Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অযত্নেই নষ্ট হয়ে গেল কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনায় পাট অধিদপ্তরের পাটপণ্য পরীক্ষাগার ভবনটি মারাত্মাক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মহানগরীর বয়রা বাজার মোড়ে ওই ভবনে বসেই দাপ্তরিক কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরীক্ষাগারের কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। যা স্বীকারও করলেন পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেই। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য কে দায়ী? সে প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিনের কাছ থেকে।
সরেজমিন ওই ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায় ভূতুড়ে পরিবেশ। এটা কোনো অফিস, এখানে কাজ করা যায়, চোখে দেখলে তা কেউ স্বীকার করবেন না। এর ভেতরেই তিনজন কর্মকর্তাকে পাওয়া গেল। তিন জনেই বললেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা এই ভবনে প্রবেশ করি। পুনরায় ফিরে বাসায় যেতে পারবো কি না তার নিশ্চয়তা নেই। নীচতলা ও দোতলায় ঘুরে তাদের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ভবনটি ১৯৮০ সালে নির্মাণ হয়েছিল। কিন্তু পাট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ইউএনডিপি’র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশের বৃহৎ তিনটি পাট শিল্প অঞ্চলে (খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম) পাট অধিদপ্তরের অধীনে ৩টি আধুনিক মানের খুলনা পাটপণ্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়। যার একটি খুলনার বয়রায় অবস্থিত।
সূত্র জানায়, ভবনটি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল তখনই এক কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছিল। গবেষণাগারে রয়েছে দু’টি বিশাল আকারে এয়ার কন্ডিশন। তাও নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যসব যন্ত্রপাতিও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব যন্ত্রপাতি এখন আর কোনো কাজে লাগছে না। ছাদের নীচের অংশ ভেঙে পড়েছে। ওপরের অংশের রড দেখা যাচ্ছে। যেকোনো সময় মাথায় পড়ার ভয়ে গবেষণাগারের ভেতরে এখন আর প্রবেশ করেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দরজাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি রুমে গিয়ে দেখা যায় কোনো রুমের ছাদ ভাল নেই। বৃষ্টি হলে অনবরত পানি পড়তে থাকে বলে জানালেন কর্মকর্তারা।
বাইরে থেকে দেখা গেলো আরো ভয়াবহ চিত্র। ওয়ালের প্লাস্টার আগেই খসে পড়েছে। এখন কংক্রিট খসে পড়ছে। বাইরে তিনটি সাইনবোর্ড আছে। কিন্তু রাস্তা থেকে কেউ এই ভবনটি দেখলে বলবেন না যে এখানে কেউ আছেন বা কাজ করেন।
পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সারাদেশের তিনটি পাটপণ্য পরীক্ষাগারের অবস্থাই ভাল না। এগুলোর যন্ত্রপাতিও ভাল নেই। এ নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। শিগগিরই ভবন মেরামতসহ নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
দীর্ঘদিন অবহেলা ও অনিয়মের কারণে ভবনটির এই অবস্থা হয়েছে ও কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে, এই দায়-দায়িত্ব কার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার দায় সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে আমরা নতুন করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শাহ আলম বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে প্রতিদিন প্রবেশ করি। কয়েক বছর যাবত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ভবন পরিদর্শন করে গেছেন। সবাই যখন আসেন তখন বলেন, শিগগিরই নতুন ভবন হবে। কিন্তু কিছুই হয় না।
পরিদর্শক (পণ্য) মোকতার আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থায় আছি। এ বছরের প্রথম দিকে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এসে দেখে গেছেন। তারপর গণপূর্ত থেকে লোক এসে দেখে গেছে। তারা বলেছিল, ৭৭ লাখ টাকায় নতুন ভবন হবে।
কিন্তু কিছুই দেখছি না। ২৯ দশমিক শূন্য ৮ শতক জমির ওপর দ্বিতল ভবনটি বয়রা বাজারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। পুরোনো এই ভবনটি ভেঙে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিয়েও মন্ত্রণালয়ের অনেক টাকা আয় হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অযত্নেই নষ্ট হয়ে গেল কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ