আকারে যেসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছিল বাস্তবতার সঙ্গে সেসবের মিল নেই। আমাদের পক্ষ থেকে জবাবে সেসব বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছে।’
সরকারের পক্ষ থেকে জবাবে বলা হয়েছে, ইউনেস্কোর প্রতিবেদনটি যৌক্তিক নয়। এতে তথ্যগত ভুল আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ বন্ধ করারও কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এই কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে সুন্দরবনের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমবে। ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কেন্দ্রটি গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের জবাব হিসাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, নৌ ও পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৩০ পৃষ্ঠাসংবলিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনটিই ইউনেস্কোকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো সম্প্রতি সরকারের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলেছে, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। বিশেষত পানি, বায়ু ও মাটির ক্ষতি হবে। এতে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ, সুন্দরবনের প্রাণী ও প্রতিবেশ সংকটে পড়বে। এ কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবনের ক্ষতি করবে না এমন স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরিয়ে নিতে হবে। এই সুপারিশ না মেনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখলে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কোর ৪১তম অধিবেশনে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। একই সঙ্গে ইউনেস্কো থেকে পাঠানো চিঠির জবাব আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে দিতে বলা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনেস্কোর প্রতিবেদনটিতে দেওয়া তথ্য কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে তথ্য ও ধারণাগত ভুল রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে পানি, বায়ু ও মাটির কোনো ক্ষতি হবে না। কেন্দ্রটি সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি বিশ্বব্যাংক ও আইএফসি’র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্দেশনা মেনেই করা হবে। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পায়নি সরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।