পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
# গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে সন্দেহভাজন ১১ জন নিহত : আশুলিয়ায় জেএমবি’র অর্থদাতার মৃত্যু
ইনকিলাব ডেস্ক
গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন ১১ ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে। এছাড়া ঢাকার আশুলিয়ায় অভিযানকালে ৫ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এক ‘জঙ্গি’র মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে র্যাব। পুলিশ ও র্যাব জানায়, গতকাল জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৃথক অভিযানে গাজীপুরের হাড়িনালের পশ্চিমপাড়ায় ২জন ও নোয়াগাঁও এলাকার পাতারটেকে ৭জন নিহত হয়েছে। আর টাঙ্গাইলে অভিযানে নিহত হয়েছে আরো ২ জন।
গাজীপুরে নিহত ৯
টঙ্গী থেকে সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে র্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে নব্য জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম আকাশসহ ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে গাজীপুরের নোয়াগাঁও পাতারটেক এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় সাত জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুই পুলিশ সদস্য। সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগান এলাকায় একতলা একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব-১। এ অভিযানে আরো দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। এই অভিযানে নিহত দুই জঙ্গির নাম রাশেদুল ও তৌহিদুল বলে পুলিশ জানায়।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ফরিদুল ইসলাম আকাশের নেতৃত্বে জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ওই এলাকায় প্রফেসর ওসমানের দ্বিতীয় তলার একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই বাড়ির নিচতলায় কিছু ভাড়াটিয়া ছিলো, এসময় তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের আত্মসমর্পন করার আহ্বান জানানো হয়। এতে তারা সাড়া না দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এরপর থেমে থেমে পুলিশ ও জঙ্গিদের গোলাগুলি চলতে থাকে। তিনি বলেন, সকাল ১০টার পর থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রফেসর ওসমানের মালিকানাধীন ওই দোতলা বাড়িতে অভিযান শুরু হয় এবং বিকাল সাড়ে ৩টায় শেষ হয়। অভিযান শেষে জঙ্গি আস্তানা থেকে সন্দেহভাজন সাত জঙ্গির লাশ উদ্ধার করা হয়। নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতেই ওই বাড়িতে অভিযান চালায় বলে জানান ‘সিটিটিসি’ ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর এই আকাশই নেতৃত্ব দিয়ে নব্য জেএমবিকে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ওই বাড়িতে আকাশসহ তার সহযোগিরা অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়েই পুলিশ সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, অভিযানের শুরুতে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে উল্টো পুলিশের ওপর গুলি চালায়। পুলিশও আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছে। অভিযান শেষে ভবনের দ্বিতীয় তলায় সাত জঙ্গির লাশ পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে, গতকাল শনিবার ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগান এলাকায় একতলা একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব-১। এ অভিযানে রাশেদুল ও তৌহিদুল নামে দুই জঙ্গি নিহত হন।
র্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডর মহিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগান এলাকায় আতাউর রহমানের এক তলা একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এরা হলেন, রাশেদুল ও তৌহিদুল। র্যাবের মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার মাহমুদ বলেন, গাজীপুরের ওই বাড়িতে ভাড়া নেওয়ার সময় মালিককে যে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে এদের নাম জানা গেছে। এসময় ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে একে-২২ বোরের একটি রাইফেল, তিনটি চাপাতি, দু’টি ল্যাপটপ ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলে ২ জন নিহত
এদিকে আমাদের টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, শহরের কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। র্যাব বলছে, সেখানে দু’জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। র্যাব-১২-এর তিন নম্বর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকীর ভাষ্য, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়িটিতে সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালানো হয়। ভেতরে ঢোকার পর এক ‘জঙ্গিকে’ গ্রেপ্তার করতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় অন্য ‘জঙ্গিরা’ র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার চেষ্টা চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে দুই ‘জঙ্গি’ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। বেলা দেড়টার দিকে বোমা বিশেষজ্ঞ দলকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে র্যাবের দল। এরপর তারা লাশ দুটি বের করে নিয়ে আসে। এখন লাশ টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘর থেকে একটি পিস্তল, একটি রিভলবার, ১০টি চাপাতি, দুটি ছুরি ও ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে।
ওই বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আজাহার উদ্দিন বলেন, ছাত্র পরিচয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। এ সময় তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে বলে দু’এক দিনের মধ্যে দিয়ে দেবে।
আশুলিয়ায় পৃথক অভিযানে তিন জঙ্গি আটক, আহত একজনের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পৃথক অভিযানে তিন জঙ্গিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধার করেছে অস্ত্র, গুলি ও জেহাদি বইসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নগদ টাকা। আহত এক জঙ্গি হাসপাতালে মারা গেছে। তার নাম আব্দুর রহমান আইনুলের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়।
র্যাব এর লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর মুফতি মোহাম্মদ জানান, নব্য জেএমবির অর্থদাতা আব্দুর রহমান ওরফে নাজমুল হক ওরফে আইনুল হক স্বপরিবারে আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছেন বলে গোপন সংবাদ পায় র্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর কয়েকটি টিম শনিবার দুপুরের পর আশুলিয়ার বাইপাইল বসুন্ধরার টেক এলাকার আমীর হোসেন শাহীন মৃধার ৫তলা বিশিষ্ট ভবন ও ভবনের আশপাশে অবস্থান নেয় তাকে আটক করতে। এসময় আব্দুর রহমান র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫ তলার বেলকুনির জানালার গ্রীল কেটে কৌশলে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে যায়। পরে র্যাব সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে সে মারা যায়।
পরে র্যাব-৪ এর একাধিক টিম ওই ভবনের ৫তলায় অভিযান পরিচালানা করে আব্দুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমি ও তিন শিশু সন্তানকে আটক করে। এছাড়া কক্ষের ভিতরে তল্লাশী চালিয়ে নগদ ৩০ লাখ টাকা, বিদেশী পিস্তল, মোবাইল জ্যামার, জিহাদি বইসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদী উদ্ধার করে। এছাড়া এসময় ওই বাড়ির কেয়ারটেকার তারেক মিয়াকেও আটক করে র্যাব। তারেক বাড়ির মালিকের শ্যালক।
অপরদিকে, আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকার শনিবার দুপুরে আহাদ রানার ৫ম তলা ভবনের একটি কক্ষ হতে জুয়েল রানা (২৮) ও সোহাগ (৩০) নামের দুইজনকে আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সহযোগিতায় আশুলিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যদের সহায়তায় আশুলিয়া থানা পুলিশ পলাশবাড়ি এলাকার আহাদ রানার বাড়ির ৫ম তলা ভবনের একটি কক্ষ হতে জুয়েল রানা ও তার সহযোগি সোহাগ নামে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় ওই কক্ষ হতে ইউএস আর্মি লেখা একটি বিদেশি রিভলবার সহ বিপুল পরিমান জিহাদি বই উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই বাড়ির পরিবারের সদস্যরা জানান, কিছুদিন আগে যুবলীগ নেতা জুয়েলের পরিচিত হিসেবে সোহাগ ও তার সাথে উঠতি বয়সের দুই মহিলা ৪র্থ তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। ওই কক্ষে নিয়মিত জুয়েল আসা যাওয়া করতো। কক্ষটি থেকে সোহাগকে ও জুয়েলকে আটক করা হয়। তবে রহস্যজনকভাবে ওই দুই মহিলা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এদিকে জেএমবি সন্দেহে আটককৃত সোহাগকে নিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা তার দেয়া তথ্যানুযায়ী বাইপাইল বসুন্ধরা এলাকায় আমীর মৃধার ৫তলা বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।