পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অনেক উন্নতি হয়েছে। যা এশিয়ার শেয়ারবাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ রিটার্ন বা মুনাফা দিয়েছে। আমরা এই বাজারকে এগিয়ে নিতে সুশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া নিয়মিত প্রয়োজনীয় বিষয়ে সংস্কার করছি। যাতে করে ফলাফলও পাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে সুইজারল্যান্ডবাসীকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এবং সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ নিতে আহবান করেছেন তিনি।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের রোড শো অনুষ্ঠানের প্রথম দিন সুইজারল্যান্ডের জুরিখে তিনি এই আহবান করেন। পুরো কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার’। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জুরিখের ডোলডার গ্র্যান্ড হোটেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। আর আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জেনেভার হোটেল প্রেসিডেন্ট উইলসনে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ড. টেডরোস আধানম গেবরিয়েসুস। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ রোড শো’র আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হবে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিনিয়োগে আহবান করার কারন হিসেবে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বৈশ্বিক অস্থিরতা শোষণ ক্ষমতা রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্ট্যাবল, সুদ হার অনুকূলে, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পূর্বানুমতি দরকার পড়ে না, নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সহজেই বিনিয়োগ করা যায়, মুনাফাসহ রিটার্ন ফেরতের ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হয় না। সুতরাং খুব সহজেই বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুক‚লে ও ব্যবসাবান্ধব সরকার রয়েছে বলে জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে সুইজারল্যান্ডবাসীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান করেন তিনি। এতে উভয় পক্ষ লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশকে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মৃত্যুহার কমে এসেছে, শিক্ষার হার ও জিডিপি বেড়েছে।
দেশের উন্নয়নে ডিজিটালাইজেশনে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেও জানান বিএসইসি’র চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এছাড়া মেট্রোরেল, স্যাটেলাইট উদ্বোধনের মতো মেগা প্রজেক্টের কাজ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে মেধাবীরা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে স্টার্ট আপস কোম্পানি পরিচালনা করছে বলে যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমের সঞ্চলনায় একটি প্যানেল ডিসকাশন ও প্রশ্নোত্তর পর্ব করা হয়। এতে অতিথিদের প্রশ্নের জবাব ও ডিসকাশন করার জন্য মঞ্চে বিএসইসি, সিডিবিএল, সুইজারল্যান্ড-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম পিএ, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ন কুমার ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ নকিব উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক সাদ ওমর ফাহিম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বিদেশীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরেন। বিদেশীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা খুব সহজেই নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেনের জন্য বাংলাদেশে অনেক বিদেশীরা ব্রোকারেজ হাউজ পরিচালনা করছেন। এসময় শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশীদের মুনাফার ক্ষেত্রে কর হার, লভ্যাংশ প্রাপ্তি, বিও হিসাব খোলার প্রক্রিয়া, বিভিন্ন পণ্যের বিষয়ে তুলে ধরেন। এছাড়া একজন বিনিয়োগকারীর ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য সিডিবিএল মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় বলে যোগ করেন তিনি।
রোড শোতে তুলে ধরা হয়-গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঈর্ষণীয় অগ্রগতি। এতে বলা হয়, অর্থনীতির সবগুলো সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি, যে কারণে বাংলাদেশে ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণের জন্য বিএসইসি এ ধরনের রোড শোর উদ্যোগ নিয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস তুলে ধরা বলা হয়, ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। একই সঙ্গে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আইএমএফ’র পূর্বাভাস অনুসারে, করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি বলছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুণ। এসব বিষয় তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডবাসীকে বিনিয়োগের আহবান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় সুইজারল্যান্ড ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। পৃথিবীর অধিকাংশের কাছে এটি স্বপ্নের দেশ। প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর এই দেশকে অত্যাধুনিক শিল্পের দক্ষতায় সাজানো হয়েছে। বিশ্বে উদ্ভাবন সূচকে শীর্ষে রয়েছে এই দেশ। সাড়ে ১৫ হাজার বর্গমাইলের এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি। আর মাথাপিছু আয় ৭০ হাজার ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশের ৩৫ গুণ। ঘড়ি, চকলেট ও ট্রেনের জন্য বিখ্যাত এই দেশ। অর্থপাচারকারীদের নিরাপদ স্থান হিসেবে দেশটির ব্যাংকগুলো বিশ্বের বিত্তশালী মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত। সুইজারল্যান্ডে এখন অনেক সম্পদশালী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। কিন্তু তারা বিনিয়োগ করার মতো কোনো উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পান না। যথাযথ পরামর্শ-সহায়তা দিলে প্রবাসীদের সুনিশ্চিত বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে। তাদের সঞ্চিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়নে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। সুইজারল্যান্ডে অবস্থানরত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে আরও ডিজিটাল বুথ চালু করা যেতে পারে। এতে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরাসরি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। আর তাই অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার ও ওয়ালটন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।