পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আলোচিত ইসলামিক বক্তা মুফতি কাজী ইব্রাহীমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিবি পুলিশের করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এসআই মো. হাসানুজ্জামান মুফতি কাজী ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে নানান বক্তব্য দিয়ে আলোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন ডিবি। তার আগে গত মঙ্গলবার রাতে জেড এম রানা নামে একজন বাদী হয়ে ৪২০, ৪০৬ ও ৩৮৫ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি মামলা করেন। সেই মামলায় কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে একটি স্কুলের টাকা আত্মসাৎ, চাঁদা দাবি এবং প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। আর গোয়েন্দা পুলিশের মামলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ‘উগ্র বক্তব্য’ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। করোনাভাইরাসের টিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য এই ধর্মীয় বক্তা গত কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন। তার বক্তব্যের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।
আসামি পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, কাজী ইব্রাহীম কোনো সাধারণ মানুষ নন। তিনি একটি ইনস্টিটিউট। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে যা জিজ্ঞাসাবাদ করার তা ২৭ তারিখে তাকে গ্রেপ্তারের পরই করে ফেলেছে। নতুন করে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের নাই। তিনি সরকারের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে সরকারের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য দেন নাই। তিনি দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। এ সময় বিচারক মুফতি ইব্রাহীমের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান।
মুফতি ইব্রাহীম আদালতকে বলেন, আমরা ৫০ বছর আগে এ দেশের জন্য ৩০ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও আমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আমরা এই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় জুলুম নির্যাতন চাই না। এই দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু তার শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন। তিনি বলেন, কাজী ইব্রাহীম ফেসবুক লাইভে এসে এ দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে হেয় করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সঙ্গে তুলনা করে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তাই তাকে ১০ দিনের রিমান্ড দেয়ার আবেদন করছি। এ দেশের বাহিনীর সদস্যদের র-এর সঙ্গে তুলনা করে জঘন্যতম অপরাধ করেছেন তিনি। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের বিষয় উদঘাটন করা প্রয়োজন। হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে তাকে সাবধানে আনা-নেয়া ও জিজ্ঞাসাবাদের আদেশও দেন আদালত। এ সময় মুফতি ইব্রাহীমের স্ত্রী শরীফা বেগম তার এক কিশোর ছেলেকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে আদালতে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার পর মুফতি ইব্রাহীমকে আদালত বলেন, রিমান্ড মানে আপনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসা করবে। আপনাকে যা জিজ্ঞাসাবাদ করে ঠিকমত আনসার দিবেন। রিমান্ড মানে অন্য কিছু না, যে মারধর করবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। রিমান্ড মানে ভয়ভীতির কিছু না।
জবাবে কাজী ইব্রাহীম আদালতকে বলেন, রিমান্ডের আগেই মার খেয়েছি। একটি হাত উচিয়ে দেখান এবং বলেন এই হাতে ব্যথা। এর আগে, আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, পরীমণি আদালতে আসলে আনন্দ হয়। তাকে সানন্দে গ্রহণ করা হয়। আর একজন আন্তর্জাতিক মানের আলেমকে দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তারও আগে, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফের সঙ্গে মিলে যায় এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চান বিচারক। জবাবে ইব্রাহীম আদালতকে বলেন, তৎকালীন মিশর সরকার নিজেই হযরত ইউসুফকে (আ.) শাসকের দায়িত্ব দেন। আমার থিম ও স্বপ্ন হলো-বাংলাদেশের সরকারও এক সময় এমন কোনো একজন যোগ্য আলেম লোককে দায়িত্ব দেবেন। শাসক ও আলেম মিলে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। বাংলা মাকে একবার উদ্ধার করেছিলাম ৩০ লাখ সন্তানের জীবনের বিনিময়ে। সেই বাংলা মাকে আবার নতুন শত্রু গ্রাস করেছে। আরেক নির্যাতনের সাথে পড়ে গেছে এ দেশ। সেখান থেকে বাংলা মাকে মুক্ত করতে হবে। আমি বলেছি এই দেশের শাসক বাম দিকে চলে গেছে। তাদের সঠিক পথে থাকতেই আমি এই বক্তব্য দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সরকার বা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য দেইনি। বরং তাদের পক্ষেই কথা বলেছি। বঙ্গবন্ধু এ দেশকে ভালোবেসে ছিলেন। বিনিময়ে তার বুক ঝাঁঝড়া করে দেয়া হয়েছে। মাকে যে ভালোবাসে তারই এ পরিণতি হয়। এ সময় জাতীয় সঙ্গীতের একটি লাইন, মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি বলে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।