পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চিকিৎসকদের আশাবাদ : স্বপ্ন দেখছেন পিতা-মাতা
স্টাফ রিপোর্টার : খাদিজা বেগম নার্গিস হয়তো বেঁচে যাবেন এমনটাই আশা করছেন স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার থেকে অচেতন খাদিজা এখনো চোখ মেলে তাকাননি, ডাকে সাড়া দেননি। তবে ব্যথায় সাড়া দিচ্ছেন। এটি জ্ঞান ফিরে আসার লক্ষণ। চিকিৎসকেরা এই লক্ষণকে অগ্রগতি বলে দেখছেন। তারা বলেছেন, খাদিজার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনে কথা জানান।
খাদিজা বেগমের শারীরিক অবস্থার সবশেষ খবর জানাতে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের উপ-পরিচালক এবং ইন্টারনাল মেডিসিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের পরামর্শক মির্জা নাজিম উদ্দিন বলেন, খাদিজা বেগম যখন স্কয়ার হাসপাতালে আসেন তখন তিনি অচেতন ছিলেন। তাকে বাঁচিয়ে রাখাটা ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আজ (গতকাল) ৯৬ ঘণ্টা পর এসে আমরা বলছি, খাদিজা বেগমের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে। তিনি বলেন, তবে খাদিজার জ্ঞান পুরোপুরি ফিরে আসতে কয়েক সপ্তাহ বা মাসও লেগে যেতে পারে। বেঁচে থাকলেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন কি না তা সহসাই জানা যাবে না। স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের পরামর্শক এবং খাদিজার অপারেশন করা চিকিৎসক নিউরো সার্জন ডা: এ এম রেজাউস সাত্তার বলেন, খাদিজার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে। তার শরীর রেসপন্স করছে। গত শুক্রবার খাদিজাকে আমরা ঘুমের ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তাকে ডান হাত ও ডান পা কিছুটা নাড়তে দেখেছি। তিনি ব্যথা পেলে সাড়া দিচ্ছেন। মস্তিষ্কে চাপ কমানোর জন্য তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলেন, মস্তিষ্ক কতটুকু কাজ করছে সেটি বোঝার জন্য গ্লাসগো কোমা স্কেল ব্যবহার করা হয়। আগে খাদিজার স্কোর ছিল ১৫-তে ৬। অবস্থার উন্নতি হয়ে সেটি এখন ১০ এ ৬ হয়েছে। চোখ মেলা, ডাকে সাড়া দেয়া ও স্পর্শ করলে বা ব্যথা পেলে সাড়া দেয়া এই তিন নির্ণায়কের ভিত্তিতে স্কোর নির্ধারণ করা হয়। খাদিজা এখনো চোখ মেলে তাকাননি, ডাকে সাড়া দেননি। তবে ব্যথায় সাড়া দিচ্ছেন। এটি অগ্রগতির লক্ষণ। রেজাউস সাত্তার বলেন, এমন আঘাতের পর রোগী খুব দ্রুত উঠে বসবেন বা কথা বলবেন এমনটা আশা করা যায় না। তবে খাদিজার বয়স যেহেতু ১৯ বছর। ফলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ সময় স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ ধরনের আঘাতের চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। এ সময়টিকে বলা হয় গোল্ডেন ফোর আওয়ারস। আরো আগে খাদিজার চিকিৎসা শুরু হলে হয়তো ভালো হতো। সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা হয়েছিল। ফলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর সিলেট থেকে খাদিজা স্কয়ার হাসপাতালে এসে পৌঁছলেও আমরা অস্ত্রোপচারের ৯৬ ঘণ্টা পর বলতে পারছি খাদিজা বেঁচে আছেন। আরো দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর তার নিউরোলজিক্যাল স্ট্যাটাস বোঝা যাবে। আমরা আশাবাদী, আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউস সাত্তার আরো বলেন, আগে খাদিজার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল ৫ শতাংশ, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১০ শতাংশ। সে যখন স্কয়ার হাসপাতালে আসে তখন তার চেতনাশক্তি ছিল ৬/১৫, এখন তা ৬/১০-এ রয়েছে। সংজ্ঞা ফিরে পাওয়ার পর নার্গিসের অর্থোপেডিকস চিকিৎসকরা তার হাতের চিকিৎসা শুরু করবেন। এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে অঙ্গহানি বড় বিষয় নয়, তার বেঁচে থাকাটাই বড় কথা।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেট এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় প্রথমে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার ভোরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। এদিন দুপুরে স্কয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৯৬ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখেন।
স্বপ্ন দেখছেন পিতা-মাতা বদরুলের শাস্তি দাবিতে সিলেটে আন্দোলন অব্যাহত
খলিলুর রহমান সিলেট অফিস থেকে জানান, রাজধানীর স্কায়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিলেট মহিলা কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসের শারীরিক অবস্থাটা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল (শনিবার) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসক এ. এম রেজাউস সাত্তার। এদিকে চিকিৎসকের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর খাদিজা আক্তার নার্গিসের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। খাদিজার পিতা-মাতা তাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
স্কায়ার হাসপাতালে চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলন করার পরে যোগাযোগ করা হয় বখাটে বদরুল আলমের হামলায় গুরুতর আহত খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া ও মা মনোয়ারা বেগমের সাথে। তারা বলেন, ‘শনিবার (গতকাল) ডাক্তার সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানিয়েছেন খাদিজার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। সে চোখ খুলে তাকিয়েছে। এমন খবর শুনে আমাদের ভালো লেগেছে।’ বাবা মাসুক মিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, ‘সবাই দোয়া করলে আমার মেয়ে আবার আমার ঘরে ফিরে আসবে। সে আগের মতো বাবা বলে আমাকে ডাকবে, পড়ার টেবিলে বসবে। কলেজে যাবে, আমি ওকে নিয়ে ঘুরতে যাব।’
এমন হাজারো স্বপ্ন যখন খাদিজার পরিবারের ঠিক তখনই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিলেটবাসী। হামলার পরদিন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে। ঘাতক বদরুলের ফাঁসির দাবিতে শনিবারও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখীতে সদর উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে খাদিজার উপর হামলাকারী বদরুলের ফাঁসির দাবিতে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতার চাপাতির কোপে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা কলেজ ছাত্রী খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া তাঁর মেয়ের উপর হামলার ঘটনার দ্রুত বিচার ও আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। সমাবেশে কান্নাভেজা কণ্ঠে মাসুক মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ের মতো আর কোনো মেয়েকে যেনো এমন বর্বরতার শিকার না হতে হয়। আর কোনো মায়ের বুক যেনো এইসব নরপশুদের হাতে খালি না হয়। এসময় তিনি নিজের মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।’
এছাড়াও বখাটে বদরুল আলমের শাস্তি ও বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির নেতা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শনিবার বিকালে ওই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন। সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় বক্তব্যে রাখেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য হুমায়ুন কবির শাহীন, রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী, ডা. নাজমুল ইসলাম, অধ্যাপিকা সামিয়া চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়াও শনিবার বেলা দেড়টার দিকে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় মানববন্ধন করেছে মুসলিম ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের নেতারা। মুসলিম ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা আসলাম রহমানীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের মহাসচিব মুফতী মুশতাক আহমদ ফুরকানীর পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, যুব জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা মাছরুর আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা ডা. হাবিবুর রহমান, মুসলিম ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে, শনিবার বিকেলে খাদিজার গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউশা গ্রামে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ সময় তার বাবা মাসুক মিয়া ও মা মনোয়ারা বেগমের সাথে দেখা করলে তারা বদরুলের বিচার দ্রুত করার দাবি জানান। প্রত্যুত্তরে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ঘটনায় জড়িত বদরুল আলমের বিচার দ্রুততম সময়ে শেষ হবে। এমনকি রাজন হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রমের চেয়ে কম সময়ে খাদিজাকে কোপানোর বিচার শেষ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকেলে খাদিজাকে কুপিয়ে আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রথম দফা অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রোপচারের পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।