পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় এ দুই দিন ব্যাপি এই আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে, আফগানিস্তানে একটি সমন্বিত সরকার গঠনে প্রস্তুতি নিচ্ছে তালেবান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, ওই সরকারে কে থাকবে বা কে থাকবে না তা নিয়ে পশ্চিমাদের নির্দেশনা মানবেন না তারা। গতকাল সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহিন।
আফগানিস্তানে একটি সমন্বিত সরকার গঠনে পশ্চিমাদের চাপের প্রেক্ষিতে তালেবান কর্তৃপক্ষ গত মাসে জানিয়েছে, জাতিগত সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের নতুন তালেবান সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হবে। পরে নারীদেরও তালেবান সরকারে স্থান দেয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র নতুন তালেবান সরকারে সাবেক আফগান সরকারের যে সকল সদস্যকে স্থান দেয়ার কথা বলেছে তাতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি তারা। এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে তালেবান সরকারের মুখপাত্র ও জাতিসঙ্ঘে আফগান রাষ্ট্রদূত সুহেল শাহিন বলেন, আফগানিস্তানের জনগণ সরকারব্যবস্থা ও মন্ত্রিসভায় দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত করতে প্রস্তুত আছে। একসময় সরকারে নারীদেরও যুক্ত করা হবে। কিন্তু নির্বাচনভিত্তিক সরকার কখনও জনগণ মেনে নেবে না; এবং বিশ্বকে অবশ্যই আফগান জনগণের এই আকাক্সক্ষাকে সম্মান করতে হবে।
সুহেল শাহিন এমন এক সময়ে এসব মন্তব্য করেছেন যখন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি কাতারের দোহায় গেছেন দেশটির কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথেও দেখা করবেন। ৩০ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের চলে যাবার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা তালেবানের সাথে মুখোমুখি আলাপ করবেন। এছাড়া নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তিগুলোর সাথে আলোচনা করবেন তালেবান কর্তৃপক্ষ। তালেবান কর্তৃপক্ষের গোয়েন্দা প্রধান মোল্লা আবদুল হক ওয়াসিক, তথ্যমন্ত্রী মোল্লা খায়রুল্লাহ খায়রখোয়া ও সংস্কৃতিমন্ত্রী শেখ শাহাবুদ্দিন দেলাওয়ার এসব আলোচনায় অংশ নিবেন।
আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্ত ধাপে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের পর এই প্রথম দু’পক্ষের উচ্চপর্যায়ের মধ্যে কোনো বৈঠক হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দোহায় বৈঠকে অংশ নেয়া মার্কিন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর, সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে এবারের আলোচনায় আফগানবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত জালমাই খলিজাদ উপস্থিত থাকছেন না। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের গোপনে আলোচনা হয়েছিল। ওই আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খলিজাদ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উপবিশেষ প্রতিনিধি টম ওয়েস্ট ও ইউএসএইডের মানবিক সহায়তাবিষয়ক কর্মকর্তা সারাহ চার্লস। তালেবানের পক্ষে আলোচনা করবেন দেশটির অন্তবর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এবারের বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, আফগানিস্তানে এখনো আটকে থাকা মার্কিন নাগরিক এবং গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করা আফগানদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তালেবানকে চাপ দেয়া হবে। আলোচনায় তোলা হবে অপহরণের শিকার মার্কিন নাগরিক মার্ক ফ্রেরিচসের মুক্তির বিষয়টিও। এ ছাড়া আফগানিস্তানে যেন আল-কায়েদা বা অন্য কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে—এমন প্রতিশ্রুতি চাওয়া হবে তালেবানের কাছে।
তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে বিদেশি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশের সুযোগ করে দিতেও তালেবানের ওপর চাপ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এবারের বৈঠকে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছেন শীর্ষ এক মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তালেবান সরকারকে তাদের কাজের মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি অর্জন করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আগেই জানিয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তালেবান কর্তৃপক্ষ নতুন সরকার গঠন করে। এ নতুন সরকারের নাম দেয়া হয় ইসলামিক আমিরাত ইন আফগানিস্তান। এরপর তালেবান কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু, পশ্চিমা সরকারগুলো বলছে যে তারা নতুন তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে দেশটির নারী ও সংখ্যালঘুদের সাথে তাদের আচরণ অনুসারে।
এদিকে, আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সেই লক্ষ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের খবরও জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো। তবে এবার পাওয়া গেল তালেবানের উলটো সুর। ভারতের সংবাদ মাধ্যম জি নিউজ জানিয়েছে, আফগানিস্তানে কোনও ধরনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে ভারতকে উচিত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র মুহাম্মদ সুহাইল শাহিন বলেন, ভারত যদি আফগানিস্তানে কোনো ধরনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করে, তবে ফল হবে মারাত্মক ভয়ঙ্কর। আফগানিস্তানে অন্য দেশের সেনা থাকলে কী হতে পারে, তা আগেই দেখা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সুহাইল শাহিন। আফগানিস্তানে তালেবান শাসন কায়েম হওয়ায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে বলে আন্তর্জাতিক মহল যে আশঙ্কা করছে, সে আশঙ্কার কোনও ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন মুহাম্মদ সুহেল শাহিন।
অবশ্য বিগত বছরগুলোতে আফগানদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারত যে সাহায্য করেছে, তার প্রশংসাও করেন মুহাম্মদ সুহেল শাহিন। একই সাথে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান।জি নিউজ জানাচ্ছে আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণ করা পর প্রথমবার ভারতের সাথে যোগাযোগ করেছিল তালেবান। দু›দেশের মধ্যে বিমান সংযোগ পুনরায় শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় এবং ভারতের বৈরী মনোভাব আঁচ করতে পেরে এবার চরম হুঁশিয়ারি দিল তালেবান। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, জিনিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।