পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সুফল পেতে প্রয়োজন দক্ষ কূটনীতি
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় সম্ভাবনা বয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সাবেক কূটনীতিকরা। তাদের মতে, শি চিন পিংয়ের এই সফরের সময় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের একটি রূপরেখা আসতে পারে। এজন্যই সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে শর্তাবলী সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। অন্যথায় আমরা বিনিয়োগের সুফল পাব না এবং ঋণভারে জর্জরিত হব। এ জন্য স্মার্ট ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের সুযোগ নিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ওপর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এই অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরকে সামনে রেখে এই গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়।
এতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চীনের সহযোগিতায় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সুশাসন ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই প্রকল্পগুলো থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা বিনিয়োগের সুফল পাব না এবং ঋণভারে জর্জরিত হব। তবে যেসব প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে কোনো ভুল করলে অনেক খেসারত দিতে হবে। কারণ এসব প্রকল্পের অর্থ আমাদের ফেরত দিতে হবে। শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের বড় দুটি প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের কারণে তাদের বিদেশি ঋণের বোঝা অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্যকে চীন শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। শুল্ক সুবিধা নিয়ে ভারতের মতো চীনের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় পৌঁছানো যায়। বিশ্বে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ চীন ধীরে ধীরে স্বল্প দরের পণ্য উৎপাদন থেকে সরে আসছে। তাই তৈরি পোশাকের এই খাতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি করতে পারে।
কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বৃহত্তর চিত্রটা মাথায় রাখতে হবে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট সই করেছি। একই সাথে আমরা বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোরের অংশীদার। আরো রয়েছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও রোড নেটওয়ার্ক। আগামী দুই শতকের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, চীন তার ভূমিবেষ্টিত অঞ্চলগুলোর জন্য দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র পথ উন্মুক্ত করতে চাচ্ছে। এজন্য চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারে। বিসিআইএম বা বিসিআইএম- উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের প্রতি চীনের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশের কৌশলগত স্বার্থের সাথে চীনের স্বার্থের সমন্বয় করতে পারলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আর এজন্য দরকার বুদ্ধিমত্তার সাথে দরকষাকষি, যা উভয়ের জন্য লাভজনক হবে।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রধান এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান বলেন, প্রকল্প আলোচনার সময়ে এর শর্তাবলির বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তার মতে, চীনের প্রেসিডেন্টের সফর বাংলাদেশের প্রতি তাদের আগ্রহের বিষয়টি ইঙ্গিত করে।
বাংলাদেশ যে পরিমাণ গ্রহণ করতে পারবে চীন, ততটুকু সহায়তা বাংলাদেশকে দেবে বলে ফারুক সোবহান বলেন, চীনের নতুন দুটি উদ্যোগ-‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ ও ‘এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক’-এর বাংলাদেশ অংশীদার। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের মতের মিল-অমিল আছে। গত সাত বছর ধরে তারা সন্ত্রাসবাদবিরোধী মহড়া করছে এবং সন্ত্রাসবাদ তাদের দু’দেশের জন্যই সমস্যা। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বড় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুষ্ঠু কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখা।
ফারুক সোবহান বলেন, চীন ও ভারত উভয়ই কানেক্টিভিটির জন্য আফগানিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার বিষয়ে আগ্রহী। সার্ক ছাড়া এ বিষয়টি সম্ভব নয়। তবে তিনি বলেন, এর সুফল পেতে প্রয়োজন দক্ষ কূটনীতি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটিজিক স্টাডিসের (বিআইআইএসএস) চেয়ারম্যান ও চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সাথে কাক্সিক্ষত কানেক্টিভিটি সফল করতে চীনের পাশাপাশি ভারতকেও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ সমুদ্র অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, মানব সম্পদ উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা কাজে লাগাতে পারে।
তিনি বলেন, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বৃহৎ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ধারণা। আমরা এই বৃহৎ যোগাযোগে যোগ দেব কিনা, তা আমাদের বিষয়। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এ যোগ দিলে অন্য কোনও কানেক্টিভিটি উদ্যোগে যোগ দিতে বাংলাদেশের কোনও বাধা নেই। চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়Ñ এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন ‘প্রকল্পের শর্তাবলী মেনে চললে খরচ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার সুযোগ নেই।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, চীনের অর্থায়নে হাতে নেয়া প্রকল্পগুলোর ব্যয়ভার বেড়ে যায় বাংলাদেশ সরকারের কর্মকা-ের কারণে। চীনা কোম্পানিগুলো ব্যবসার মাধ্যমে লাভবান হতে চাইবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তাই চুক্তির ক্ষেত্রে ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধীরগতি নিয়ে চীন বরাবরই অভিযোগ করে আসছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনীহা। এ কারণে বিদেশিরা আমাদের বিশ্বাস করতে চায় না। নিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে একজন মন্ত্রীর সঙ্গে বেইজিং সফরের সময়ে দেখেছি, চাইনিজ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছে, কয়েক বছর আগে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, সেটি এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি, তার কারণ কী।
স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার তপন চৌধুরী বলেন, অনেক দেশের সাথেই ভালো চুক্তি হয়। কিন্তু সরকারের সময় ক্ষেপণের জন্য তা মার খেয়ে যায়। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় স্থপিত কোরিয়ান ইপিডেজ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অনুষ্ঠানে চীনের সাথে বাণিজ্য নিয়ে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন বিআইআইএসএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মাহফুজ কবির এবং কানেক্টিভিটি নিয়ে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল› অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের (বিলিয়া) রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট নূর মুহাম্মদ সরকার।
গোলটেবিলে শ্রীলঙ্কা, ব্রিটেন ও সিঙ্গাপুরের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার (অব:) শাহিদুল আনাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।