Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘কুইক রেন্টাল’ আরো ৫ বছর

বিরোধী দলের বিরোধিতার মুখে সংসদে বিল পাস ‘জঘন্য কালো আইন’ : বিএনপি জাতীয় পার্টি, গণফোরাম বিলটি নতুন করে আনা হয়নি সময় বাড়ানো হয়েছে মাত্র : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে এক দশক আগে দেশে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর বিশেষ আইনের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়াতে গতকাল সংসদে বিল পাস হয়েছে। বিলটি পাসের বিরোধিতা করেছেন বিএনপি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১’ সংসদে পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বিরোধিতা করেন। তবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেই এই বিলটি আনা হয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সঙ্কট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর এটা করার জন্য ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’।
শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়। এবার ৫ বছর মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন মিলল সংসদে। ২০১০ সালে প্রণীত আইনটির মেয়াদ সর্বশেষ ৩ বছর বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় অতি দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তাৎক্ষণিক পরিকল্পনায় ৩ বছর, ৫ বছর ও ১৬ বছর মেয়াদি ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করে। এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে নতুন আইনটি করা হয়। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে চলতি বছরের গত মার্চে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।

বিলটি সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে এ খাতে দ্রুত অধিকসংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।

বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলার পর এর বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, জনগণের করের টাকা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এ আইন করা হচ্ছে। অসৎ উদ্দেশ্যে বিলটি তড়িঘড়ি করে পাস করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন আইনটি ‘জঘন্য কালো আইন’।

বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, রূপপুর, মাতারবাড়িতে বড় প্রকল্প করছি। ঋণের বোঝা বাড়ছে। এভাবে চললে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। এই আইন করে আমরা অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দিচ্ছি। বিশেষ বিধান রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন সময় আইন করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষ বিধান কেন ১৬ বছর ধরে চলবে। বিশেষ বিধান সাময়িক সময়ের জন্য করলেন। আজকে কেন আবার ৫ বছর? সর্বোচ্চ এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করেন। এ ছাড়া ঘোর আপত্তি থাকবে। বিশেষ বিধান এভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না।

বিএনপির এমপি ব্যরিষ্টার রুমিন ফারহানা বলেন, মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এই আইনে কিছু মানুষের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জনগণের টাকা কিছু মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে, কিন্তু তা নিয়ে কথা বলা যাবে না। বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিকল্পিতভাবে অচল করে রাখা হচ্ছে।
গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান বলেন, এ আইন একটি জঘন্য কালো আইন। এখানে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে। জনগণের টাকা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এ আইন করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নিজের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ, এলাকায় বিদ্যুৎ পাই না। চৈত্র, বৈশাখ, ভাদ্র মাসে মানুষ ঘুমাতে পারে না। এলাকায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। জোরে বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ যায়, বাতাস হলে বিদ্যুৎ যায়। আইনের এক্সটেনশন দরকার নেই। বিদ্যুৎ দেন।

জাতীয় পার্টির এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এলাকায় বিদ্যুৎ আসে না যায়, বোঝা যায় না। আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আপনি অল্প জনবল দিয়ে সেবা দিচ্ছেন। একটা লাইন দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার লাইন চালাচ্ছেন। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ চাই না। আগের অবস্থায় ফিরতে চাই। জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেন, কুইক রেন্টাল ব্যয়বহুল। কেন এটা করা হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনে কেন নজর দেওয়া হচ্ছে না।
জবাব দিতে উঠে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিলটি নতুন করে আনা হয়নি। সময় বাড়ানো হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যাতে দিতে পারি সেজন্য এই আইন। ৬ মাসের মধ্যে যাতে কাজ করতে পারি সেজন্য এই আইন। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। এখন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চাই। সঞ্চালন লাইন করতে গেলে সময় লাগবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুইক রেন্টাল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ