Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেট!

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বায়রার একাংশের সদস্যদের আহূত সভা হয়নি
শামসুল ইসলাম ঃ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দ্বার উন্মুক্ত হবার আগেই বায়রা ও তার সাধারণ সদস্যদের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যাতে সিন্ডিকেট চক্রের কবলে চলে না যায় সে জন্য বায়রার সাধারণ সদস্যদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে পূর্বাণী হোটেলে বায়রার একাংশের সাধারণ সদস্যদের আহূত সিন্ডিকেটবিরোধী সভা বাধার মুখে হয়নি। এ নিয়ে বায়রার সাধারণ সদস্যদের মাঝে সিন্ডিকেটবিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে। বায়রার একজন সাবেক সভাপতির উদ্যোগে এবং বায়রার সদস্য ও সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজ লিমিটেডের (৬২২) স্বত্বাধিকারী মোঃ মনজুর কাদেরের সভাপতিত্বে পূর্বাণী হোটেলে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট বিরোধী সভা আহ্বান করা হয়ছিল। কিন্তু বায়রাকে অবহিত না করে এ ধরনের সভা আহ্বান করায় বায়রা কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্বাণী হোটেলের আহূত সভায় বায়রার সকল সদস্যকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য এসএমএস দেয়া হয়। বায়রার সাধারণ সদস্যরা সকাল ১১টা থেকে দফায় দফায় পূর্বাণী হোটেলে সিন্ডিকেট বিরোধী সভায় অংশ নিতে গিয়ে সভা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাড়ি ফিরে গেছে। রাতে বায়রার সদস্য ও সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মনজুর কাদের ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বায়রা কর্তৃপক্ষের বাধার কারণে সভা করতে পারিনি।
উল্লেখ্য, সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে নতুনভাবে কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে অনলাইন প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কর্র্মী নিয়োগের জন্য জনপ্রতি লেভীর ১৮শ’ ৫০ রিংগিত করে জমা দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে বাংলাদেশের বেশকিছু রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী নিয়োগের জন্য লেভী জমা দেয়ার অনুমতি লাভ করেছে। ঢাকায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অফিসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের পাসপোর্ট ও ছবি দেদারসে জমা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের চাহিদার অনুকূলে লেভীর অর্থ জমা দেয়া শুরু করেছে। এসব রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারীরা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রে সত্যায়িত করার জন্য ফাইল জমা দেয়া শুরু করছে।
এদিকে, বিএমইটি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে কোনো সিন্ডিকেট নয়; যোগ্য সকল রিক্রুটিং এজেন্সিই জনশক্তি রফতানির সুযোগ পাবে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ৭শ’ ৪৫টি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির নামের তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে প্রেরণ করেছে। যে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া থেকে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র আনতে পারবে তাদেরকেই সার্বিক সহয়তা দেয়া হবে। সম্প্রতি বিএমইটি’র মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজা ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেছেন, যারাই মালয়েশিয়া থেকে কর্মী নিয়োগের চাহিদা আনতে পারবে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হবে। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনো সিন্ডিকেট চক্রের হাতে চলে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, কর্মী নিয়োগে কোনো সিন্ডিকেট চিনি না। মহাপরিচালক বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের জন্য সরকার ৭শ’ ৪৫টি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির নামের তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে প্রেরণ করেছে। যে সব রিক্রটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া থেকে নিজের যোগ্যতায় কর্মী প্রেরণের চাহিদাপত্র নিয়ে আসতে সক্ষম হবে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা দিব। তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে রিক্রুটিং লাইসেন্স দেয়া হয়েছেই বিদেশে কর্মী প্রেরণের জন্য। সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে কর্মী প্রেরণে কোরো বাধা নেই। বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ১৪টি মেডিক্যাল সেন্টারকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার অতিসম্প্রতি ৬টি সফটওয়ার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করেছে। ইতিমধ্যেই এসব সফটওয়ার চালুকরণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, এখন মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনের স্যুইস টিপলেই কর্মী যাওয়া শুরু হবে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে বলে বিএমইটি’র মহাপরিচালক বলেন, জনশক্তি রফতানির গতি দিন দিন বাড়ছে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় জনশক্তি রফতানির নতুন দেশ রাশিয়া ও শ্রীলংকায়ও কর্মী নিয়োগের চাহিদা পাওয়া গেছে বলে মহাপরিচালক সেলিম রেজা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। বহু কূটনৈতিক তৎপরতার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধু প্লানটেশন খাতে সরকারি উদ্যোগে কর্মী যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের জন্য ডাক-ঢোল পিটিয়ে দু’দফায় সারা দেশ থেকে প্রায় ২২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্ত জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে দেশটিতে জনশক্তি রফতানির সুযোগ না থাকায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার পথে পা বাড়ায়। অনেকে সমুদ্রপথে যাত্রা করে অকালে সাগরপথে প্রাণ হারায়। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকেই মালয়েশিয়ায় যেতে না পেরে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে তাদের ভাগ্যে গণকবরে স্থান হয়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। বহু কূটনৈতিক তৎপরতার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জি টু জি প্লাস সমঝোতা স্মারকে সই করেন। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে জিটুজি প্লাস চুক্তি স্বাক্ষরের একদিন পরেই মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণা করে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ব মালয়েশিয়ার কোতাকিনাবালু মোয়ারা তুয়াং আর্মি ক্যাম্পে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমদ জাহিদ হামিদী সোর্স কান্ট্রিগুলো থেকে অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।
বায়রার মালয়েশিয়া জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি’র চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন বে-বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী আলহাজ মোঃ গিয়াস উদ্দিন বাবুল গতকাল রাতে ইনকিলাবকে বলেন, অনলাইন প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বে-বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে দেশটির ইমিগ্রেশনে লেভী জমা দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আলহাজ গিয়াস উদ্দিন বাবুল বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি পেয়ে লেভীও জমা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার পূর্বাণী হোটেলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেট বিরোধী সভা আহ্বান করা হলেও তা’ বাধার মুখে হতে পারেনি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দ্বার উন্মুক্ত হবার পথে। তার পরেও সিন্ডিকেট চক্র শ্রমবাজার নিয়ে বাধার সৃষ্টি করছে। এতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারো পিছিয়ে যেতে পারে বলে আলহাজ গিয়াস উদ্দিন বাবুল আশঙ্কা প্রকাশ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেট!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ