পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১১ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘ এ সময়ে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের তদন্তে ‘চার আনাও’ অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, হত্যাকা-টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হলেও খুনিরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বলা যায়, অনেকটা অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব বলছে, ‘বলার মতো কোনো অগ্রগতি এখনো নেই। তদন্ত চলছে। এ হত্যাকা-টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। খুব দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে বলেও আশাবাদী সংস্থাটি।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকা-ের রহস্য অতি শিগগিরই উদঘাটন হবে এবং হত্যাকা-ের অবশ্যই বিচার হবে।
গতকাল বুধবার জয়পুর হাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসক মো. আব্দুর রহিমের সভাপতিত্ব এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে নিহত স্বজনদের অভিযোগ, উপর মহলের চাপে আসামিদের আটক করছে না র্যাব। এ হত্যাকা-ের পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে। তাদের ইশারায় সবকিছু হচ্ছে। যার কাছে সরকারও নত।
র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। র্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। উল্লেযোগ্য অগ্রগতি এখনো নেই। পেলে অবশ্যই মিডিয়াকে জানানো হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি র্যাব। তবে আদালতের নির্দেশে প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে আসছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব সদর দফতরের তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে র্যাব। ৩৯ বারের মতো ফের সময় চাওয়া হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএম ইউনুস খানের আদালত আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিলে দিন ধার্য করেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের কোনো এক সময় পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ভাড়া বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।
সেদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। সেখানে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
হত্যাকা-ের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। চারদিন তদন্তের পর চাঞ্চল্যকর হিসেবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দুই মাসে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে উচ্চ আদালত মামলাটি র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। বর্তমানে র্যাবের ইনভেস্টিগেশন শাখা হত্যাকান্ডটি তদন্ত করছে।
এদিকে র্যাবের তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে হত্যার আগে তাদের বিষ অথবা নেশা জাতীয় কিছু পান করানো হয়েছিল কিনা- তা পরীক্ষার জন্য ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল কবর থেকে লাশ উঠানো হয়। কিন্তু শেষমেশ এ ধরনের কোনো আলামতও পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত ছুরি ও হাত-পা বাঁধার রশিসহ বিভিন্ন আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন ২১ জন এবং গ্রেফতারকৃতদের ডিএনএ এর নমুনাও পাঠায় র্যাব। সেই পরীক্ষার রিপোর্টও পেয়েছে তারা। তারপরও কোনো আসামিকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। তদন্তের স্বার্থে পরীক্ষার বিষয়ে মুখ খুলেনি র্যাব। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগর-রুনির স্বজনরা।
ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে সাগর সরোয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘বিচার পাব না। উপরের চাপ থাকলে বিচার পাওয়া যায় না। র্যাব পারে না এমন কিছু নেই। তারা চাইলে আসামিদের আটক করতে পারে। কিন্তু তারা করবে না। কারণ এ হত্যাকান্ডের পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে। তাদের ইশারায় সব কিছু হচ্ছে। যার কাছে সরকারও নত। তাই সরকারও তার কাছে হিমশিম খাচ্ছে।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে র্যাবের এ দাবির প্রতিক্রিয়ায় সালেহা মনির বলেন, ‘চার বছর থেকে তারা একই কথা বলে আসছে। চার বছরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেনটি আদালতে জমা দিতে পারেনি। তাহলে তো বুঝাই যায় তারা কতটা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘র্যাবের তদন্তে আমরা হতাশ। তদন্ত নিয়ে আমাদের চরম সন্দেহ রয়েছে, আদৌ তদন্ত হচ্ছে কিনা। র্যাব চার বছর ধরে একই কথা বলছে, তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা দোষীদের চিহ্নিত করতে পারল না।
র্যাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝে-মধ্যে করে। তবে হতাশার বিষয় হলো তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে, সেটাও র্যাব আমাদের জানায়নি। মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বর্তমানে মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতিও আমরা জানি না।
স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাদের অভিযোগ সঠিক নয়, কারো নির্দেশে কাজ করছি না। আমরা স্বাধীনভাবে তদন্ত করছি। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।