Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পার্বত্য জেলার সেনা ক্যাম্প তুলে নেয়া হবে প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হবে

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ধাপে ধাপে পার্বত্য তিন জেলা থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেনা সদস্যদের নির্দিষ্ট ছয়টি গ্যারিসনে রাখা হবে। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ সামাজিক খাতগুলোকে আগের মতোই গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হলে পরের বছর ১০ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তি বাহিনী। অস্ত্র সমর্পণের বার্ষিকীতে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা জানান, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, বাকি ৯টি চলমান রয়েছে।
সামাজিক উন্নয়নে সরকার এবং বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্যোগে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। শান্তি চুক্তির পর গত ১৭ বছরে যেসব অঙ্গীকার পূরণ হয়নি তা পূরণে সামনের দিনে সবার সমর্থন চান প্রধানমন্ত্রী। তার ওপর বিশ্বাস রাখার অনুরোধ জানান পার্বত্য জলার অধিবাসীদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় চুক্তির ধারা অনুযায়ী পার্বত্য জেলা থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে। চুক্তিকালীন সময়ে ২৩২টি সেনা ক্যাম্প থেকে ১১৯টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকিগুলো কয়েকটি ধাপে প্রত্যাহার করা হবে। মোতায়েনরত সেনাদের দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, রুমা ও আলীকদমের ছয়টি স্থায়ী সেনানিবাসে ফিরিয়ে নেয়া হবে। এজন্য গ্যারিসনগুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলছে।’ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য জেলার অধিবাসীকে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর স্বীকৃতি দেয়াকে বড় ঘটনা হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছেন, তাদের বিচার প্রচলিত আইনেই সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে আনা কথিত দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তৎকালীন সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা দিতে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার প্রচলিত নিয়মেই সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতুতে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। শেখ হাসিনা জানান, গ্যাস পাওয়া ও পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়ন পাওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস পাইপলাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের জন্য পায়রা বন্দরে একটি ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকার নিয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) পীর ফজলুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সার্বিক নিরাপত্তাসহ স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে নাশকতার মামলায় যেসব আসামি জামিন পেয়েছেন তারা যাতে ফের এ ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য তাদের নিবিড় নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে জনসাধারণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পুলিশের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ জনগণের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের চাকরি থেকে বরখাস্তসহ বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, নাশকতামূলক ও ধ্বসাত্মক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। কূটনীতিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের বসবাসের এলাকা ও চলাচলের রাস্তাসমূহে গোয়েন্দা কার্যক্রম অধিকতর জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চুক্তির যেসব ধারা বাস্তবায়ন হয়নি, তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবো। এখনো যেসব ধারা বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়ন করবো। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা করেছি, যারা চাকরি চেয়েছিলেন, তাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই চুক্তি করেছি তা নয়। আমি ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ওই অঞ্চলের যখনই কোনো ঘটনা ঘটেছে আমি তখনই ছুটে গেছি সেখানে। সমস্যার বিষয়গুলো আমার জানা, সমাধানের পথ কী তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা সব সময় বলেছি, সমাধান হবে সংবিধানের ভেতরে, বাইরে হবে না। চুক্তির ধারা অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়ন করবো। তিনি বলেন, যখন চুক্তি হয় বিএনপি-জামায়াত তার বিরোধিতা করেছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি তখন ফেনীর সংসদ সদস্য, তাই উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম ফেনী যদি ভারত হয়ে যায়, তাহলে কী উনি ভারতের সংসদে গিয়ে বসবেন? যেদিন অস্ত্র সমর্পণ হয়, সেদিন বিএনপি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় হরতাল-অবরোধ ডেকেছিল, যাতে অস্ত্র সমর্পণ না হয়। এই ১০ ফেব্রুয়ারি কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র জমা দেন বিদ্রোহীরা।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এয়ারপোর্ট করতে হলে, পাহাড় কেটে করতে হবে, সেটা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য ভালো হবে না। তিনি বেলন, আমরা রাস্তা করে দিচ্ছি, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বেশি দূরে নয়, প্রশস্ত রাস্তা আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দার্য উপভোগ করার জন্য রাস্তা দিয়ে চলাই সুন্দর হবে। এয়ারপোর্টের দরকার নেই।
‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করা বাংলাদেশের ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট। আগে যারা বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত, মনে করত বাংলাদেশ ভিক্ষা চেয়ে চলবে। এখন তারা দেখছে- না, বাংলাদেশ তা নয়।
দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিশেষায়িত জ্ঞানের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশেষায়িত জ্ঞানের যথার্থ ব্যবহার এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও গবেষকদের বিশেষ অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
এর আগে উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ পরে বিএনপির আমলে বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা আছে, এভাবে কাজ করে গেলেও পরে যদি সরকার পরিবর্তন হয় এবং সে সরকার যদি তাদের দেশপ্রেম না থাকে, ‘দেশের মানুষের প্রতি যদি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ না থাকে তাহলে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু বন্ধ করে দিতে পারে। এখন আমি অনেক সতর্ক,’ বলেন সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে জানান, ১৯৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘অনেক মেধাবীকে’ গবেষণার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ‘অনেকের গবেষণার মাঝপথে’ তা বাতিল করে দেয়। গবেষণা যাতে কেউ বন্ধ করতে না পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপকে ট্রাস্ট ফান্ডে রূপান্তর করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর লেখাপড়া ও গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু ফোলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ এবং গবেষকদের বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন সায়েন্স অ্যান্ড আইসিটি’ প্রকল্প থেকে এসব ফেলোশিপ ও অনুদান দেওয়া হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ফোলোশিপ ও অনুদানের চেক তুলে দেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আফম রুহুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ। আমাদেরকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। যেমন পদ্মা সেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র; আমাকে, আমার পরিবারকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা, আমার দেশকে হেয় করার চেষ্টা। আমি যখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলাম, সেখানে দুর্নীতির কোনো কিছু তো তারা দেখাতে পারল না।
বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এখানে যে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, ছাত্রছাত্রী স্কুল-কলেজ যেতে পারবে না অথবা বোমা হামলার শিকার হবে, শিশুদের হত্যা করা হবে-এই দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। বাংলাদেশের কেউ এটা চায় না। সবাই নিরাপদে চলবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষা ও উচচশিক্ষা গ্রহণ করবে, উন্নত জীবন ধারণ করবে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রযুক্তি বিকাশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে বিশ্বটা কিন্তু এখন হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশের প্রজন্মকে সময়পোযোগী করে গড়ে তুলতে তথ্য-প্রযুক্তিতে সরকারের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন তিনি। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চা ও খেলাধুলাতেও শিক্ষার্থীদের মন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মেধা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা সেটাই করছি। শিক্ষাকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি জানান, শিক্ষাকে তার সরকার আরও যুগোপযোগী করতে চায়। তাই অন্য কোনো দিকে মন না দিয়ে সবার আগে লেখাপড়া এবং এরপর জ্ঞান-বিজ্ঞান, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার দিকে শিক্ষার্থীদের মন দেওয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আর্থিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে আজ বাংলাদেশ বিস্ময়। এ প্রবৃদ্ধি কোনো যাদুবলে হয়নি। দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ, মমত্ববোধ ও ভালোবাসা থাকলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
নতুন প্রজন্মের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্ম এতোটাই প্রযুক্তিবান্ধব যে, তারা সহজেই সবকিছু শিখে যায়। মনে হয়, তারা জন্মানোর আগেই জেনে যায়, মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপডের কোথায় কোন বাটন চাপতে হবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান, এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশে ৫০ জন এমএস, ৬০ জন পিএইচডি, দেশে ১০০ জন পিএইচডি এবং ১১ জন পিএইচডি উত্তর গবেষণা ফেলোশিপ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে বিদেশে ৩৭ জন এমএস, ৩০ জন পিএইচডি এবং দেশে ৩৮ জন পিএইচডি ও ৮ জন পিএইচডি উত্তর কোর্সে গবেষণা কার্যক্রম শেষ করেছেন। মন্ত্রণালয় এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি উত্তর শিক্ষার্থীদের ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ দিচ্ছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৭২ জন তরুণ গবেষকের মধ্যে ৩১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা ফেলোশিপ দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৪৩৮ জন গবেষককে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩০০ টাকা দেওয়া হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় প্রণোদনা হিসেবে মন্ত্রণালয় ‘গবেষণা অনুদান’ দিচ্ছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৭ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা গবেষণা অনুদান দিয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ৩৯০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীন দেশের সংবিধানে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। সুশিক্ষিত জাতি গড়তে শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেন তিনি। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে এ শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে শিক্ষানীতি আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই শিক্ষানীতির আলোকেই নতুন শিক্ষানীতি করেছি। আমরা শিক্ষাকে বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পাশাপাশি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞান-বিষয়ক লেখাপড়ার আগ্রহ কমে গিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষার্থীদের সেই আগ্রহ বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য আগে বৃত্তি দেওয়া হয়নি। আমরা সে বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি, গবেষণার জন্য বরাদ্দ নেই। আমরা গবেষণা খাতে বরাদ্দ দিয়েছিলাম। আজকে সারাবছর তরি-তরকারি পাওয়া যাচ্ছে, এটি সে সময়কার বরাদ্দে কৃষি গবেষণার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২০০১ সালে এসে বিএনপি সেসব প্রজেক্ট বন্ধ করে দেয়। যারা বিদেশে গবেষণা করছিলেন, তাদের গবেষণাও বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বিশ্বটা কিন্তু হাতের মুঠোয়। আমরাও তার সুফলকে কাজে লাগাচ্ছি। ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। ৩৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব জ্ঞান ভা-ারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছি। ভার্চুয়াল প্রযুক্তিতে বিশ্বখ্যাত শিক্ষাবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং উচ্চশিক্ষার ডিজিটাল পুস্তক ও জার্নাল সহজলভ্য করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণা প্রণোদনা প্রকল্প ৪৯৭ থেকে ১ হাজার ২৮২টি করেছি। ইউজিসি ২৬৭ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি, ১৩৮ জনকে এমফিল এবং ২১ জন শিক্ষককে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ দিয়েছে। গবেষণার জন্য সার্ক ফেলোশিপ, রোকেয়া চেয়ার ও ইউজিসি প্রফেসরশিপ প্রবর্তন করা হয়েছে। ৭শ’ ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ‘উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উচ্চশিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ৮৯৬ কোটি ২৬ লাখ থেকে ২ হাজার ১১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা করেছি। ইউএসডিএ ও জাইকার অর্থানুকূল্যে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।



 

Show all comments
  • Rasel ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০৯ পিএম says : 0
    এটা হবে দেশের জন্য আত্বঘাতী
    Total Reply(0) Reply
  • Tariqul Islam ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১১ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ আমার প্রিয় দেশটিকে তুমি রক্ষা করো
    Total Reply(0) Reply
  • কাউসার আহম্মেদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১২ পিএম says : 0
    চট্টগ্রাম বিভাগ যেন হাতছাড়া না হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • নাইম আহমেদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১২ পিএম says : 0
    এই কাজ ভালো হবে না সেনা থাকলে ভালো হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohiuddin ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১২ পিএম says : 0
    আমি মনে করি এটা ভুল ডিসিসন।
    Total Reply(0) Reply
  • Eusuf ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১৩ পিএম says : 0
    তাহলে কি শান্তি বাহীনির ক্যাম্প হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাম্মদ মিরাজ শরীফ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১৫ পিএম says : 0
    এটাই হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul Islam ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১৫ পিএম says : 0
    Is not good idea
    Total Reply(0) Reply
  • Md Homayun Kobir ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১৭ পিএম says : 0
    No, respectable PM. do not do it ! plz !
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Arifur Rahman ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:২৬ এএম says : 0
    এটা হবে দেশের জন্য আত্বঘাতী চট্টগ্রাম বিভাগ যেন হাতছাড়া না হয়!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য জেলার সেনা ক্যাম্প তুলে নেয়া হবে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ