পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়া হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভারতের মতো চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে। কিন্তু ভারতেরটা নিয়ে যত আলোচনা হয়, চীনেরটা নিয়ে তত আলোচনা হয় না। যদিও এই দুই দেশ থেকে বেশি আমদানি করে বাংলাদেশই লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে চীনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশ। যেখানে দেশের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসছেন, সে সময় বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে ২০টির কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে একটি চীনকে দেয়া হবে। ‘বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব : প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, সাবেক সেনা প্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ, বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বুলবুল, ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা না থাকায় বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। অনেক দেশ বাংলাদেশকে বাজার সুবিধা দিলেও অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মতামত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনীতিতে মত ও পথের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাইকে একমত হতে হবে। তাহলে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। দেশও লাভবান হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও রাশিয়াসহ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে। চীনের সঙ্গে এ সম্পর্ক এখন সুউচ্চতায় রয়েছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তারা এক নম্বর বন্ধু। প্রায় শতভাগ পণ্যে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি। আমরাও বিলিয়ন ডলারের আমদানি করছি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। অনেক দেশে আমরা কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছি। তাই চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে একটু আস্তে ধীরে এগুচ্ছি। তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে চীনে রফতানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে এ সময়ে রফতানিতে জাতীয় গড় প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেক বাড়বে। দেশটির প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে সেই পথ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। চীনা ঋণের সুদহার প্রসঙ্গে বলেন, চীনা ঋণের একটি অসুবিধা রয়েছে। তা হলো এই ঋণ আনসলিসিট (টেন্ডারবিহীন)। এক্ষত্রে সরকার দ্বিপাক্ষিক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে। আগামী ১৫ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেলপথ নির্মাণ, পূর্বাচলে ট্রেড ফেয়ার সেন্টার ও গার্মেন্টস পল্লী নির্মাণসহ একাধিক চুক্তি হবে বলে তিনি জানান।
ড. সাদিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখনও চীন থেকে শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে। সেটি হতে পারে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্ব। কিভাবে চীনের বিনিয়োগ এদেশে বাড়ানো যায় এ মুহূর্তে সেটিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এর জন্য রফতানি বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চীনকে এদেশের বহুমুখী বিনিয়োগেও নিয়ে আসতে হবে। কারণ তারা শুধু অস্ট্রেলিয়া ও ইউএসএসই ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করছে। এর ১ শতাংশও যদি বাংলাদেশে আসে। তাহলে দেশের অর্থনীতি সীমাহীন উচ্চতায় পৌঁছাবে। সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। কেননা মেধাস্বত্ত্ব এবং কারিগরি জ্ঞানে তারা যথেষ্ট উন্নত। এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। পদ্মা সেতুর মত আরো বড় বড় প্রকল্পে চীনকে পাশে পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, চীনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। প্রাপ্তিও আছে। তাই ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের জলে-স্থলে ও অন্তরীক্ষে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।
সাংবাদিক নেতা মনজুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ব্যবসা এবং রাজনীতি এখন হাত ধরাধরি করে চলে। অর্থনীতির স্বার্থেই আমাদের এই বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে নজর দিতে হবে। সেটি করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। কোনো পদক্ষেপে দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ হয় এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নিবে না সেটিই সবাই আশা করে। বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, চীনের সঙ্গে সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে বিসিআইএম করিডোরের বাস্তব রূপায়ণ। চীনের বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তাও বাংলাদেশের জন্য কার্যকরী। তবে চীনের ঋণ সহায়তার শর্ত একটু জটিল। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার প্রবন্ধে বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান এই অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ‘টেস্ট কেস’ হবে। কারণ আমরা যদি চীনের ১ শতাংশ বাজারও ধরতে পারি তাহলেও আমাদের রফতানি ১৭ বিলিয়নে পৌঁছানোর কথা। তিনি বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপনে ভিন্নতার কথাও তুলে ধরেন এবং পরামর্শ দেন আগের সম্পর্কগুলো নতুন করে স্থাপন করার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।