Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত

প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : নানা আচার ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা। শুক্রবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে ৫দিনব্যাপী দুর্গাপূজার উৎসবের শুরু হয়। আর মাত্র দু’টি দিবানিশির প্রহর পেরুলেই উমার কৈলাশ গমন। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ছিলো শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। সকালে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। পূজান্তে অঞ্জলি দেওয়া দেশ ও বিশ্বশান্তিকল্পে এবং মঙ্গলার্থে সমবেত প্রার্থনা হয়।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠে মহাঅষ্টমী পূজা শুরু হয় সকাল ৬টা ৩ মিনিটে। কুমারী পূজা শুরু হয়েছে সকাল ১১টায়। সন্ধিপূজা আরম্ভ হয় বিকেল ৫টা ৩৯ মিনিটে এবং শেষ হয় ৬টা ২৭ মিনিটে।
মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণই হচ্ছে কুমারী পূজা। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনসহ সারা দেশের মাত্র অল্প কয়েকস্থানে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে অনুষ্ঠিত হয় কুমারীপূজা। কুমারীপূজা দেখতে এদিন সকাল থেকে সনাতন ধর্মালম্বী সকল শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। কিন্তু ক্ষণিকের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তারপরও খলনায়ক বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন ভক্তরা।
ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ কুমারীপূজা প্রসঙ্গে বলেন, জগতমাতাকে (দেবী দুর্গা) আমরা আরাধনা করি। তিনি সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপে আছেন। এ উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার জন্যই কুমারীপূজা হয়ে থাকে। দুর্গা মাতৃভাবের প্রতীক আর কুমারী নারীর প্রতীক। কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ১৯০১ সালে দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার অদূরে বেলুড় মঠে নয়জন কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনর্প্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পরবর্তীতেও কুমারীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর একেকটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশে প্রকাশ। কুমারীপূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুত-পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি।
বাঙালী হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করতে সকাল থেকেই ম-পগুলোতে ভক্তদের ভিড় জমে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
হেমেন্দ্র নবীন সংঘের পূজাম-পে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কল্পারম্ভ, মহাস্নান ও অষ্টমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা দেবীর চরণে অঞ্জলী প্রদান করেন। অঞ্জলী প্রদান শেষে আরতির মধ্যদিয়ে অষ্টমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। পরে ভক্তরা মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন।
ফরাশগঞ্জের বিহারী লাল জিউর মন্দিরে ৬৭ বছর ধরে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছে সম্মিলনী পূজা কমিটি। এখানে মহাঅষ্টমী তিথিতে রোববার সকালে কল্পারম্ভ, মহাস্নান ও অষ্টমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে দুপুরে ভক্তরা ফুল, বেলপাতা দিয়ে দেবীর চরণে পুস্পাঞ্জলী অর্পণ করেন। পরে যজ্ঞের ফোটা ও চরণামৃত গ্রহণের মাধ্যমে পূজা শেষ করে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন।
৩৫ বছর ধরে পাতলা খান লেনের সবুজ স্বপন সংঘ দুর্গাপূজা করে আসছে। এ ম-পে দুপুর ১২টার দিকে কল্পারম্ভ, মহাস্নান ও অষ্টমী পূজা শেষ হয়। এর পর দেবীর চরণে পুস্পাঞ্জলী অর্পণ করেন ভক্তরা।
শনিবার মহসপ্তমী তিথিতে নয় ধরণের বৃক্ষচারা পূজার মাধ্যমে প্রকৃতির (প্রকৃতি হচ্ছে দেবী দুর্গার অন্যরূপ) প্রতীকী পূজা করা হয়। কল্পারম্ভ, মহাস্নান ও সপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করেন ভক্তরা।
শুক্রবার বোধন আমন্ত্রণ, অধিবাস ও ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয় পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। ওই দিন সকাল থেকেই চন্ডিপাঠে মুখর ছিল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব পূজাম-প।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি স্থায়ী-অস্থায়ী ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩২৪টি বেশি। রাজধানী ঢাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২২৯টি ম-পে।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় একে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধারে যাত্রার আগে রাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের আমাবস্যা তিথিতে। এ জন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ