Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশা জাগাচ্ছে পুঁজিবাজার

প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : সর্ববিনাশী পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য আবার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। গভীর খাদ থেকে ওঠার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে খাতটি। পারিপার্শ্বিক সকল অনুঘটকও রয়েছে অনুকূলে। সময় এখন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই বাজারে প্রবেশের; আর নিজের হারানো পুঁজি বের করে নিয়ে মুনাফা অর্জনের।
ইতোমধ্যেই এই পথে এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা। পাল্টে যেতে শুরু করেছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর গত ৫ বছরের চিত্র। এতদিন হাউজগুলোতে প্রতিদিন বিও হিসাব বন্ধের হিড়িক ছিল। তবে গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন শত শত নতুন বিও হিসাব খোলা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক আমানতের সুদের হার শেয়ারবাজারের অন্যতম নিয়ামক। ব্যাংকে আমানত রেখে মোটামুটি মুনাফা পেলে ছোট পুঁজির মালিকরা শেয়ারবাজারে ঝুঁকি নিতে চান না। কিন্তু ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমে মূল্যস্ফীতির কাছাকাছি বা নিচে নেমে গেলে তখন শেয়ারবাজারমুখী হন তারা। কারণ, মূল্যস্ফীতি সুদআয় খেয়ে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হন আমানতকারীরা।
বর্তমানে আমানতের গড় সুদ হার ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এখন কেউ যদি ব্যাংকে ১শ’ টাকা আমানত রাখেন এক বছর পরে ৫ টাকা ৪৮ পয়সা সুদ পাবেন। আর ততদিনে টাকার মান কমে যাবে ৫ টাকা ৫৩ পয়সা। অর্থাৎ, প্রতি ১শ’ টাকা আমানতে ক্ষতি হবে ৫ পয়সা। তাই এখন আর ব্যাংকে আমানত রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন কারণ দেখছেন না ক্ষুদ্র পুঁজির মালিকরা, যেখানে ব্যাংক সুদের তুলনায় গড়ে ৫০ গুণ বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানিগুলো। আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারেও। গত পনের দিনেই সাড়ে তিন হাজার নতুন বিও হিসাব খুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে আসা প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজার ভাল না হলে এখানে নতুন বিনিয়োগকারীদের আসার কথা না। এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এটা পুঁজিবাজারের ভাল লক্ষণ। আর তা দেখে পুরনো বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে আসছেন।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের গত দুই যুগের অভিজ্ঞতা বলে, নতুন বিও হিসাবধারীরা ব্যাংকে জমানো অর্থ তুলে এনে এখন বিনিয়োগ করবেন শেয়ারবাজারে। এতে ক্রমেই উপরের দিকে উঠবে পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক। এই সূচক উপরে ওঠা শুরু করলে বাড়তে শুরু করবে ব্যাংকের সুদ হারও। গতি আসবে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে। তবে মুনাফার পাশাপাশি ঝুঁকিরও শুরু হবে এখান থেকে। আগের দুইবারের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ‘নির্বুদ্ধিতার’ পরিচয় দিলে আবারও বাজারে বুদবুদ সৃষ্টি হয়ে ফেটে যাবে। আবারও পথে বসতে হবে তাদের। তাই এবার মাথা খাঁটিয়ে বাজারে প্রবেশের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। না হলে ছোট পুঁজির মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা অর্থনীতি।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকে মেয়াদী আমানতের তুলনায় শেয়ারবাজার থেকেই সব চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাওয়া সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানির মান বিবেচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যথায় লাভ না হয়ে লোকসানের সম্ভবনা থাকে। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ ধারণা নেয়া উচিত।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজার বর্তমানে বিনিয়োগের সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশে আছে। গত তিন বছর ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পুঁজিবাজার। প্রতিদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়ছে, সাথে সূচকের উত্থানও রয়েছে। তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির ব্যবসা ও লভ্যাংশ আশানুরূপ হারে বাড়ছে। ডিএসইর গড় মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ১৪-১৫ শতাংশে সীমিত আছে। পিই রেশিও যতদিন ১৫ এর ঘরে থাকে ততদিন বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের গড় বাজারমূল্য এসবের সম্পদমূল্যের মাত্র ১ দশমিক ৯১ গুণ। গড় প্রকৃত লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ইল্ড) ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, যেখানে দেশের আন্তঃব্যাংক লেনদেনে স্বল্পমেয়াদি সুদের হার গড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। শেয়ারবাজারে শুধু দেশী বিনিয়োগকারীদের অংশ্রহণ বেড়েছে তা নয়। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে ৬১৭ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান ইতিবাচক পরিবেশে বিনিয়োগকারীদের সাড়া আশানুরূপ না হলেও অনেকেই ঝুঁকেছেন শেয়ারবাজারের দিকে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশের দুই পুঁজিবাজারের লেনদেনে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। গত ৫ বছরের মধ্যে বাজারের সবগুলো সূচক বর্তমানে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শেয়ারবাজারের স্বচ্ছ কোম্পানিগুলো প্রায় সময়ই বড় ধরনের লভ্যাংশ দেয়। এ কারণে আরো আগেই বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হতে পারত শেয়ারবাজার। কিন্তু নিম্নমানের কোম্পানিগুলোর কারণে বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে আসতে ভয় পান।
ডিএসই’র হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্তি শীর্ষ (লভ্যাংশের দিক দিয়ে) ১০ দশটি কোম্পানি গড়ে ২৯৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। বিএটিবিসি ও গ্লাক্সো-স্মিথক্লাইন দিয়েছে ৫৫০ শতাংশ লভ্যাংশ, মেরিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ৪৫০ শতাংশ, বার্জার পেইন্টস ৩৭০ শতাংশ, বাটা সু ৩২০ শতাংশ, লিন্ডে বিডি ২০০ শতাংশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৩০০ শতাংশ, রেকিট বেনকিজার ৬৫০ শতাংশ, একমি ৩৫ শতাংশ, গ্রামীণফোন ৮৫ শতাংশ এবং ইভিন্স টেক্সটাইল ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ব্যাংক আমানতের উৎকৃষ্ট বিকল্প হওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে আরও ভালো ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল ইসলাম। তার মতে, ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে এসব কোম্পানি খারাপ বাজারেও নিজ নিজ শেয়ার দর ধরে রেখেছে। এ ধরনের কোম্পানির তালিকাভুক্তি যত বাড়বে, শেয়ারবাজারের আবেদনও তত বাড়বে।
পুঁজিবাজারে শত ইতিবাচক দিক থাকলেও ‘সুশাসনের অভাব’ থাকার অভিযোগ তুলেছেন অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা বাড়ানো দরকার। শেয়ারবাজারে লভ্যাংশ অনেক ভালো থাকলেও অনেক বিনিয়োগকারী ঝুঁকি মনে করে বিনিয়োগ করে না। আশানুরূপ হারে না হলেও অনেক বিনিয়োগকারীই এখন শেয়ারবাজারের দিকে ঝুঁকছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আশা জাগাচ্ছে পুঁজিবাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ