Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ঔদ্ধত্যের জবাব কই?

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ঢাকার বাইরে গ্রাম-চরাঞ্চলে কয়েকদিন থাকায় দেশ-বিদেশের অনেক খবর চোখ এড়িয়ে গেছে। টিভি খবরে আগ্রহ না থাকায় রাতে টিভি দেখা হলেও খবর দেখা হয়নি। ঢাকায় ফিরে খবরটা চোখে পড়লো। অগ্নিগর্ভ কাশ্মীর সফরে গিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ঔদ্ধত্যাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘লংকা জয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তাই করেছে’। কত বড় ঔদ্ধত্য! ঔদ্ধত্যের একটা সীমা থাকা দরকার। ভারতের মন্ত্রীর এই শিষ্টাচার বিবর্জিত ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ দেশে হয়েছে এমন খবর চোখে পড়েনি। অনলাইন পত্রিকায় এসেছে বিএনপিসহ দু’একটি দল মিউ মিউ করে প্রতিবাদ করেছে। সিপিবি-বাসদ বাম দলগুলো নীরব। ইসলামী ধারার দলগুলো ভারতীয় মন্ত্রীর বক্তব্যের মাজেজা বুঝেছেন কিনা বোঝা যাচ্ছে না। ভারতের মন্ত্রী বলেছেন তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বুদ্ধিজীবী-সুশীল-সংস্কৃতি সেবীরা মরুভূমির উটপাখির মতো বালুতে মুখ লুকিয়ে আছেন। ছোটবড় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’। তারাও নীরব। চলমান পরিস্থিতিতে আমার লেখালেখির কিছু বিধিনিষেধ আছে। তারপরও বিবেকের দংশন বলে কথা।
’৬৯এর গণঅভ্যূত্থানের সময়ের চার খলিফার অন্যতম নুরে আলম সিদ্দিকী লিখনীর মাধ্যমে ভারতের মন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। ঐ পর্যন্ত। প্রশ্ন হলো সত্যিই কি ভারত রামের মতো করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে? আমাদেরকে এক সাগর রক্ত দিতে হয়নি? ইতিহাস হলো ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নের্তৃত্বে আন্দোলন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, ১১ দফার আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। ’৭০ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্বে বিপুল বিজয়ের পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো’। ২৫ মার্চের কালোরাতে ঘুমন্ত মানুষকে হত্যার প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ৯ মাস যুদ্ধে দেশের দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছি। ভারত চাইলো আর স্বাধীনতা আমাদের এলো?
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকলেও বঙ্গবন্ধুর নামেই ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত কি কারণে আমাদের সহায়তা করেছে তার কিছু বিবরণ তুলে ধরেছেন নুরে আলম সিদ্দিকী তার লেখায়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে ভারতের সৈন্যরা যে সম্পদ নিয়ে গেছে তার হিসেবে বেসুমার। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। আমাদের অস্থিত্ব ধরে টান দিলে জাতি হিসেবে কিছুই থাকে না। পৃথিবীর কম দেশই রয়েছে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই অহংকারের ওপর যদি কেউ আঘাত করে তা দেশপ্রেমী মানুষের পক্ষ্যে মেনে নেয়া অসম্ভব। অথচ ভারতের মন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পরও প্রতিবাদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। এর রহস্য কি?
জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম। পৃথিবীর যে কেউ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা নিয়ে কটুক্তি এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বললে তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী রয়েছেন সব সময় তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনের দাবি করেন। পান থেকে চুন খসলেই তারা অমুক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো; তমুক দেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হও ইত্যাদি দাবি তোলেন। অথচ ভারতের একজন মন্ত্রী আমাদের স্বাধীনতা তথা জাতীয় অস্থিত্বের ওপর আঘাত করেছেন; তার প্রতিবাদ করার প্রয়োজন বোধ করছেন না? এক কেমন দেশপ্রেম? ওরা কি দিল্লীর কাছে মাথা বিক্রী করেছেন? ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো অমিমাংসিত ইস্যু আছে। অন্যায় ভাবে তারা গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি তুলে নিচ্ছে। তিস্তা চুক্তি হচ্ছে-হবে এমন খবর শোনা যাচ্ছে অনেক দিন থেকে। ভারত আমাদের পানি দিচ্ছে না। এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ নেই। অন্যদিকে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের পানি প্রবাহের উৎস ব্রহ্মপুত্র নদের তিব্বত অংশের চিয়াকবু নদীতে পানি প্রবাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চীন। যা ভারতের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাধাগ্রস্ত করার বিপাকে পড়েছে ভারত। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী এখন বলতে শুরু করেছেন ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের পানি প্রবাহ বন্ধের প্রতিবাদ আমাদেরও করা উচিত। ভারত ও বাংলাদেশ মিলে প্রতিবাদ করলে বিশ্বদরবারে জোড়ালো আওয়াজ উঠে। হায়রে বুদ্ধিজীবী! হায়রে সুশীল!!
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী লিখেছেন, সম্পতি বাংলাদেশের কিছু সাংবাদিক ভারত সফরে গেলে ভারতীয় এক সাবেক কূটনীতিক তাদের (বাংলাদেশী সাংবাদিক) উপদেশ দিয়েছেন ‘বাংলাদেশে আমরা যেন সার্ক ভুলে বঙ্গোপসাগরভিক্তিক দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক জোটের (বিমসটেক) ওপর জোর দেই। ওই সাংবাদিকরা ভারত সফর শেষে দেশে এসে ‘সার্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে-সার্কের প্রয়োজন নেই-পাকিস্তান একঘরে হচ্ছে’ ইত্যাদি বক্তব্য দিচ্ছেন-লেখালেখি করছেন। বাস্তবতা হলো মাথা বিক্রী করা এমন সুশীল-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ছিল। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক পাকিস্তান পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা (আধুনালুপ্ত) পত্রিকায় কবি শামসূর রাহমানসহ অনেকেই চাকরি করে পাকিস্তান সরকারের তাবেদারী করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় তারা ঘন ঘন পাকিস্তান সফরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বাহবা নিয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে তাদের কেউ কেউ ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাসহ নানা কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ লিখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সেঁজে মুক্তিযুদ্ধের মশাল জ্বালিয়েছেন। ওই শ্রেণীরা এখনো রয়েছেন। এরা চিরকালই থাকবে। প্রশ্ন হলো স্বাধীন জাতি হিসেবে মনোহর পারিকারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য কি আমরা মেনে নিচ্ছি? মেনে না নিলে নীরব কেন?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • aminul ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:১৮ এএম says : 3
    যেখানে সরকার ভারতের কাছে ........... ........ করে বাসে আছে, সেখানে আমাদের কি করার আছে?.................................. মনোহর পরীকর এসব সাহস কোথায় পাণ? যদি আমাদের প্রশয় না থাকে?
    Total Reply(0) Reply
  • Al Amin ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ২:২৭ পিএম says : 0
    এখন আমাদের চেতনাধারীরা কই ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঔদ্ধত্যের জবাব কই?

১১ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ