পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : প্রধান বিচারপতির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে অবসর নেয়া এক বিচারপতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বক্তব্য এবং তার বিরুদ্ধে খুলনা-লক্ষ্মীপুরে মামলা নিয়ে সারাদেশে যখন তোলপাড়; তখনই সচিবালয়ের গেটে এমপির স্টিকারযুক্ত গাড়ি ঢুকতে না দেয়ায় সংসদে এক বিক্ষুব্ধ এমপি পয়েন্ট অব অর্ডারে ‘দেশে কী মার্শাল ল’ চলছে বক্তব্য নিয়ে সর্বত্রই বিতর্ক-পর্যালোচনা চলছে। আঁতে ঘা লাগা বিনা ভোটে নির্বাচিত ওই এমপির বক্তব্য এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
সংসদ সদস্যের স্টিকার যুক্ত কর্মচারীর গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়া গেইটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের অপরাধের (!) তীব্র প্রতিবাদ করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর। তিনি ‘মাছের রাজা ইলিশ; দেশের রাজা পুলিশ’সহ ওই বাহিনী নিয়ে তীর্যক বক্তব্য করেন। রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ণের ‘পবিত্র স্থান’ সংসদে তার দেয়া বক্তব্য বিটিভি ও সংসদ টিভি সরাসরি প্রচার করেছে। মিডিয়াগুলোতেও সে খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়। রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করা সংসদ সদস্যদের দেয়া ‘এমপির স্টিকার’ বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো এমপির স্টিকারযুক্ত গাড়ি কী সবাই ব্যবহার করতে পারেন? দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অফিস সচিবালয়ে প্রবেশে বাধা দিয়ে পুলিশ কী অন্যায় করেছে? নাকি পুলিশ সদস্য যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে? চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশের ওই সদস্যকে পুরস্কৃত করা হবে না এমপিকে খুশি করতে করা হবে তিরস্কার?
জাতীয় সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দলের এমপি নুরুল ইসলাম ওমর বলেছেন, সচিবালয়ের গেটে বাড়াবাড়ি করছে পুলিশ। বর্তমানে দেশে পুলিশি রাজত্ব কায়েম হয়েছে কিনা স্পিকারের কাছে জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার একটি কাজে সচিবালয় যাই। একটি কাগজ বাইরে থাকায় আমার ব্যক্তিগত সহকারীকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিই কাগজটি আনতে। পিএ গাড়ি নিয়ে পুনরায় সচিবালয় ঢুকতে যায় তখন কর্তব্যরত পুলিশ তাকে ঢুকতে দেয়নি। পুলিশ বলেছে, এমপি সাহেব গাড়িতে নাই, তাই আপনাকে যেতে দেব না। পরে আমি যখন গেলাম তখন পুলিশ সদস্যদের বললাম ঘটনা কি? দেশে ‘মার্শাল ল’ নাকি জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে? আপনারা আসতেও দেবেন না, যেতেও দেবেন না? এটা কোন ধরনের আচরণ? কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখেছি ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’ ছাপা হয়েছে। তাহলে কী এটাই সত্যি? এজন্য তিনি সচিবালয়ের ওই পুলিশ সদস্যের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার দাবি জানান। তিনি ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-এমপিদের মতোই স্বভাবসুলভ ভাষায় ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, যারা এই ধরনের কাজ করছে তারা নিশ্চয়ই জামায়াত-শিবির বা বিএনপির লোক।
স্পিকারের উদ্দেশ্যে দেয়া এমপির বক্তব্যে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এক. এমপির স্টিকার যত্রতত্র ব্যবহার, ২. সরকারের আজ্ঞাবহের বদলে পুলিশ সদস্যদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে জামায়াত-শিবির তকমা দেয়া হয় ৩. জনগণের ও মাঠের বিরোধী দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ।
বিশেষ মর্যাদার কারণে চলাফেরায় বিশেষ সুবিধা দিতে আইন প্রণেতাদের গাড়িতে ব্যবহারের জন্য হলোগ্রামযুক্ত ‘বিশেষ স্টিকার’ দেয়া হয়। সেখানে এমপির গাড়ির নম্বর এবং বিশেষ সিকিউরিটি নম্বর দেয়া হয়। আর তার পরিবারের গাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি স্টিকার পেয়ে থাকেন। দুই স্টিকারের রং আবার ভিন্ন। এমপির গাড়ির বিশেষভাবে চিহ্নিত হলোগ্রাম যুক্ত ওই স্টিকার দেখে সচিবালয়ে প্রবেশ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এমপির স্টিকারযুক্ত গাড়ি দেখলে তাদের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন এমপির নামে কয়েকটি করে স্টিকার নেয়া হয়। এমপির পরিবারের সদস্য ছাড়াও কর্মচারী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এমনকি দলের অনুসারিরাও এমপির স্টিকার গাড়িতে ব্যবহার করেন। গত দুই বছরে এমপিদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি থেকে ইয়াবা আটক, ফেনসিডিল আটক এমনকি চোরাচালানির পণ্য আটকের খবর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। গত বছরের ১৩ এপ্রিল সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি মায়ের স্টিকার যুক্ত গাড়ি থেকেই ইস্কাটনে যানজটে পড়াবস্থায় জনকণ্ঠ পত্রিকার এক সিএনজি চালক ও এক রিকশা চালককে গুলি করে হত্যা করেছে। কয়েক বছর আগে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের এমপিদের বসবাসরত ন্যাইম ফ্লাটের সামনে আওয়ামী লীগের ভোলা থেকে নির্বাচিত এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যবহৃত বিশেষ হলোগ্রামের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে যুবলীগ নেতা ইসরাফিলের গুলিবিদ্ধ দেহ পিস্তালসহ আবিষ্কার করা হয়। ঢাকার রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায় এমপিদের নামে বরাদ্দ দেয়া হলোগ্রামযুক্ত স্টিকার লাগানো গাড়ি চলাচল করছে। অধিকাংশ গাড়িতে এমপিদের দেখা যায় না। বিভিন্ন সময় দেখা যায় রাস্তার যানজট শুরু হলে শত শত গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছে অথচ এমপিদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি উল্টো পথে পার করে দিচ্ছে ট্যাফিক পুলিশ। আবার স্টিকারযুক্ত গাড়ি রাস্তার রং সাইডে চলাচল করে যানজটের সৃষ্টি করেও দায়িত্বপালনরত পুলিশ সদস্যরা ওই সব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্য ছোট চাকরি করি। স্যারদের আইন ভাঙ্গার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে চাকরি খোয়াতে হবে। ট্রাফিকের এই ভীতির কারণে এমপিদের বিশেষ হলোগ্রামযুক্ত স্টিকারের গাড়িতে রাজধানী যেন ছয়লাব হয়ে গেছে। ঢাকায় এমন প্রবাদ চালু হয়েছে যে, ‘বিল্ডিংয়ের উপর থেকে একটি ইট পড়লে দেখা যায় সেটা পড়েছে এমপিদের স্টিকার লাগানো গাড়িতে।’ দেশে মন্ত্রী-এমপি এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপির সংখ্যা সাড়ে তিনশ’। অথচ ঢাকার রাস্তায় যানজটের সময় প্রায়ই দেখা যায় এমপিদের স্টিকারযুক্ত কয়েকটি গাড়ি পথে চলাচল করছে। অধিকাংশ গাড়িতে এমপিদের দেখা যায় না। এমপির স্টিকারযুক্ত গাড়িতে তার কর্মচারী ব্যবহার করে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারলে এমপিদের বিশেষ মর্যাদার কী থাকে? সচিবালয়ে প্রবেশে সাধারণ মানুষের জন্য পাস আর সাংবাদিকদের ব্যবহারের জন্য এ্যাক্রিয়েশন কার্ডের ব্যবহার হয়। আর এমপিদের সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য হলোগ্রামযুক্ত স্টিকার দেয়া হয়। আইন প্রণেতাগণ ওই গাড়িতে সংসদে প্রবেশ করলে আইনশৃঙ্খলায় রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী এমনিতেই প্রবেশ করতে দিয়ে থাকেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বা সরকারের কাছ থেকে এমপি যে সুবিধা ভোগ করবেন সেটা কী তার কর্মচারীদের দেয়া সংগত? এমপির গাড়ির হলোগ্রামযুক্ত স্টিকার ব্যবহার করে অহরহ অঘটন ঘটছে; চুরি-চোরাচালানি ঘটছে যা প্রায়ই মিডিয়ায় আসছে। সংগত কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হয়ে যায় এ ব্যাপারে করাকড়ি আরোপ করা। পুলিশ তাই করেছে। যে পুলিশ সদস্য ওই গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেয়নি যথাযত দায়িত্ব পালনে তাকে পুরস্কৃত করাই উচিত। বাহিনী থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হলে অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা স্বীয় দায়িত্ব পালনে উৎসাহী হবেন। পুলিশ সদস্য ক্ষমতাসীন দল ও গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতাদের পক্ষ্যে কাজ না করলে, তাদের অন্যায় সুবিধা না দিলে এবং তাদের অন্যায় আদেশ-নির্দেশ পালন না করলে জামায়াত-শিবির-বিএনপির অনুসারী হিসেবে চিহ্নিতের মানসিকতা কেন? পুলিশের অনেক সদস্য শুধু চাকরি বাঁচানো এবং নিজেদের বিএনপি-জামায়াতের তকমা থেকে রক্ষা করতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অন্যায় আদেশ মানতে বাধ্য হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমপি ও গৃহপালিত বিরোধী দলের এমপিদের এমন মানসিকতার পরিহার করা উচিত। এ নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, আইন বিশেষজ্ঞ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মুখ খোলা উচিত। কারণ পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের অপরাধের কারণে গোটা পুলিশ বাহিনীর উপর যে দায় চাপানো হবে। আর তাদের ভালো কাজের স্কীকৃতি দেয়া হবে না এটা হয় না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের ভেবে দেখা উচিত। পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক গতকালও রংপুরে বলেছেন পুলিশের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা হয়েছে। কথা হলো পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ভালো কাজের পুরস্কার এবং মন্দ কাদের তিরস্কার করতে হবে। পাশাপাশি বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার; কারণে অকারণে দলবাজি এবং জামায়াত-শিবির খেঁ^াজা সুস্থ্য মানসিকতা নয়। পুলিশ বাহিনী জনগণের অর্থে পরিচালিত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতার দম্ভে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের আজ্ঞাবহ গৃহপালিত বিরোধী দলের এমপির যতই আস্ফালন করুক পুলিশ বাহিনীকে চলতে হবে যথাযথ নিয়মে। আইন প্রণেতারা আইন অমান্য করলে ‘ক্ষমতাধর’ হওয়ার তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না এ মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে পুলিশ বাহিনী ছাড়া পৃথিবীতে কোনো দেশ নেই। মাঠের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপি নেতারা কথায় কথায় ‘দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে’ বলে যে অভিযোগ করছেন। একজন পুলিশ সদস্যের আনাড়ি কথা ‘মাছের রাজা ইলিশ; দেশের রাজা পুলিশ’ বলে গোটা পুলিশ বাহিনীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে তা মোটেও কাম্য নয়। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের দালালখ্যাত গৃহপালিত বিরোধী দলকে খুশি করা নয়; জনগণ কিসে খুশি হয় সে উদ্যোগই নিতে হবে পুলিশকে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বাড়াতে এবং যথাযত দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দিতে সচিবালয়ের গেইটে ডিউটিরত পুলিশের যে সদস্য স্টিকারয্ক্তু গাড়ি আটক করে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তাতে তাকে পুরস্কত করা উচিত। এতে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি বাড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।