পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : বদ মানে খারাপ, আর রুল মানে আইন। বাংলা ব্যাকরণের সন্ধিতে এই হলো বদরুল। নার্গিস বেগম খাদিজা ক্ষমা করো বোন। ওই বদ-রুল তোমার ওপর যে নিষ্ঠুর-নির্মম-পৈচাশিকতা করেছে সে দায় আমাদের সবার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই নৃশংসতার ভিডিও প্রচার না হলে হয়তো বদরুলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ কেউ বিশ্বাসই করত না। যাদের ছাতার নিচে বদরুলরা বেড়ে উঠেছে তাদের হাত লম্বা। এ সমাজ নীতিহীন এই রাজনীতি বদরুলদের সৃষ্টি করেছে। তোমার সহপাঠীসহ সারা দেশের কোটি মানুষ বদরুলের ফাঁসি চাইলেও ঠিকই বদরুলেরা পার পেয়ে যাবে। তুমি হাসপাতালে; অথচ যারা দেশে নারী স্বাধীনতা-নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার এজেন্সি নিয়ে ডলার-পাউন্ড কামাচ্ছে তারা নীরব। কারণে-অকারণে তারা পথে নামেন; নারীর সমঅধিকারের দাবি তোলেন। এখন তাদের রহস্যজনক নীরবতাই জানান দেয়Ñ ওরা নারীর প্রতি সহানুভূতিশীলের বদলে এনজিওর নামে বিদেশি অর্থ ছাড়ের প্রতি বেশি মনোযোগী। তনু, মিতু, আফসানা, রিশা আর নিতুর ওপর মর্মান্তিক ঘটনার পরও তাদের ‘শব্দ করতে’ দেখা যায়নি। তোমার রক্তাক্ত শরীরের জখম বলে দেয় দেশে নারীর ওপর বর্বর হামলার ঘটনা বেড়েই চলছে। অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা প্রকাশ্যে অসহায় নারীদের চাপাতি দিয়ে কোপাতে দ্বিধা করছে না। উদ্বেগজনক এই বর্বরতা নিয়ে সাধারণ মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও নারীর ক্ষমতায়নে প্রাণপাত করা নেত্রীরা আছেন ঘুমিয়ে।
খাদিজা ৩ অক্টোবর তোমার জীবনে বিভীষিকার দিন। পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই বাড়ি ফিরবে বলে মা’কে কথা দিয়েছিলে। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হলেও এখনও বাড়ি ফেরা হয়নি। বখাটে বদরুলের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে তুমি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে। মিডিয়ায় তোমার এ খবর প্রচার হওয়ার পর টুইটার, ব্লগ, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তোমাকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে গেছে। মানুষ তোমার জন্য মিলাদ পড়িয়েছে দোয়া করেছে। তোমাকে দেখতে হাসপাতালে মানুষ ভিড় করেছে। সাধারণ মানুষ অন্তর থেকেই চায় তুমি সুস্থ হয়ে উঠো। কিন্তু তোমার এই করুণ পরিণতিকে পুঁজি করে কিছু নারী নেত্রী রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে গিয়ে তারা সেলফি তুলে ফেসবুকে দেন। এ যেন ভয়ঙ্কর বিলাসিতা! মানুষের প্রাণ নিয়ে রসিকতা। তোমাকে নিয়ে সর্বত্রই বিতর্ক-আলোচনা-তর্ক এবং মিডিয়া কভারেজে তুমি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তোমার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন শুধু নয়, দেশের কোটি কোটি মানুষ টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে তোমার সর্বশেষ অবস্থা জানার চেষ্টা করছেন। সেকি উৎকণ্ঠা! তুমি যখন চোখ মেলে তাকিয়েছে তখন কি আনন্দ।
খাদিজা তোমার এ পরিণতি বিচ্ছিন্ন ঘটনার ফসল নয়। গত ২০ মার্চ কুমিল্লায় সংরক্ষিত এলাকায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তনুকে কে বা কারা হত্যা করলো তা এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। অথচ তার হত্যাকারীর বিচারের দাবির আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সমগ্র দেশ। গত ৫ জুন চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (বর্তমানে বরখাস্ত) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে-গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যাকা-ের রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। গত ১৩ আগস্ট প্রাণ হারান রাজধানীর মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী আফসানা ফেরদৌসের। এ ঘটনার জন্য তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবীনকে দায়ী করা হয়। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে হত্যা করা হয়। আর ১৮ সেপ্টেম্বর প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রী নিতু ম-লকে কুপিয়ে খুন করে মিলন নামের এক বখাটে। এই যে হত্যাকা-গুলো ঘটলো তার একটি (বাবুলের স্ত্রী মিতু) ছাড়া সবগুলো ছাত্রী এবং একতরফা প্রেমজনিত। প্রেমজনিত কারণে সবাইকে ছুরি-চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়। প্রশ্ন হলো হৃদয়ের ব্যাপার হলো প্রেম। সেই প্রেম কি চাপাতি-দা-ছুরি দিয়ে আদায় করা যায়? খাদিজা তুমি কিছুটা ভাগ্যবান এখনো বেঁচে আছো; কিন্তু ওদের সবাইকে একপক্ষীয় পাষ- তথাকথিত প্রেমিকের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
এই যে এতগুলো ছাত্রী প্রাণ হারালো। খাদিজার জীবন এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এসব ঘটনায় দেশের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠলেও দেশের প্রভাবশালী নারী নেত্রীরা নীরব। আশির দশক থেকে যে নারী নেত্রীরা দেশে নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার নাম করে বিদেশ থেকে লাখ লাখ ডলার, পাউন্ড নিয়ে আসছেন। ওইসব অর্থ নিজেদের ভোগ-বিলাসে ব্যয় করে মাঝে মাঝে শুধুই লোক দেখানো বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। রাজপথে নারীর অধিকারের দাবিতে মিছিল করছেন। শালীন পোশাক এবং হেজাব, বোরকা পরে ছাত্রী ও মা-বোনদের চলাফেরা করার উপদেশ দিলে ওই নেত্রীরা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন। সমাজের মুরুব্বী, পিতা-ভাই বা স্কুলের শিক্ষক ছাত্রীদের আঁটোসাঁটো পোশাক পরিহার করে শালীন পোশাক পরার পরামর্শ দিলেই ‘গেলে গেল মৌলবাদে দেশ ভেসে গেল’ জিকির তোলেন। নারীর অধিকারের ধুয়া তুলে মাঝে মাঝে রাজপথে নারী নেত্রীরা নৃত্য করেন। তাদের কাছে নারী স্বাধীনতার মানে যেন মেয়েদের তথাকথিত প্রগতিশীল হওয়া, আঁটোসাঁটো পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো। ভিনদেশি ভাইফোঁটা, রাখি পরানোর সংস্কৃতি চর্চার করা। দেশে যৌতুকের বলি হচ্ছেন গ্রামের গরিব ঘরের মেয়েরা। কোনো নারী নেত্রী যৌতুকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ দূরের কথা এ শব্দটিই উচ্চারণ করেন না। তাহলে নারী নেত্রীদের কাজ কি শুধু দেশের নারীদের দুরবস্থার চিত্র বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে এনজিওর ব্যানারে ডলার-পাউন্ড নিয়ে এসে ভোগ-বিলাসে ব্যয় করা? গত ৯ অক্টোবর বাংলা ভিশনের এক টকশোতে প্রখ্যাত চিন্তক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, আশির দশক থেকে নারী নেত্রীরা এনজিওর মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা আনেন দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তারা বিদেশি টাকা এনে কার্যত নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে নারীদের সাধারণ মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তাদের আন্দোলন দেশের নারী সমাজের কোনো উপকারে আসেনি।
প্রতিটি সেক্টরে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে নারীর আধিক্য বেড়ে গেছে। সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। এনজিওর মাধ্যমে গ্রামের মেয়েদের চালাক-চতুর করার প্রকল্প চলছে। ঢাকায় কর্মরত স্বামীরা অফিস থেকে ঘরে ফিরে যাতে হাঁড়ি-পাতিল ধুইয়ে গৃহকাজে সহায়তা করতে বাধ্য হন সে দিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এনজিওর এসব প্রকল্পের মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে; স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সুখের সংসার ভাঙছে। ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ প্রবাদ যেন মাঠে মারা গেছে। শিক্ষাবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, নাগরিক জীবনে অধিকাংশ পরিবারে স্বামী-স্ত্রী চাকরি করায় ছেলেমেয়েরা কাজের লোকের কাছে থেকে বেড়ে উঠছে। তারা বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত আদর-¯েœহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বড় হয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা অস্বাভাবিক হচ্ছে। সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। প্রখ্যাত ওই শিক্ষাবিদের এ উপলব্ধি ভেবে দেখার মতো। প্রখ্যাত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন ‘মেয়েদের বেশি বুদ্ধি ভালো নয়/বেশি বুদ্ধির মেয়েরা কখনো সুখী হয় না/ সংসারে যে মেয়ের বুদ্ধি কম সে তত সুখী’। চিকিৎসকরা সফল হোক, খাদিজা বেঁচে উঠুক! ফিরে আসুক একদম আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে। চিকিৎসকদের চেষ্টা আর দেশবাসীর দোয়া ও শুভ কামনা রয়েছে। খাদিজা চোখ মেলেছে, আমরা এখন তোমার উঠে দাঁড়ানোর অপেক্ষায়!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।