পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিচারপতিদের নিয়মকানুন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। তিনি বলেছেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়া অবস্থায় আপনারা নিয়মকানুন ও প্রথা মেনে চলবেন। হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা আপিলে ওকালতি করার সুযোগ পান। এটা আগে থেকেই চলে আসছে। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর বিচারপতিরা এক বছর পর্যন্ত বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এটা তাদের সুযোগ। সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন কি না এই বিষয়ে বিতর্কের জবাব দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। গতকাল বুধবার একটি মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অংশগ্রহণ করলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বিরোধিতা করলে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমি তাকে (বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী) আইনজীবী হিসেবে আইনপেশায় ফেরার অনুমতি দিয়েছি। অনুমতি দেয়ার পূর্বে আমি তার এলপিআর এবং অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র স্বাক্ষর করে শেষ করেছি। এরপর আইনপেশায় ফেরার অনুমতি দিয়েছি। তিনি তো অন্য মামলায়ও অংশগ্রহণ করছেন। এরপর তিনি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে বলেন, আপনি পড়েন (সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা)।
১১টার সময় শুনানী বিরতি ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, জাজেস রেসিডেন্ট কমপ্লেক্স এর মর্যাদা সবাই রক্ষা করবেন। যারা অবসরে গেছেন এবং যারা বর্তমানে বিচারপতি আছেন তাদের সবার প্রতি আমার এ অনুরোধ।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানীতে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। গতকাল সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শুনানো শেষে যুক্তি উপস্থান করেন তার আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন। বেঞ্চের অপর চার সদস্য হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এবং বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।
এই শুনানীতে অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ছিলেন।
হাইকোর্টের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল মীর কাসেম আলীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে অংশগ্রহণের শুরুতে আপত্তি উত্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী মাত্র একমাস আগে এলপিআরে গেছেন। তিনি সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সরকারি বাসভবনে থাকেন এবং সকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। এ অবস্থায় তিনি আইনজীবী হিসেবে মামলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন কি-না। তখন প্রধান বিচারপতি বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ওইসব মন্তব্যে করেন।
আপিল শুনানীর বিরতি এবং শুনানী শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, নৈতিকভাবে বিচারপতি নজরুল ইসলাম এটা করতে পারেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের যখন এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন রাষ্ট্র পরিচালিত মামলার বিরুদ্ধে তিনি আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বিধায় কি আপনি তার বিরোধিতা করছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এর আপত্তি বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি তাদের বলেন, সংবিধা এবং আইন আমাকে যে অধিকার দিয়েছে তা মেনেই আমি কাজ করছি। আমি আইনের বাইরে কিছু করছি না।
আদালতে শুনানির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি চলাকালে অ্যাটর্নি জেনারেল আমার প্র্যাকটিসের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের নিয়মকানুন মেনে চলার আহ্বান জানান।’ ‘আমি তখন বলেছি, মাই লর্ড অতীতেও আমি এর অপব্যবহার করিনি, এখনো করছি না। আর কয়েক মাস আছি (সুবিধা নিতে পারব), আমি ভবিষ্যতেও এর অপব্যবহার করব না। আমি আইন মেনে আইন পেশায় কাজ করছি। সংবিধান আমাকে ক্ষমতা দিয়েছে’, যোগ করেন মীর কাসেমের আইনজীবী।
এর কিছুক্ষণ পরেই নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘নজরুল ইসলাম চৌধুরী একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি সরকারি জাজেস কমপ্লেক্স, সরকারি গাড়ি, গানম্যানসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এ রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করবেন তা চরম নীতি-নৈতিকতাবিরোধী।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনজীবীরা সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না। এটা সাধারণ পাবলিকের (মানুষের) কাজ। জাজ হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না।’ এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাহলে কি সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিষয়টি এমন না। এখানে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন।’ আইনে কোনো বাধা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আইন ও নৈতিকতা দুটি আলাদা বিষয়।’ রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা আরো বলেন, পত্র-পত্রিকায় শুনেছি মীর কাসেম আলী জামায়াতে ইসলামীর অর্থের জোগানদাতা। এত বড় বড় আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে তার প্রমাণ দেখলাম।
গতকাল সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা পড়ে শুনানো শেষে যুক্তি উপস্থান শুরু করেন মীর কাসেম আলীর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী এসএম শাহজাহান। প্রথম দিন একটি অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন শেষে হয়েছে। এরপর আরেকটি অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ শুরু করেন তিনি। এরপর মামলার শুনানী আগামী সোমবার পর্যন্ত মুলতবী করেন আদালত।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (২) মোট ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে। দুটি অভিযোগে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। গতকাল দুই নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থান শুরু করেন এসএম শাহজাহান। দুই নং অভিযোগ ছিল লুৎফর রহমান ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ এবং ডালিম হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতন। এ অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ২০ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, এ অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের একমাত্র সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান ফরুক (২০ নং সাক্ষী)। তিনি সাক্ষ্য দেয়ার সময় ট্রাইব্যুনালে কেঁদে বলেছেন, নির্যাতনের ফলে তিনি পুুরুষত্বহীন হয়ে পড়েছেন। তার সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ তিনি জেরায় স্বীকার করেছন ১৯৭৯ সালে দিলারা বেগম নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে তার এক মেয়ে আছে। তার মেয়ের নাম তাসনীম রহমান মুক্তা। মুক্তার বিয়ের কাবিননামা এবং এসএসসির মার্কশটি আমারা সংগ্রহ করেছি। ২১/৪/২০১৪ তারিখ আমরা সে ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছি। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেনি।
এসময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রশ্ন করেণ যখন এটা জমা দিয়েছেন তখন মামলা কোন পর্যায়ে ছিল। এসএম শাহজাহান বলেন, তখন আসামী পক্ষের প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ চলছিল। প্রধান বিচারপতি জানতে চান তখন আপনাদের সাক্ষীর মাধ্যমে এ ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে কেন উপস্থাপন করলেন না। এসএম শাহজাহান বলেন, যেহেতু আগে আমাদের ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনাল প্রত্যাখ্যান করেছে তাই পরে আর জমা দেইনি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, মামলার কোন পর্যায়ে কোন ডকুমেন্ট জমা দেয়া যাবে এবং কী গ্রহণ করা যাবে সে বিষয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।
এসএম শাহজাহান এরপর বলেন, দ্ইু নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষী লুৎফর রহমান একজন রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সাক্ষী। তিনি তার জবানবন্দীতে স্বীকার করেছেন ১৯৭৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চাকতাই বকশীরহাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, সাক্ষী তার সাক্ষ্যে বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বিভিন্ন সভা সমাবেশে মীর কাসেম আলীকে দেখেছেন কিন্তু তিনি গত ৪২ বছরেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্মমা করেননি দালাল আইনের অধীনে। তাছাড়া তাকে অপরনের স্থান বিষয়ে বিপরীতমুখী তথ্য রয়েছে। সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে অপহরণের যে স্থানের নাম উল্লেখ করেছেন চার্জশীটে তা নেই বরং চার্জশীটে অন্য একটি স্থানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সাক্ষী নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন কিন্তু পাচলাইশে ১৯৭১ সালে কোন আর্মি ক্যাম্প ছিল কি-না তা বলতে পারেননি। অথচ এটা তার জানার কথা ছিল।
এসএম শাহজাহান বলেন, দুই নং অভিযোগ বিষয়ে ২০ নং সাক্ষী লুৎফর রহমান ফারুকই হলেন একমাত্র সাক্ষী। তার বক্তব্যের সমর্থনে আর কোন সাক্ষী ছিল না রাষ্ট্রপক্ষের। রাষ্ট্রপক্ষের অপর কোন সাক্ষী তাকে ডালিম হোটেলে বন্দী অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হতে দেখেনি এবং বলেওনি। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।