Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা খেলেন ২ ডিবি কর্মকর্তা

‘পড়বি পড় মালির ঘাড়ে’

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : তারা দু’জনই গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তা। পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী একটি চক্রের সাথে তাদের গভীর সখ্যতা। তাদের সাথে নিয়ে অস্ত্র বিক্রির ফাঁদ তৈরি করে তারা। ক্রেতারা অস্ত্র কিনতে আসলে দেখানো হয় তাদের নামে ইস্যুকৃত সরকারি অর্থ। টাকা বুঝে নেয়ার পর নিজেদের আসল পরিচয় তুলে ধরে অস্ত্র ছাড়াই ক্রেতাদের বিদায় করে তারা। আবার গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকাও আদায় করে এ চক্রটি। দীর্ঘদিন এভাবে সরকারি অস্ত্র বিক্রির ফাঁদ পেতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ কামাই করা ওই ডিবি কর্মকর্তা ফেসে যান র‌্যাবের ফাঁদে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ধরতে ক্রেতা সেজে জাল ফেলে র‌্যাব। আর সেই জালে আটকা পড়ে ডিবির ওই দুই কর্মকর্তার নেতৃত্বে অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এ যেন ‘পড়বি পড় মালির ঘাড়ে’। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশে। নালিশ গেছে পুলিশ সদর দপ্তরেও। এ প্রেক্ষাপটে অবশেষে ‘অস্ত্র বিক্রি’ করতে গিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা দুই ডিবি কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল কান্তি দাস ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আনিসুর রহমান।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো: ইকবাল বাহার গতকাল (সোমবার ) বিকেলে ইনকিলাবকে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্ত চলছে। কোন কিছু গোপন করা হবে না। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত পরে জানানো হবে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, তারা পুলিশের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ ডিবির ওই দুই কর্মকর্তা। আইনগত ব্যবস্থা নিতে ওইদিনই তাদের ডিবির হেফাজতে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রহস্যজনকভাবে দেরি করা হয়। অভিযোগ উঠে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার নানামুখী চেষ্টাও হয় পর্দার অন্তরালে। সিএমপির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গত কয়েক দিন মুখ খুলছিলেন না।
অবশেষে গতকাল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা স্বীকার করেন কর্মকর্তারা। নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলা ও দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের ব্যস্ততার কারণে মূলত ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করতে কিছুটা সময় লেগেছে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করার প্রশ্নই উঠে না।
র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কামরুল ও দিদার নামে দুই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করতে ফাঁদ পাতে র‌্যাব। এ জন্য র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি চৌকস দল অবৈধ অস্ত্র ক্রেতার ছদ্মবেশ নেয়। এক পর্যায়ে তাদের কাছে অস্ত্র বেচতে রাজি হয় অবৈধ অস্ত্রের কারবারিরা। একটি ৯এমএম পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলি এক লাখ বিশ হাজার টাকায় কিনতে কথা পাকাপাকি হয়। সিদ্ধান্ত হয় ৬ অক্টোবর নগরীর নিউমার্কেটের একটি দোকানে ওই অস্ত্র ও গুলি বেচাকেনা হবে। র‌্যাব তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পাকড়াও করতে সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখে।
কামরুল ও দিদার সেখানে এসে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করেন। একপর্যায়ে একটি কালোব্যাগ নিয়ে সেখানে হাজির হন এক ব্যক্তি। নিজেকে তপনকান্তি দে বলে পরিচয় দেন। এরপর তিনি তার ব্যাগ থেকে অস্ত্র ও গুলি বের করে সাদা পোশাকে থাকা র‌্যাব কর্মকর্তাদের দেখান। এরপর অভিযানে নেতৃত্বদানকারী এক র‌্যাব কর্মকর্তা অস্ত্র ও গুলি বুঝে নেন। র‌্যাব সদস্যরা তপনকান্তি ও দিদারের হাতে অস্ত্রের দাম হিসাবে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় র‌্যাব সদস্যরা তপনকান্তি দে ও দিদারকে পাকড়াও করেন ও নিজেদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন।
জানা যায়, এ সময় হঠাৎ সেখানে দুই ব্যক্তি হাজির হন এবং নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ বলে পরিচয় দেন। এ সময় র‌্যাব তাদের চ্যালেঞ্জ করে। নিজেকে ডিবির এসআই উজ্জ্বল কান্তি দাস বলে পরিচয় দেন। তিনি পুলিশের একটি পরিচয়পত্রও দেখান এবং আটক আসামীদের ছেড়ে দিতে বলেন। র‌্যাব এক পর্যায়ে ডিবির ওই দুই কর্মকর্তাকেও আটক করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যান।
জানা যায় র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে উজ্জ্বল স্বীকার করেন, আটককৃত তপনকান্তি তার খালাতো ভাই। তার কাছ থেকে যে অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছে সেটি ডিবি পুলিশের অস্ত্র। তিনি জানান, পিস্তল ও গুলি এএসআই আনিসুর রহমানের নামে ইস্যুকৃত সরকারি অস্ত্র। দুই ডিবি কর্মকর্তা আরও জানান, তারা মূলত অস্ত্র বিক্রেতা সেজে ক্রেতার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নেয়ার পর নিজেদের আসল পরিচয় দিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখান। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের কাছ থেকে আরও টাকা আদায় করেন।
এই ঘটনাও ছিল এ ধরনের একটি ফাঁদ। অন্যের জন্য ফাঁদ পেতে যে নিজেরাই র‌্যাবের ফাঁদে আটকা পড়বেন তা ভাবতেই পারেন নি ডিবির ওই দুই কর্মকর্তা। জানা যায়, ডিবির ওই দুই কর্মকর্তাসহ ৫ জনকে ডিবির হেফাজতে আনে র‌্যাব। আর বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা খেলেন ২ ডিবি কর্মকর্তা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ