Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রদন চাহি না

প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমাম হুসাইন (রা.) স্বীয় দলবল নিয়ে লক্ষ্যহীনভাবে এগিয়ে চলেছেন
একে এম ফজলুর রহমান মুনশী : ইমাম হুসাইন (রা.) স্বীয় দলবল নিয়ে লক্ষ্যহীনভাবে এগিয়ে চলেছেন। না কুফার পথে তিনি পা বাড়াতে পারছেন, না মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারছেন, এক সমূহ অনিশ্চিতের দিকে এগিয়ে চলেছেন। এ সময় দেখা গেল কুফার দিক থেকে কয়েকজন আরোহী এদিকে ছুটে আসছে। ইমাম হুসাইন (রা.) মনে করলেন হয়ত লোকগুলো তার সমর্থক হবে। আগন্তুক দল কাছে আসলে শোনা গেল, তাদের উট চালাচ্ছে এবং এই গান গাইছে, “হে আমার ভার বহনকারী বন্ধু! তুমি আমাকে ভয় পেয়ো না। সূর্য ওঠার পূর্বেই তুমি অত্যন্ত সাহসের সাথে পুণ্যবান আরোহী নিয়ে মঙ্গলকর সফরে এগিয়ে যাও। যতক্ষণ না তুমি স্বাধীনচেতা, মহৎ হৃদয়ের অধিকারী শ্রেষ্ঠ কুলোম্ভব মহানবুজুর্গের সান্নিধ্যে পৌঁছতে সক্ষম হও। দয়াময় আল্লাহ পাক তাকে মঙ্গল কাজের জন্যই নিয়ে এসেছেন, এই মঙ্গলময় মাসেই তিনি চিরকাল অ¤œান থাকবেন।”
লোকগুলা কাছে আসলে হোর বললো, এরা আপনার সমর্থক কিন্তু আমি তাদের বন্দি করে নিয়ে যাবো। ইমাম হুসাইন (রা.) বললেন, “হোর! তুমি যদি তাহা কর তাহলে আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করতে বাধ্য হব।” একথা শুনে হোর নীরব হয়ে গেল এবং লোকগুলোকে ইমাম হুসাইন (রা.) এর খেদমতে পাঠয়ে দিল। এই দলের সর্দার তোরমাদ বিন আদীকে ইমাম হুসাইন (রা.) কুফার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলেন। তোরমাদ উত্তর করলো, “হযরত! ঘুষ ও উপঢৌকনের থলি দিয়ে কুফার সর্দারগণকে বশীভূত করা হয়েছে। তাদের অস্ত্র আপনার বিরুদ্ধে উত্তোলিত হবে। সেখানে যারা আপনার কথা মুখে বলে বেড়ায় সময়ে আপনার শত্রুদলে মিশে যাবে। মূলত তারা সকলেই আপনার দুশমন। ইবনে যিয়াদ কুফায় অজস্্র সৈনিক মোতায়েন করে রেখেছে। কোন ক্রমেই আপনি তাদের পরাভূত করতে পারবেন না। বরং আপনি আমার সঙ্গে চলুন। আমি আপনাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবো যা দুর্গের ন্যায় পাহাড় শ্রেণী দ্বারা পরিবেষ্টিত। আমরা বিভিন্ন যুদ্ধের সময় বহুবার সে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছি, কিন্তু কখনো পরাজিত হইনি। চলুন, সে স্থান আপনার জন্য খুবই নিরাপদ। আপনি অতি সহজে সেখান হতে তার লোকদের আপনার পক্ষে আহবান জানাতে পারবেন। তাদের সকলেই নিপুণ যোদ্ধা ও বীর। তাদের সহায়তায় আপনি আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবেন।
তোরমাদের কখাগুলো ইমাম হুসাইন (রা.) মনোযোগ সহকারে শুনলেন এবং বললেন, “প্রিয় বন্ধু! আপনার আন্তরিকতা ও সহৃদয়তার বিনিময় আল্লাহপাক আপনাকে দান করুন, কিন্তু আমি হোরের সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছি তা ভঙ্গ করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। আল্লাহপাকই ভাল জানেন, আমার ভাগ্যে কী রয়েছে। তবে যতক্ষণ সম্ভব অঙ্গীকার পালন করে যাবার চেষ্টাই আমি করবো। তোরমাদ যখন দেখলেন সত্যের অতন্ত্র সৈনিক পরম সত্যকে ধারণ করেই থাকবেন, তখন বললেন, ‘হযরত! আমি আবার আপনার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রত্যাগমন করবো। আপনার জন্য কিছু রসদপত্র সংগ্রহ করার জন্য আমাকে অবশ্যই ফিরে যেতে হচ্ছে।” এই বলে তোরমাদ সুদূর মরুপথ বেয়ে চলে গেলেন। তিনি যখন রসদপত্র নিয়ে ফিরে আসলেনÑ তখন শুনতে পেলেন ইমাম হুসাইন (রা.) শত্রু হস্তে শাহাদাৎ বরণ করেছেন। মূলত এই সংবাদই ছিল মিথ্যা? তবু কুফার অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে সহৃদয় তোরমাদ সে খবরকে সত্য বলে মনে করে নিয়েছিলেন। সত্য মিথ্যা যাচাই করার মতো অবকাশ তার ছিল না।
শ্রান্ত, ক্লান্ত, অবসাদ ভারাক্রান্ত শত্রু কর্তৃক পরিবেষ্টিত কাফেলা নিয়েই ইমাম হুসাইন (রা.) কসরে বনী মাকাতেল নামক স্থানে উপনীত হলেন, তখন কেমন যেন তার সর্বাঙ্গ শিথিল হয়ে আসতে লাগলো। তিনি সওয়ারীব পিঠে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। এমন সময় তিনি স্বপ্নে দেখলেন একজন আগন্তুক দ্রুতগামী অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করে তার কাছ দিয়ে চলে যাচ্ছেন এবং বলছেন “এই সকল লোক অজানার উদ্দেশে পথ চলছে অথচ মৃত্যু তাদের পাশাপাশি অগ্রসর হচ্ছে।” এই কথা বলে আগন্তুক শূন্যে মিলিয়ে গেল। ইমাম হুসাইন (রা.)-এর তন্দ্রা চলে গেল। তিনি নি¤œকন্ঠে বার বার উচ্চারণ করতে লাগলেন, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” এমন সময় ইমাম আলী আকবর তাঁর কাছে চলে আসলেন এবং বললেন, আব্বাজান! কী সংবাদ! আপনি বার বার কেন ইন্না লিল্লাহি পাঠ করছেন? তখন বিষণœ কন্ঠে ইমাম হুসাইন (রা.) বললেন, বৎস! আমি এই মাত্র স্বপ্নে দেখলাম, একজন আরোহী আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে এবং বলে যাচ্ছে এই লোকগুলো পথ চলছে আর মৃত্যু তাদের পাশাপাশি হানছানি দিচ্ছে। খুব সম্ভব এটা আমাদের মৃত্যু সংবাদ। আমাদের ভাগ্যে শাহাদাতের অমৃত পান করার তওফিক দান করেছেন? পিতার কথা শুনে বালক ইমাম আলী আকবর (রা.) নীরবে কী যেন চিন্তা করতে লাগলেন। চিন্তার অথৈ সাগর পাড়ি দিয়ে চিন্তাহীন শান্তির রাজ্যের অধিশ্বর আল্লাহ পাকের দরবারে চলে গেলেন তিনি। তবে কি নিয়ে আসলেন, তা বুঝা গেল না। কিন্তু মুখ ফুটে বললেন “আব্বাজান! আমরা কি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নই? প্রত্তুত্তরে ইমাম হুসাইন বললেন, আমরা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি এবং থাকবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রদন চাহি না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ