পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের বিস্তার বাড়ছে। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত পথে আসছে এ নেশাদ্রব্য। সাগর, পাহাড় ও সড়ক পথে আসা মাদকের চালান চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবার পথেই আসছে আইস। মাদক পাচারকারি সিন্ডিকেট চট্টগ্রামকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিনে দিনে বাড়ছে আইস আসক্তের সংখ্যা। শুরুতে রাজধানী কেন্দ্রীক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মধ্যে আইসের চাহিদা থাকলেও এখন এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ঢাকার মতো দেশের অন্যান্য মহানগরীতেও আইস সেবনকারী একটি শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। চাহিদার কারণে এ মাদকের পাচারও বাড়ছে। আর তাতে একের পর এক চালান ধরাও পড়ছে ।
গত কয়েক দিনে এই অঞ্চলে বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশের হাতে আইসের বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়ে। সবকটি চালান এসেছে কক্সবাজার সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার থেকে। সর্বশেষ কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় নেয়ার পথে দুই কেজি ওজনের ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করে পুলিশ। মিনি ট্রাকের এয়ার কুলারে লুকিয়ে চালানটি পাচার করা হচ্ছিল। এই ঘটনায় গ্রেফতার ট্রাকের চালক ও সহকারী স্বীকার করেছেন চালানটি কক্সবাজার সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার থেকে এসেছে।
পুলিশ জানায়, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ফার্ণিচারবোঝাই একটি মিনিট্রাকে আইস পাচার করা হচ্ছে- এমন সংবাদ পায় পুলিশ। পরে সাতকানিয়া থানা পুলিশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের তেমুহানী এলাকায় একটি গ্যাস পাম্পের সামনে চেকপোস্ট বসায়। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে মিনিট্রাকটি আসতে দেখে থামার সঙ্কেত দেয় পুলিশ। এ সময় ওই ট্রাকের চালক ফয়সাল আহমদ গাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে তাকে পাকড়াও করে। এরপর তার সহকারী রোহিঙ্গা তরুণ জাহেদ আলমকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেখানো মতে ট্রাকের এয়ারকুলারের ভেতরে দুটি পলিথিনের প্যাকেট থেকে দুই কেজি আইস উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ওই মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে দাবি করছেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। পুলিশ জানিয়েছে ট্রাকচালক ফয়সাল আহমদ মাদক পাচারচক্রের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও তিনটি মামলা আছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সর্বশেষ ওই দুই কেজিসহ এ পর্যন্ত উদ্ধার কয়েকটি চালানের তথ্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত পথেই আইস আসছে। আর তাই এ ভয়ঙ্কর মাদক যাতে কোনভাবেই দেশে আসতে না পারে সে জন্য পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেসাথে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং বান্দরবানে মাদক বিরোধী চলমান অভিযান জোরদার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আইসসহ গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচারকারী চক্রের মূলহোতা এবং তাদের সহযোগীদের পাকড়াও করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া রহমান বলেন, গ্রেফতার কক্সবাজারের টেকনাফ বাহারছড়ার গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল আহমদ (২৯) ও উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের আনজর হোসেনের ছেলে জাহেদ আলমকে (২০) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গতকাল শনিবার রিমান্ডের আবেদনসহ তাদের আদালতে হাজির করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, রিমান্ডের আবেদনের উপর পরবর্তিতে শুনানি হবে।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের অভিযানেও আইস ধরা পড়ছে। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্ণেল এস এম ইউসুফ বলেন, ইয়াবার রুটেই আইস আসছে-এটা নিশ্চিত হয়েই মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে চালান ধরাও পড়ছে। এই মাদকের বিস্তার ঠেকাতে র্যাব কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
নগরীর খুলশী থেকে চট্টগ্রামে প্রথম নতুন ধরনের এ মাদক আইসের প্রথম চালান ধরা পড়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ১৪০ গ্রাম আইসসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৭। এরপর গত মে মাসে চন্দনাইশ থেকে ২০০ গ্রাম আইসসহ এক যুবককে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গত ১৭ জুন কর্ণফুলী উপজেল থেকে ৫ গ্রাম আইসসহ গ্রেফতার হন আরো একজন। গত ১২ জুলাই নগরীর ফিশারীঘাট থেকে ৯৭৫ গ্রাম আইসের বড় চালান জব্দ ও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর দুইদিন পর ১৪ জুলাই ব্রিজঘাট এলাকা থেকে ৮০ গ্রাম আইসসহ একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের একটি টিম। গত ১০ আগস্ট লালদিঘীর মোড় থেকে ৪৩০ গ্রাম ওজনের আইসসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়। গত সপ্তাহে বিজিবি ও র্যাবের হাতে কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, এই মাদক সরাসরি সেবন করা যায়। আবার এটি ইয়াবা তৈরিরও মূল উপাদান। ইয়াবায় ৫ শতাংশ আইস থাকে। সরাসরি আইস সেবনে ইয়াবার চেয়ে ২০ গুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অন্যান্য মাদকের সঙ্গে মিশিয়েও আইস সেবন করা হয়। অ্যামফিটামিন গোত্রের এই মাদক দেখতে স্বচ্ছ কাচের (ক্রিস্টাল) মতো। এই মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতি বিভ্রম, মস্তিষ্কবিকৃতিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এই মাদক সেবনে ওজন হারানো, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা এবং বিষণ্নতার মতো বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।