পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে। তাই বাড়ছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা। সম্প্রতি হাইকোর্টে দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ বছরে দেশের ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারের জন্য মামলা এসেছে ৩০ হাজার ২৭২টি। আরেক পরিসংখ্যান মতে, বিভিন্ন আদালতে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিচারাধীন মোট মামলা ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৬১টি। বহু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনায় হয়তো কোনো মামলাই হয়নি। তাই হিসেবে আসেনি সেই পরিসংখ্যান। এটি এক ধরনের বাস্তবতা। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের মতো সর্বোচ্চ শাস্তি সম্বলিত আইনে দায়েরকৃত সব মামলাই কি সত্যি? সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতে, ধর্ষণ মামলার ৭৫ থেকে ৮০ ভাগই মিথ্যা।
অথচ নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের মামলা যতটা আলোচনায় আসে ততোটা আলোচনায়ু আসে না নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মিথ্যা মামলা। মামলা একটি রুজু হয়ে গেলে সত্যাসত্য প্রমাণের আগেই আসামিকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। পক্ষান্তরে মিথ্যা মামলার বিদ্যমান শাস্তি নামমাত্র। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা যেমন বাড়ছে। পাল্টা দিয়ে বাড়ছে মিথ্যা মামলা দায়েরের হারও। উভয় বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মিথ্যা মামলার শাস্তি বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
স্বপ্নার ‘বিয়ে বিয়ে’ খেলা এবং ‘নারী নির্যাতন’ মামলা
নাটোর কানাইখালি মাদরাসা মোড় এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের মেয়ে মনিরা খাতুন স্বপ্না। নারী নির্যাতন, যৌতুক দাবি এবং দেনমোহর ও খোরপোষ না দেয়ার অভিযোগে তার চেয়ে বেশি মামলা সম্ভবত বাংলাদেশে কেউ করেনি। তিনি একাই মামলা চালাচ্ছেন ২৯ জন স্বামী’র বিরুদ্ধে। প্রতিটি স্বামীরই তিনি ‘বিয়ে করা স্ত্রী’ বলে দাবি করছেন। কোনো সংসার দুই মাসের। কোনটি ৬ মাস। এভাবে অন্তত: ২৯ পুরুষকে বিয়ে করেন মনিরা খাতুন স্বপ্না। ধনীর দুলাল, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তার স্বামী।
তার ‘বিয়ে বিয়ে খেলা’র কাছে পরাস্ত হয়েছেন বহু প্রভাবশালী পুরুষ। সব জেনে তারা তাকে তালাক দিয়েছেন। পরে মোহরানা, খোরপোষ এমনকি ‘বাপের বাড়ি’ থেকে কথিত যৌতুক প্রদানের অর্থ ফেরত দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক স্বামী। তদুপরি স্বপ্নার ‘নারী নির্যাতন’ ও যৌতুক দাবি’র মামলা থেকে রেহাই মেলেনি তাদের। কখনও হিন্দু পাত্রী হয়ে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন হিন্দু স্বামীর সঙ্গে।
স্বপ্নার ফাঁদে পড়ে সংসারের স্বপ্নভঙ্গ হওয়া পুরুষের (পরবর্তীতে মামলার আসামি) তালিকায় আছেন রাজশাহী মহানগরীল শাল বাগান এলাকার মখলেসুর রহমান। তিনি মনিরা খাতুন স্বপ্নার প্রথম স্বামী। তার ২৯ তম স্বামী রাজশাহীর শিরোইল এলাকার সাইফুল ইসলাম ফটিক। পরবর্তীতে তাকে স্বপ্নার দায়ের করা মামলার ঘানি টানতে হয়েছে। তবে পাল্টা মামলার করতে গিয়ে ফটিক স্বপ্নার বিষয়ে উল্লেখ করেন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।
এজাহারে তিনি বলেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর মনিরা খাতুন স্বপ্না তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় মুনিরা আগে ২৮ স্বামী ও তিন সন্তানের কথা গোপন করেন। বিয়ের পর থেকেই তার চলাফেরা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। বাড়িতে অনেক লোক তার অগোচরে যাতায়াত করতো। নিষেধ করলেও স্বপ্না শুনতেন না। উল্টো নানানভাবে হুমকি দিতেন। স্বপ্না তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন।
তিনি বলেন, স্বপ্নার আগের ২৮ স্বামী ও সংসারের সত্যতা পেয়ে ২০১৫ সালের ২৬ মে তাকে আইনসিদ্ধভাবেই তালাক দেন। এরপরেই স্বপ্না তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। রাজশাহীর পুঠিয়ার জামিরার আব্দুল মতিন মুকুলের সঙ্গে স্বপ্নার ছাড়াছাড়ি হয় ২০০৬ সালের ৬ জুন। ওইদিনই বিয়ে করেন নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার আরেক আব্দুল মতিনকে। একই বছর আজাহার আলী নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। ২০০৭ সালে বিয়ে করেন বগুড়া ধনুটের আজহার মল্লিককে। কিছুদিন পর একই এলাকার আবু বকরকে। ২০০৮ সালে কুষ্টিয়া ভেড়ামারার মহারাজপুরের আশরাফুল আলমকে বিয়ে করেন। তাকে তালাক দিয়ে হিন্দু পাত্রী সেজে বিয়ে করেন কুষ্টিয়া শিমুল নামক হিন্দু পাত্রকে।
রাজশাহী ফিরে এসে পরে হেতেম খাঁ এলাকার আব্দুর রহমান নুরাজকে বিয়ে করেন। ২০০৯ সালে তাকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেন দিদারকে। তাকে ছেড়ে বিয়ে করেন তানোর উপজেলার মুন্ডু মালা এলাকার কালুকে। ২০১০ বিয়ে করেন সিলেটের দীপককে। একই বছর ৫ অক্টোবর বিয়ে করেন একই এলাকার বাবুলকে।
এছাড়া ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে : রাজশাহীর আলুপট্টি মোড় এলাকার রাব্বানী, শালবাগান এলাকার আশরাফ, বেলঘরিয়ার শফিউল আলম নাচোলের বালিকাপাড়া এলাকার রোকনুজ্জামান স্বপ্নার পাণিপ্রার্থী হন। এরই মাঝে বিভিন্ন সময়ে স্বপ্নার বিয়ে-প্রতারণার শিকার হন রাজশাহীর রামচন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল বারী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষার্থী গুপ্ত সালাম, পবার দারুসা এলাকার আব্দুস সালাম, রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকার নূরুল কাজী, সাহেব বাজার এলাকার সাঈদ ও ডলার, মোহপুর উপজেলার বেলাল এবং বালিয়াপুকুর এলাকার মামুন।
২৯ নম্বর স্বামী হিসেবে শিরোইলের সাইফুল ইসলামকে বিয়ে করেন ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর। পরে সাইফুল মনিরা খাতুন স্বপ্নার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় স্বপ্না গ্রেফতার হন। পরে জামিনে বেরিয়ে এলেও রাজশাহী নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা চলছে। বিয়ে বিয়ে খেলা অতঃপর কাবিননামার ভিত্তিতে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং অর্থ হাতিয়ে নেয়া সম্পর্কে স্বপ্নার বক্তব্য পরিষ্কার।
তিনি বলেন, আমাকে সমাজে হেয় করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। কোনো অভিযোগই সঠিক নয়। মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম ফটিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এ কারণে তিনি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে দাবি স্বপ্নার।
মিথ্যা মামলার শাস্তির ঘটনা বিরল
মনিরা খাতুন স্বপ্না একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। বিচ্ছিন্ন কিংবা ব্যতিক্রম ঘটনাও বটে। কিন্তু নারী দ্বারা প্রতারিত হওয়া, নারী নির্যাতন, যৌতুক কিংবা ধর্ষণের মিথ্যা মামলার শিকার হওয়ার ঘটনা অহরহই ঘটছে। জয়পুরহাটে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় মামলার বাদী এক নারীকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতবছর নভেম্বরে জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রুস্তম আলী এ রায় দেন। ঘটনাটি ছিল জয়পুরহাট সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামে।
২০১৯ সালের ২২ জুন প্রতিবেশী রূহুল আমিন লিলিফা বানুর ঘরের দরজা খুলে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেনÑ মর্মে এজাহারে উল্লেখ ছিল। পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যুবককে ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণ মামলাটি করা হয়। পরে লিলিফাও মিথ্যা মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দী দেন। একই ট্রাইব্যুনাল চলতি বছর ৫ জানুয়ারি ধর্ষণের মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে শ্রীমতি নন্দ রানী (৩৭) কে ৭ বছর কারাদণ্ড দেন। জরিমানা করা হয় ৩০ হাজার টাকা। অনাদায়ে আও ৫ মাসের কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে কথিত ধর্ষণ মামলার আসামি আবুল হায়াত আলীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
শুধু রূহুল আমিন কিংবা হায়াত আলীই নন। পূর্ব শত্রুতার জের, পারিবারিক বিরোধ ও ঠুনকো ঘটনাকে কেন্দ্র ধর্ষণের মতো চূড়ান্ত আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। এসব মামলায় জীবন বিপর্যন্ত হচ্ছে অনেক নিরপরাধ মানুষের জীবন। অনেকে কারাভোগ করছেন বছরের পর বছর। পাতানো বানোয়াট মামলার প্রবণতাও কমছে না। মামলার আইনি প্যাঁচে আটকে আইনজীবীর পেছনে অর্থ ঢেলে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। বিচারের শেষে মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলেও পাল্টা মামলায় শাস্তি নগন্য।
অপর্যাপ্ত সাজার কারণে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মিথ্যা মামলা বাড়ছেই। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্যকোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যেও এ আইনের যেকোনো ধারায় মিথ্যা মামলা করেন অথবা করান, তবে অভিযোগকারী অনধিক সাত (৭) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আইনে বিষয়টি এভাবে উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ মিথ্যা মামলাকারী নামমাত্র দণ্ডে পার পেয়ে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা প্রমাণ হওয়ার পরেও অভিযুক্তকে অর্থদণ্ড দিয়েই ছেড়ে দেয়া হয়।
নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাভোগ করলেও পাল্টা মামলা দায়ের করে আইনি লড়াই পরিচালনার মতো মানসিক ও আর্থিক শক্তি থাকে না অনেকের। ফলে বেঁচে যায় মিথ্যা মামলার বাদী। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অন্তত সাড়ে ৮ হাজার নারী নির্যাতনের মামলার রায় হয়। এর মধ্যে মাত্র ৫শ’ ২৭টি মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। বাকি মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পেয়েছেন। অধিকাংশ মামলায়ই এজাহারে উল্লেখিত ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এ হিসেবে অন্তত ৭০/৮০ ভাগ মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলেও মিথ্যা মামলার দায়ে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা বিরল।
মৃত্যুদণ্ডে কমছে না ধর্ষণ ও মিথ্যা মামলা
আইনের ফাঁক গলে প্রকৃত আসামি বেরিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গতবছর ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ এর ৯(১) ধারায় অধ্যাদেশর মাধ্যমে সংশোধনী আনা হয়। আইনে ধর্ষণ, ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যুর শাস্তি ইত্যাদি প্রসঙ্গে ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। কিন্তু ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে যাবজ্জীবনের স্থলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়।
২০০০ সালে জারি করা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’র ৩৪টি ধারার মধ্যে ১২টি ধারাতেই বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ ও মানব পাচার সংক্রান্ত দু’টি আইনের অংশ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর এই আইন থেকে মৃত্যুদণ্ড বাদ দেয়া হয়। বাদ দেয়া সেই অংশটি জুড়ে দিয়ে গতবছর অক্টোবরে সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। বাস্তবতা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হলেও কমেনি নারী ও শিশু ধর্ষণ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র সাধারণ সম্পাদক নূর খান লিটন বলেন, কঠোর শাস্তির বিধান করা হলেই অপরাধীরা নিবৃত হবে সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। মাসলম্যানদের দৌরাত্ন্য,ক্ষমতার দাপট,টাকার জোর এবং রাজনৈতিক কারণে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই কঠোর শাস্তি অপরাধীদের মনে কোনো ভীতির সৃষ্টি করছে না। তার মতে, ধর্ষণের মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে মিথ্যা মামলার সাজার মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে। সমাজ ও পরিবারেরও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
কঠোর বিধান নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ নিবৃত করতে না পারলেও নিরীহ মানুষদের মামলা দিয়ে ফাঁসাতে আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে অহরহ। প্রাথমিক অনুসন্ধান ছাড়া থানা-পুলিশ এখন নির্যাতন এবং ধর্ষণের মামলা গ্রহণ করছে না। কিন্তু যেনতেনভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ এনে একটি নালিশী মামলা যদি আদালত ‘এজাহার’ হিসেবে গণ্য করে এবং পুলিশকে তদন্ত করতে দেয় আর তাতেই আসামির রক্ষা নেই। তিনি দোষী কিংবা নির্দোষ যা-ই হোন গ্রেফতার হলে সহজে জামিন মিলছে না। অর্থাৎ হয়রানির মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন।
ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় শাস্তি বাড়ানোর অভিমত
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের মতে, যেহেতু ধর্ষণ মামলার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে, তাই ধর্ষণের মিথ্যা মামলা হলে এর সাজাও বাড়াতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে মিথ্যা মামলার সাজা কি হয়। যারা ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করবে এবং তা যদি আদালতে প্রমাণ হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাবজ্জীবন সাজার বিধান রাখলে এ প্রবণতা কমে আসবে। বিদ্যমান আইনে মিথ্যা অভিযোগে মামলার যে সাজা তা একেবারেই নগণ্য। তাই মিথ্যা মামলার সাজাও বাড়ানো উচিৎ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতে, ধর্ষণের ৭৫-৮০ শতাংশ মামলাই মিথ্যা হয়। মিথ্যা মামলার প্রবণতা কমাতে হলে এসব মামলাকারীদের উপযুক্ত সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। মিথ্যা মামলার সাজা আরও বাড়াতে হবে। মিথ্যা মামলা করলে যে শাস্তি ভোগ করতে হয় সে বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে। এত মামলাকারীরা সতর্ক হবে।
একই বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মামলা মিথ্যা হলে বিচারকাজ করতে আদালতের বেগ পেতে হয়। তাই তাৎক্ষণিক আদেশ দিয়ে মিথ্যা মামলার শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা কমে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।