পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : রেশনিং সিস্টেমে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি হলেও রাইস মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চালের বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তরবঙ্গে বন্যার কারণে খুলনাঞ্চলের বাজার চড়া। কারণ উত্তরবঙ্গের চালই এ অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। খুচরা বাজারে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫-৭ টাকা বেড়েছে। অপরদিকে, দরিদ্রের ১০ টাকা দরে চাল সরবরাহ করলেও চালের বাজারে তার বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি। আবার তালিকা নিয়ে জটিলতার কারণে এই ১০ টাকা মূল্যের চাল কেনার সুযোগ পায়নি খুলনার ১২টি ইউনিয়নের জনসাধারণ। একই সাথে খুলনার বাজারে বেড়েছে মাছ ও সবজির দাম। আর কমেছে ডালের দাম। প্রতি কেজি চাল মোটা ৩৩-৩৬ টাকা। মিনিকেট ৪৩-৪৭ টাকা। মসুর ডাল প্রতি কেজি ৯৭-১৪৮ টাকা। মুগ ডাল ৮২-১০০ টাকা। বাসমতি চাল প্রতি কেজি ৫২-৫৫ টাকা। অথচ গেল সপ্তাহে প্রতি কেজি ৪৫-৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। স্বর্ণা ৪৭-৫০ টাকা আর ২৮ বালাম ৪২-৪৩ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সব মাছের দাম কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে।
সূত্রমতে, ডিউটি ও ল্যান্ডিং চার্জ বৃদ্ধিতে ভারত ও বার্মা থেকে চাল আমদানি কমে যাওয়া এবং এ অঞ্চলের রাইস মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তবে রাইস মিল মালিকরা বলছেন, ভোক্তারা বেশি দামে চাল কিনলেই কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ফলে কৃষকরা ধান উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।
নাগরিক নেতা শেখ আব্দুল হালিম বলেন, রাইস মিল মালিকরা ধান ও চাল মজুদ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। আগে বড় বাজার থেকে এ অঞ্চলের মংলা, ফয়লা, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাল পাঠাতে হতো। এখন ওই সব এলাকার ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকা থেকে সরাসরি চাল সংগ্রহ করছেন। ফলে বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খুলনার ধান-চাল বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মুনির উদ্দিন বলেন, ‘সরকার ৩ দফায় চাল আমদানির ওপর ২৮ ভাগ ডিউটি ও ১ ভাগ ল্যান্ডিং চার্জ ধার্য করায় আমদানি কমেছে। আমদানি না হওয়ায় দেশীয় ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া প্রাধান্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দাম বাড়ছে।
খুলনার বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দা বাদশা মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে গিয়ে দেখি চালের দাম প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমরা আশা করেছিলাম সরকার ১০ টাকায় চাল দিচ্ছে সুতরাং চালের বাজারে দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো। ফলে মোটা চাল কেনাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। মুজগুন্নী এলাকার মো: জলিল বলেন, ‘বিভিন্ন উৎসবের সময় এলেই বাজারের ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন দাম বাড়ানোর জন্য।
এর ফলে আমরা সাধারণ ক্রেতারা চাপের মুখে পড়ে যাই। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এদিকে, সরকার নিম্নবিত্তদের জন্য ১০ টাকায় যে চাল সরবরাহ করছে তার তালিকায় রয়েছে মধ্যবিত্ত ও প্রভাবশালীরা। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তালিকা তৈরি হওয়ায় প্রকৃত সুফল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় খুলনার ডুমুরিয়া, দাকোপ, পাইকগাছা ও দীঘলিয়ার ১২টি ইউনিয়নের সাধারণ নিম্নবিত্তরা ১০ টাকা মূল্যের চাল কেনার সুযোগ পায়নি। খুলনার ৯ উপজেলায় ৮৩ হাজার ৯৪৪ পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা মূল্যের চাল বিক্রির টার্গেট করে সরকার। যারা বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্ত ও যেসব পরিবারের শিশু আছে তাদের হতদরিদ্র চিহ্নিত করে ১০ টাকা মূল্যের চাল বিক্রির নীতিমালা তৈরি করা হয়। অথচ এখানে ভিড় জমিয়েছে প্রভাবশালীরা। বিভিন্ন স্থানে তালিকা তৈরি ও ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই বাধ্য হয়ে নিম্নবিত্তদের বাজার থেকে ১০ টাকার পরিবর্তে ৩৪ টাকায় চাল কিনতে হচ্ছে।
সূত্রমতে, চালের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার জন্য অভিজ্ঞ মহল দায়ী করছেন মিল মালিক সিন্ডিকেটকে। অথচ সরকারের কোনো বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চাল নিয়ে এই চালবাজি সরকারের ভাবমর্যাকে ক্ষুণœ করলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে যেন কুম্ভ ঘুমে। আর সবজির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি গত ১ মাসে দফায় দফায় বাড়ছে রসুন ও মাছের দাম। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।