Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদিজার জীবন এখনো শংকায়

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিলুর রহমান : সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতার হামলায় আহত খাদিজা আক্তার নার্গিসের শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা ভেন্টিলেটর মেশিনের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। গতকাল বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত ছিলো বলে জানিয়েছেন তার ভাই শাহীন আহমদ।
এদিকে, খাদিজার সুস্থতার জন্য গতকাল জুমার নামাজ শেষে সিলেটের শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদ, শাহপরাণ মাজার মসজিদসহ সিলেট নগরীর সকল মসজিদে দোয়া করেছেন মুসল্লিরা।
এদিকে, হাসপাতালে অবস্থানকারী খাদিজার ভাই শাহীন আহমদ ও চাচা আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, খাদেজার অবস্থা এখনো আগের মতো। তারা জানান, তাদের সাথে খাদিজার আরো দুই ভাই ও মামা রয়েছেন। চীন থেকে আসা খাদিজার ভাই শাহীন আহমদ কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, তারা ভাই-বোন চারজন। এর মধ্যে খাদিজা তাদের একমাত্র বোন। এই একমাত্র বোনের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে খাদিজার বাবা মাসুক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার সউদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই তিনি খাদিজাকে দেখতে স্কায়ার হাসপাতালে ছুটে আসেন। পরে বিকালে তিনি সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তবে সিলেট যাওয়ার আগে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি চাই বদরুলের বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করা হোক।’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকেলে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খাদিজাকে মাটিতে ফেলে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন বদরুল আলম (২৭)। বদরুল আলম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮-০৯ সেশনে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন বদরুল। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমার মুনিরজ্ঞাতি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। আর খাদিজা সদর উপজেলার আউশা এলাকার সউদি আরব প্রবাসী মাসুক মিয়ার মেয়ে। পরিবারের সাথে সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকায় বসবাস করেন তিনি।
ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আগেও একবার গণধোলাই খেয়েছিল
চাপাতি দিয়ে খাদিজাকে কোপানোর পরপরই শিক্ষার্থীদের হাতে গণধোলাই খেয়েছিল বদরুল আলম ওরফে ‘বদ’ বদরুল ওরফে ‘চাপাতি’ বদরুল। কিন্তু এটাই তার প্রথম গণধোলাই খাওয়া নয়, আগেও সে গণধোলাই খেয়েছে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে, ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি গণধোলাই খেয়েছিল বদরুল। ২০০৮ সালের দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় বদরুল। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে লজিং মাস্টার হিসেবে সে ঠাঁই নেয় সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউশা গ্রামের সউদি প্রবাসী মাসুক মিয়ার বাড়িতে। এই মাসুক মিয়াই হচ্ছেন খাদিজা বেগম নার্গিসের বাবা। ওই সময়ে কিছুদিন খাদিজাকে পড়িয়েছিল বদরুল। একপর্যায়ে বেরিয়ে আসে তার ভেতরের বদ। খাদিজাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বসে বদরুল। বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দেন খাদিজা। এরপরই সেখান থেকে বিতাড়িত হয় বদরুল। কিন্তু থেমে থাকেনি তার বখাটেপনা। শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল ২০১২ সালে আবারও ঘুরঘুর করতে থাকে খাদিজাদের বাড়ির আশপাশে। ওই বছরের ২০ জানুয়ারি এলাকার লোকজন তাকে গণধোলাই দেন। সে সময় কিছুদিন হাসপাতালেও ছিল ‘চাপাতি’ বদরুল। নিজের মান বাঁচাতে ওই গণধোলাইকে সে শিবিরের কাজ বলে চালিয়ে দিয়েছিল। সেই গণধোলাইয়ের কথা মাত্র সাড়ে চার বছরের মাথায় ভুলে যায় ‘বদ’ বদরুল। সে হয়ে ওঠে আরো ভয়ঙ্কর, আরো বেশি দানব। তার তাই গত সোমবার খাদিজাকে চরম নির্মমতায় চাপাতি দিয়ে কোপায় সে। তারপর আরো একবার খায় গণধোলাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদিজার জীবন এখনো শংকায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ