পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর বাংলাদেশ সফরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। কারণ, এ সফরের মাধ্যমে বেইজিং তার রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ করছে বলে কূটনীতিকরা মনে করেন। এ ছাড়া এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তি চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্কে রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। আর তার এ সফরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তার চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে চীন। যা বর্তমান সরকারের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর এ কারণেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার চীনমুখী অর্থনীতিতে মনোযোগী। চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্রিকস ব্যাংকেও যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার সম্ভাব্য সইয়ের তালিকায় থাকা এমওইউর মধ্যে প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত কিছু নেই বলে জানা গেছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সফরে বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ সফরকে বলা হচ্ছে ঐতিহাসিক। ঢাকা সফরে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাবে বাংলাদেশ। বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা পৌছবেন আগামী ১৪ অক্টোবর সকালে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দেয়া হবে এ অতিথিকে। আর তাই এ সফরকে নিয়ে এখন নিরাপত্তার খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তি চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্কে রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। এ সফরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং প্রকল্প অর্থায়ন এ ছাড়াও বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনা, ঋণের সুদ কমানো ও শর্ত শিথিল করার ওপর জোর দেয়া হবে।
শি জিনপিংয়ের সফরকালে বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে চীনের অর্থায়ন প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয় সুত্রে আভাষ পাওয়া গেছে চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটা সম্ভব হলে এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তা চুক্তি। জানা গেছে, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প এবং জীবনমান উন্নয়নে এই অর্থ দিতে চায় চীন। তবে এখনও ঋণের শর্ত ও সুদহার নির্ধারণ করা হয়নি। বিশাল অঙ্কের এই ঋণে আপত্তি না থাকলেও শর্ত যেন কঠিন না হয়, সে দিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা ইপিজেড উদ্বোধন করতে পারেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি গুয়ানজুর মাধ্যেমে দেশটি বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে ২১টি প্রকল্প বাচাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বড় ধরনের কোনো নীতি পরিবর্তন না হলে এ তালিকাই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে চীন।
এই ২১টি প্রকল্পের মধ্যে রেলখাতের চারটি, সড়ক পরিবহনের চারটি, বিদ্যুতের চারটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি, জ্বালানি ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের একটি করে এবং শিল্প খাতের দুটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল প্রকল্পে ৩০৩ কোটি ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের (ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ) উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার আসতে পারে। ‘সীতাকুন্ড-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে ও কোস্টাল সুরক্ষা’ প্রকল্পে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।
চীনের সহায়তা পাওয়া যেতে পারে ২০৩ কোটি ডলারের ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া’ প্রকল্পে। ‘সিস্টেম লস রিডাকশন বাই রিপ্লেসিং পঞ্চাশ লাখ ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেক্ট্রনিক এনার্জি মিটার’ প্রকল্পে ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।
এছাড়া ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’তে ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার আসতে পারে। ‘গজারিয়ায় ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে’ দিতে পারে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, ‘রাজশাহী সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, বিটিভির পাঁচটি টিভি স্টেশন স্থাপন প্রকল্পে ১২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার দিতে পারে চীন। বিজেএমসির আওতায় ‘সরকারি পাটকল আধুনিকায়ন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে’ ২৮ কোটি ডলার এবং ‘এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্পে আসতে পারে ১০০ কোটি ডলার।
এছাড়া পাঁচ প্রকল্পে অর্থের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি; সেগুলো হচ্ছে- ‘চায়না অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্ট’, ‘ড্রেনেজ এন্ড সলিড ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল সাইজ পৌরসভা’, ‘রিপ্লেস অব ওভারলোডেড ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ফর প্রোভাইডিং রিলায়েবল ইলেক্ট্রিসিটি ইন আরই সিস্টেম’।
এছাড়াও ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের প্রস্তাবও চীনকে দিতে পারে বাংলাদেশ। ভারত, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশ ওই মেগা প্রকল্পে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৩০ বছর পর চীনা কোন প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় শি জিন পিং ২০১০ সালে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সঙ্গত কারণেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শি জিন পিং এর ১৪ অক্টোবরের সফরটি আরো তাৎপর্যপূর্ণ। শি জিন পিং ঢাকা সফর শেষে ভারতে যাবেন। আগামী ১৫-১৬ অক্টোবর দেশটির পর্যটন নগরী গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। ওই সম্মেলনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হচ্ছে ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ মিটিং। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ আগ্রহে অনুষ্ঠেয় ওই আউটরিচ মিটিংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিমসটেক শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
এদিকে বেইজিং এর ১৫ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল ইতিমধ্যে ঢাকা ঘুরে গেছে। আগামী সপ্তাহে সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত চীনের অগ্রগামী দলের আরো ক’জন সদস্য ঢাকা আসতে পারেন জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন- বিভিন্ন গ্রুপে নিরাপত্তা ও প্রটোকল বিভাগের কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর হবে ঐতিহাসিক। তাকে অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য সরকার প্রস্তুত। সৈয়দ আশরাফ বলেন, চীনের সঙ্গে সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ দরকার। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরকালে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। অনেক আগে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ছিল। আবার সেটি চালু হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতও সুবিধা পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।