পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : সম্মেলন হয়ে যাওয়ার প্রায় ৩ বছর পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। দলের নীতি-নির্ধারকদের তথ্যমতে আগামী মার্চে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের পর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ কমিটি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তারা কমিটির অগ্রগতি নিয়ে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও নিচ্ছেন। শেখ হাসিনার চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যেই এ কমিটি ঘোষণা করা হবে। বর্তমানের অখ- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিটে ভাগ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটিতে দলের ত্যাগী ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতারাই নেতৃত্ব পাবেন বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অখ- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের স্মরণসভায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় সম্মেলন শেষে সংগঠনের প্রাণ ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বলেন, পরবর্তী কমিটি হবে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে। সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হবে। একইসঙ্গে নবীনদেরও সুযোগ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, মহানগরের দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) কমিটি প্রস্তুত রয়েছে। দলীয় সভানেত্রী যে কোনো মুহূর্তে কমিটি ঘোষণা করতে পারেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ নতুন কমিটি সম্পর্কে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা মহানগর কমিটির বিষয়ে আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। তার সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। তিনি বলেছেন, শিগগিরিই দুই মহানগরে দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা সবক’টি থানা ও ইউনিয়নে সম্মেলন সম্পন্ন করেছি। এখন পুরো বিষয়টিই দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করছে। উপযুক্ত সময়ে তিনি কমিটি ঘোষণা করবেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে বর্তমান একক কমিটিকে বিভক্ত করে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুই ভাগে আলাদা আলাদা নেতৃত্ব সৃষ্টি করা হবে। এর আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। সম্মেলনে আগের কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নতুন কমিটি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। একইভাবে আগের কমিটির স্ব স্ব পদের নেতারাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু ওই সম্মেলনের পর প্রায় ৩ বছর পার হলেও নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। এরই মধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ মারা যান। সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সরকারের দূর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করছেন। মন্ত্রীত্বের কারণে তিনি সাংগঠনিকভাবে আগের মতো মহানগর আওয়ামী লীগে সময় দিতে পারেন না। আর এমএ আজিজের মৃত্যুতে কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দলের সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালনকারী ঢাকা মহানগর। দলের নেতারা বলছেন, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে বেশ চাঙ্গা অবস্থায় ছিল নগর কমিটি। তাই এতদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তেমন চাপ অনুভব করেননি। তারা ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছিলেন। তাদের এ ধীরে চলো নীতিতে সায়ও ছিল দলের হাইকমান্ডের।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ জুন সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও এমএ আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষিত হয়। ওই কমিটির মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পান মহানগর নেতারা। পরে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর মেয়র হানিফ মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে এম এ আজিজকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে তিনিই সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলন করার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। এই নিয়ম অনুযায়ী ২০১২ সালে সম্মেলন হলেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এর ফলে ২০০৩ সালের পর থেকে নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। এতে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা তেমনটি মনে করেন না। তাদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময়ই সক্রিয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দু’জন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। বিগত সিটি নির্বাচনে তার প্রতিফলন দেখা গেছে। তাই হয়তো নতুন কমিটির ব্যাপারে হাইকমান্ড ধীরে চল নীতিতে চলছেন। তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা ঘোচাতে শিগগিরিই হাইকমান্ড পদক্ষেপ নেবে। দলীয় সভানেত্রী যখন চাইবেন তখন কমিটি ঘোষণা করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এ কে এম রহমতুল্লাহর নাম আলোচনায় রয়েছে। রহমতুল্লাহর বাইরে মিরপুর সংদীয় আসনের আরেক সংসদ সদস্য মো. কামাল মজুমদারও মহানগর ঢাকা উত্তরের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব পেতে ইচ্ছুক। এছাড়া, এতদিন খ-িত মহানগরের দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহের কথা প্রকাশ করলেও সম্প্রতি মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খ-িত উত্তরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি সরকারের দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মায়ার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে বিশ্বস্তদের নিয়ে এক বৈঠকে তিনি নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। সেখানে মিরপুর শাহ আলী এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাদেক খানের নাম দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে। এছাড়াও, চলতি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নামও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় থাকলেও সম্প্রতি অন্যের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দখল, অসাধু উপায়ে বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাকে নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনা শুরু হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। অন্যদিকে, মহানগর দক্ষিণে প্রস্তাবিত কমিটিতে অখ- মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজকেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল বলে খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই তার এ বক্তব্যে জানিয়েছেন। কিন্তু আজিজ মৃত্যুবরণ করায় আগের সেই সমীকরণ এখন পাল্টে গেছে। এখন প্রবীণ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তরুণ নেতৃত্ব সাঈদ খোকন ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম এমপির নাম আলোচনায় আছে। তবে দলীয় সূত্রমতে, এদের মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও হাজী সেলিমের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুদায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীরই অনাগ্রহ আছে। অ্যাডভোকেট কামরুল সংসদ সদস্য, মন্ত্রী। তার আপন বোন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। বোন জামাইও দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই এক ব্যক্তি বা পরিবারে দলীয় আনুকূল্য সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে বলে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড মনে করছে। আর হাজী সেলিমের রয়েছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি। তাকে নিজের সংসদীয় এলাকা ও ব্যবসার প্রতি মনোনিবেশ করতে দলের হাইকমান্ড পরামর্শ দিয়েছে। তাই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন ও শাহে আলম মুরাদের মধ্য থেকেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।