পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার রঙিন স্বপ্নে বিভোর হওয়া। পরিণামে সহায় সম্বল হারানো। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব ঘটনা তথা প্রতারণা থেকে বাঁচতে অধিক মুনাফার লোভ সংবরণের পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে এসব বিষয়ে প্রচারণা চালানোর পরামর্শও দেন আদালত। ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ, এহসান গ্রুপ, ডেসটিনি, ইউনি পে টু ইউ’র মতো প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ এবং সাধারণ মানুষের প্রতারিত হওয়া প্রসঙ্গে গতকাল রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ উপরোক্ত পরামর্শ দেন। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল ই.কমার্সের বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
গতকাল ছিল ফোনে আড়িপাতা সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট রিটটির শুনানির তারিখ ১০ দিন পিছিয়ে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
ফোনে আড়িপাতা সংক্রান্ত রিটের শুনানিকালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়েই কথিত ই.কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি-ইঅরেঞ্জের প্রসঙ্গ তোলেন। এ সময় ফোনে আড়িপাতা সংক্রান্ত রিটের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। এ সময় প্রাসঙ্গিকভাবে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, দেশের মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বেশ কিছু ই.কমার্স মার্কেট থেকে প্রতারিত হচ্ছেন মানুষ। দৃষ্টান্তস্বরূপ ইভ্যালি-ই-অরেঞ্জের প্রসঙ্গ ওঠে। আদালত অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চান। তখন শিশির মনির বলেন, আমাদের দেশে ই-কমার্স ব্যবসার নামে অনেক বেশি ফ্রি অফার থাকে, যা বিদেশি প্রতিতষ্ঠান আলিবাবা, অ্যামাজনে থাকে না। আমাদের দেশের গ্রাহকরা অতি লোভে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
তখন আদালত বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা তো দেখি, একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। বিমানের টিকিট কিনলে হোটেল ফ্রি। আপনারা তো পাবলিক ইন্টারেস্টের মামলা করেন। আপনাদের উচিত পাবলিকদের সচেতন করা, তারা যেন এক্ষেত্রে লোভ কমান।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির এ সময় আদালতকে বলেন, আমাদের দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়টা এমন যে, প্রথমে তারা অফার দেবে- একটা মোটরসাইকেলের টাকায় দুইটা মোটরসাইকেল। এরপর গ্রাহকরা টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল পাবে এবং টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটওয়ে দিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। এরপর আবার দুইটা কিনলে আরও দুইটা ফ্রি, চারটা কিনলে আরও চারটা ফ্রি পাবে এমন অফার আসে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু এক পর্যায়ে যখন গ্রাহক অধিকসংখ্যক যেমন- ৮টা মোটরসাইকেল কিনলে আরও ৮টা মোটরসাইকেল পাওয়ার জন্য টাকা দেয়, তখন সে টাকা চলে যায়। কিন্তু মোটরসাইকেল আর আসে না।
এদিকে আদালতের উপরোক্ত পরামর্শের পর গ্রাহকদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে ই-কমার্স ব্যবসাকে আইনের আওতাভুক্ত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন পৃথিবীর সব দেশেই ই-কমার্সের ব্যবসা রয়েছে। এটা জনপ্রিয় একটা সাইট। আমাদের দেশে ই-কমার্স ব্যবসা নতুন। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি তাদের অসাধু কার্যকলাপের জন্য ই-কমার্সের ব্যবসা পেছনের দিকে নিয়ে গেল। নতুন একটা ব্যবসায় মানুষজন কাজ করতে পারত। সেটাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসাটাকে নষ্ট করে ফেলা হলো।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমার জানা মতে ই-কমার্স নিয়ে কোনো আইন হয়নি। এটাকে আইনের আওতাভুক্ত করতে হবে। আমি মনে করি যারা এ ধরনের ব্যবসা করবে তাদের কাছ থেকে একটা সিকিউরিটি বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে তাদের লাইসেন্স দেবে। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার হন। তাদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি মানি থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া যেতে পারে। আর কেউ প্রতারিত হলে সে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করতে পারে। এছাড়া ক্রেতাকে সাবধান হতে হবে। আমি সবাইকে একটা পরামর্শ দেব, কোনো ধরনের বিনিয়োগ করার আগে, কোনো পণ্য অর্ডার করার আগে দয়া করে করে এর ভালো-মন্দ দিকটা খতিয়ে দেখে তারপর অর্ডার করবেন।
উল্লেখ্য, অল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফা কিংবা রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিম্নমধ্য বিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সহায়-সম্বল হারানোর বিষয়ে গতকাল রোববার দৈনিক ইনকিলাব প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর হাইকোর্ট বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে উপরোক্ত পরামর্শ দেন।
ইনকিলাব প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কিছু অর্থনৈতিক প্রতারণার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ইভ্যালি থেকে শুরু করে পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি পর্যন্ত কোনো ঘটনায়ই দায়ী ব্যক্তিদের কার্যকর কোনো শাস্তি হয়নি। কথিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ইভ্যালির মাধ্যমে গ্রাহক তথা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে অন্তত ৫৪৩ কোটি টাকা। একই ধরনের প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’র বিরুদ্ধেও প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ‘ধামাকা’ নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাতিয়েছে প্রায় ৫৮৩ কোটি টাকা। দক্ষিণবঙ্গ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এহসান গ্রুপ’র বিরুদ্ধে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এর আগে বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের কথা বলে ‘যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি-যুবক’ হাতিয়ে নেয় ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। বহুস্তর বিপণন পদ্ধতি (এমএলএম)র নামে ‘ডেসটিনি-২০০০ লি:’ হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এমএলএম কোম্পানি ‘ইউনি পে টু ইউ’ হাতিয়ে নেয় ৪২০ কোটি টাকা।
‘নিউওয়ে মাল্টিপারপাস কোম্পানি’ নেয় ১ হাজার কোটি টাকা। ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি’ হাতিয়ে নেয় ১১০ কোটি টাকা। অধিক মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে সমিতির নামে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন আইডিয়াল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লি:’র (আইসিএল) এইচ.এম.এন. শফিকুর রহমান গং।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেসিক ব্যাংক থেকে লুট করা হয়েছে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা। হলমার্ক গ্রুপ লুট করা হয় ৪ হাজার কোটি টাকা। নন-ব্যাংকিং তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পিকে হালদার গং লুট করে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ‘এনন টেক্স’ নেয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। ‘বিসমিল্লাহ গ্রুপ’ জালিয়াতির মাধ্যমে লুট করে ৩ শত ৩৩ কোটি টাকা। ‘ক্রিসেন্ট গ্রুপ’ নেয় ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ম্যানুপুলেশনের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে দুই দফায় হাতিয়ে নেয়া হয় ৫২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত মামলায় হাতিয়ে নেয়া অর্থ পুনঃউদ্ধার হয়েছে কিংবা আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে কেউ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেনÑ এমন দৃষ্টান্ত বিরল। এ বিষয়ে বিশ্লেষকদের মতামতও তুলে ধরা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।