পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়া ও রাশিয়ার জঙ্গি বিমানগুলো যখন আলেপ্পোর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে তখন মস্কোর সিরীয় অধিবাসীদের মধ্যে এ ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে।
এক রোদহীন বিকেলে উত্তর মস্কোতে এক উদ্বাস্তু সাহায্য কেন্দ্রে আমি একটি অগোছালো অফিসে রফিকের সাথে সাক্ষাৎ করি। সিরিয়ার নাগরিক রফিক সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে জীবন বাঁচাতে রুশ স্ত্রীকে নিয়ে মস্কো চলে আসেন। এখন তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতি ক্রেমলিনের সমর্থন নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে ভীষণ সতর্ক, এতটাই সতর্ক যে আমাকে তার আসল নাম ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন।
তিনি বললেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া রাশিয়ানদের বলছে যে তাদের সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় শুধু ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোদ্ধাদেরই হত্যা করছে। আমি জিজ্ঞেস করি, আপনি কি মনে করেন তা সত্য? তিনি মাথা নাড়েন ও আমার টেপ রেকর্ডারের সুইচ বন্ধ করার ইশারা করেন। এটি এক বোধগম্য প্রতিক্রিয়া। রফিক কেবল সিরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ব্যাপারেই ভীত নন, তিনি রুশ কর্তৃপক্ষের ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন যারা ভিন্œ মতাবলম্বীদের ব্যাপারে ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, রাশিয়া যদি আসলেই শুধু আইএসকে ধ্বংস করতে চাইত তা এক বড় ব্যাপার হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যাপারটা তা নয়। তারা বহু বেসামরিক লোক ও উদারপন্থী বিদ্রোহীদেরও হত্যা করছে। আমার দেশের মানুষ রুশ বোমা হামলায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
ব্রিটিশভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সিরিয়া যুদ্ধ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। তারা বলেছে, পুতিন গত বছর সিরিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দেয়ার পর থেকে রুশ বিমান হামলায় ৯শ’রও বেশি শিশুসহ প্রায় ৪ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। খবর পাওয়া গেছে যে সিরিয়ার এক সময়ের বাণিজ্য কেন্দ্র আলেপ্পোর বিদ্রোহী অধিকৃত এলাকায় সিরীয় ও রুশ জঙ্গি বিমানগুলো নাপাম, ফসফরাস ও বাংকার বিধ্বংসী বোমা ফেলছে যেখানে এখনো ৩ লাখ মানুষের বাস রয়েছে। সমালোচকরা ১৯৯০-এর দশকে পুতিন ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরই চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে বিধ্বংসী বোমাবর্ষণের সাথে আলেপ্পোর বোমা হামলার তুলনা করেছেন।
সিরিয়ায় কি ঘটছে সে ব্যাপারে বেশিরভাগ রাশিয়ানের মনোযোগ সামান্য। সিরিয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে কি ভাবেন বলে আমি জিজ্ঞেস করি মস্কোর এক আইনজীবী সভেতলানাকে। তিনি আমাকে উল্টো প্রশ্ন করেন, আলেপ্পো? আমি কখনো এ নাম শুনিনি। তিনি তার নাম ব্যবহারের অনুমতি দেননি।
ইউক্রেন বিপ্লবের সময় ক্রেমলিনের প্রচারণা মোকাবেলায় এক প্রধান ভূমিকা পালনকারী রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা আলেপ্পোর ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ। এক উদারনীতিক রাজনীতিক ও রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইরিনা খাকমাদা সম্প্রতি রেডিও লিবার্টির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রুশরা সিরিয়ার ব্যাপারে কান দেয় না। ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক ও ইউক্রেনের মধ্যে যা ঘটছে সেগুলোই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনবিরোধী আন্দোলনও সিরিয়ার আলেপ্পোর উপর হামলার নিন্দা এখনো করেনি। ২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পুতিনের বিরুদ্ধে মিছিলে প্রায় ৩০ হাজার লোক জড়ো হলেও বাশারের প্রতি ক্রেমলিনের সমর্থনের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা কেউ করেনি। এক শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতা ইলিয়া ইয়াশিন বলেন, দেশীয় রাজনীতি ও অর্থনীতির দুর্দশার প্রতি গুরুত্ব দেয়া আমাদের জন্য অধিক সুবিধাজনক।
ক্রেমলিন সমালোচকরা অ্যান্টন নোসিকের অধিকার রক্ষায় এ মাসে তাদের অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করছেন। রুশ-ইসরাইলি নাগরিক নসিক একজন প্রভাবশালী ব্লগার। তিনি আলেপ্পোতে রুশ বোমাবর্ষণের পরিণতির সমালোচনা না করে সিরীয় জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর আহ্বান জানান। নসিক ৩ অক্টোবর ‘বিশে^র বুক থেকে সিরিয়াকে মুছে ফেল’ শীর্ষক তার একটি ব্লগ পোস্টের জন্য মস্কোর একটি আদালত কর্তৃক ৫ লক্ষ রুবল (৮ হাজার মার্কিন ডলার) জরিমানায় দ-িত হন। প্রখ্যাত সরকারবিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনিসহ রুশ বিরোধী নেতারা নসিকের বক্তব্যের নিন্দা করেন।
সুপরিচিত রুশ মানবাধিকার কর্মী ও এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের এক দাবিদার সভেতলানা গান্নুসকিনা বলেন, রুশদের জন্য ইউক্রেন এমন এক স্থান যেখানে তাদের নিকট আত্মীয় ও বন্ধুরা আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকের জন্য সিরিয়া অনেক দূরে ও অচেনা। দুর্ভাগ্যক্রমে রাশিয়ার অধিকাংশ লোকই সিরিয়ার লোকদের গুরুত্বহীন জনগণ বলে মনে করে।
জনমত জরিপে আভাস পাওয়া যায় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ রুশই তাদের সামরিক বাহিনীর অভিযান সমর্থন করে। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এ সমর্থন তেমন জোরালো নয় এবং তা রুশ সৈন্যদের ক্ষয়ক্ষতি কম থাকার উপর নির্ভরশীল। বহু লোকের মনেই আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যয়বহুল ৯ বছরের অভিযানের স্মৃতি জাগরূক যাতে রেড আর্মির ১৫ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছিল। মস্কো ভিত্তিক লেভাডা সেন্টারপোলিং কোম্পানির এক সমাজবিজ্ঞানী ডেনিস ভলকভ বলেন, লোকে আফগানিস্তানের কথা স্মরণ করে। তারা এর পুনরাবৃত্তি চায় না।
এ ভীতি কাটাতে ক্রেমলিন এক অত্যাধুনিক প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে যাতে রুশ সংশ্লিষ্টতার বিমান হামলার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। পাশ্চাত্য মেডিয়া যখন সিরিয়া যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরছে ও আনুগত্য পরিবর্তনের খবর দিচ্ছে তখন রুশ এ যুদ্ধকে সিরিয়ার বৈধ নেতা বাশার ও আইএসের মত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের মধ্যকার সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। রাশিয়া আরো বলছে যে তাদের বিমান হামলায় সিরিয়ায় কোনো বেসামরিক লোক মারা যায়নি। পাশ্চাত্য মিডিয়া যাদের উদারপন্থী বিরোধী দল বলছে রুশ কর্মকর্তারা তাদের অস্তিত্বই স্বীকার করছেন না।
মস্কো ভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক আলেকজান্ডার শুমিলিন বলেন, সিরিয়া যুদ্ধকে ব্যাপকভাবে ভালো ও প্রয়োজনীয় কারণে ঘটছে বলে দেখা হয়। আর নিহতদের দুর্ভাগ্যকবলিত মারাত্মক ক্ষতির শিকার বলে মনে করা হয়।
লেভাডা সেন্টার পোলের মতে, গত শরতে ক্রেমলিনের প্রচারণা যন্ত্র ব্যাপক প্রচারণায় না নামা পর্যন্ত ৬৯ শতাংশ রুশ সিরিয়া যুদ্ধের বিরোধী ছিল। আইএসের হুমকির ব্যাপারে দৈনন্দিন মিডিয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কয়েক সপ্তাহ পরই ৭২ শতাংশ রুশ সিরিয়া যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানায়। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, উদাসীনতা ও শর্তযুক্ত সমর্থন ক্রেমলিনকে অন্তত এখনকার জন্য আনন্দে রেখেছে।
সিরিয়া যুদ্ধ বিষয়ে রুশ মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া নীরবতায় ঢেকে রাখা হয়েছে। যদিও ক্রেমলিনের পোষা মুফতিরা পুতিনের সিরিয়া যুদ্ধকে সমর্থন করেছেন, কেউই আসলে জানে না যে দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ ২ কোটি মুসলমান এ যুদ্ধ সম্পর্কে কি ভাবেন। বাশার শিয়া মুসলিম। রাশিয়ার মুসলমানদের প্রায় সবাই সুন্নী। সিরিয়ার সরকারবিরোধী বিদ্রোহীরাও তাই।
রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর ককেশাস অঞ্চলে আলেপ্পোর বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে কোনো বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়নি। নিরপেক্ষ অনলাইন নিউজ সার্ভিস ককেশিয়ান নট-এর প্রধান সম্পাদক গ্রেগরি শভেদভ বলেন, এর আংশিক কারণ হচ্ছে কথা বলার পরিণতির শংকা। মানুষ এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাতে ভয় পায়। সিরিয়া বিষয়ে অনলাইনে মত ব্যক্ত করলে বা কোনো কথা বললে তাকে উগ্রপন্থী আখ্যায়িত করে ফাঁসিয়ে দেয়া হতে পারে।
এটাও দেখার বিষয় যে সিরিয়া বিষয়ে পশ্চিমের বিরুদ্ধে যে বাগাড়ম্বর চলছে তা রুশ জনমতকে কীভাবে প্রভাবিত করে। সিরিয়ার সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর রুশ কর্মকর্তারা মার্কিন জঙ্গি বিমানগুলো বাশার অনুগত বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করলে সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করার হুমকি দিয়েছেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের টিভি চ্যানেল জভেজদার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে আমেরিকার সিজোফ্রেনিকরা মস্কোর জন্য পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র শান দিচ্ছে।
সিরীয় উদ্বাস্তু রফিক এখন তার স্ত্রীর মাতৃভূমি প্রীতি ও সিরিয়ায় ক্রেমলিনের বর্বরতার কারণে ক্ষুব্ধতার মধ্যে দলামোচড়া হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি রাশিয়া ও রুশ জনগণকে ভালোবাসি। আমি চাই রাশিয়া আমার দেশে বোমাবর্ষণ বন্ধ করুক।
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় বসবাসকারী সিরীয়রা দু’ভাগে বিভক্ত। এক অংশ চায় বাশার আল আসাদ বিদ্রোহীদের নির্মূল করুন, আরেক অংশ চায় বাশার ক্ষমতা থেকে বিদায় হোন। সূত্র নিউজউইক।
* নিবন্ধকার মার্ক বেনেটস নিউজউইকের সংবাদদাতা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।