Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙন থেকে রক্ষায় ৯৫০ কোটির টাকার প্রকল্প

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

কুয়াকাটা সৈকতসহ পুরো এলাকাকে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পুনর্গঠনে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীসহ দায়িত্বশীলরা এ মাসের মধ্যেই সংশোধনীসহ ডিপিপিটি পুনরায় বোর্ডে প্রেরণের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনসহ একনেকে অনুমোদনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দায়িত্বশীলরা। ফলে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা-এডিপি’তে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনার কথাও বলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা। আগামী জুলাই-আগস্টে দরপত্র অহবান করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উপমহাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার প্রধান বাধা হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন। পর্যটন কেন্দ্রটির মূল আকর্ষন সি বিচের পূর্বের রাবনাবাদ ও পশ্চিম প্রান্তের আন্ধারমানিক চ্যানেলের স্রোত গতি পরিবর্তন করায় ১৯৯৮ সাল থেকে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে ঢেউয়ের আঘাতে বছরে এক মিটার করে সি বিচ বিলীন হতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্বেগ ছিলো না।

পরবর্তীতে ২০১০ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সীমিত কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় জিউ টিউব ও সিসি ব্লক ফেলে মূল সি বিচটি সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তার কোনটিই কার্যকর ফল দেয়নি। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে রক্ষার বিষয়টি ফলপ্রসু হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে কুয়াকাটায় একাধিক মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ সমাবেশও হয়েছে। এক পর্যায়ে বিষয়টি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি সরেজমিনে কুয়াকাটা সফর করে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে আধা সরকারি নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ জরিপ ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে কুয়াকাটার সৈকত রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আইডব্লিউএম এ লক্ষ্যে তার প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে সি বিচ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গ্রোয়েনের মাধ্যমে ভাঙন রোধের প্রস্তাব দিয়েছে। গ্রোয়েনগুলোতে জিও টেক্সটাইলের ওপর ৪৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার সাইজের সিসি ব্লক সন্নিবেশ করা হবে। মূল সি বিচ রক্ষায় দু’প্রান্তের রাবনাবাদ ও আন্দারমানিক চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লকের সাহায্যে গ্রোয়েনগুলো নির্মিত হবে।
প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটা সৈকতে একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ওয়াকিং বে, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ গার্ড স্টেশন, বসার স্থান, ট্রইল, পার্কিং ল্যান্ডস্কেপ ও টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির জন্য আইডব্লিউএম ৬৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করলেও পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪৯ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্র্থেই তা বাস্তবায়িত হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তদরকিও করবে আইডব্লিউএম।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম জানান, সরকার কুয়াকাটা সৈকতকে ভাঙন থেকে রক্ষা ও একটি আদর্শ সমুদ্র সৈকত হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী। পানি উন্নয়ন বোর্ডও সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সার্বক্ষণিকভাবে প্রকল্পটির খোঁজ-খবর রাখছেন বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ