Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহামহিম ইমাম সামনে এগিয়ে চললেন

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

একে এম ফজলুর রহমান মুনশী
কুফার পথে এগিয়ে যাওয়ার সময় হযরত আবদুল্লাহ বিন জাফরের পত্র নিয়ে হযরত আওন ও মুহাম্মদ নামক দু’জন সুহৃদ এসে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। পত্রে লেখা ছিল, ‘আপনি পত্র পাওয়া মাত্র মক্কার দিকে প্রত্যাবর্তন করবেন। আপনার লক্ষ্যস্থল কুফা আপনার ধ্বংস ও পরিবার পরিজনের বেদনা ডেকে আনবে। আপনি জেনে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে পা বাড়াবেন না। ইমাম মুসলিম কী অবস্থায় আছেন, তার খবর না নিয়ে আপনার সেখানে যাওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। আপনি আস্তে পথ চলুন, আমি শীঘ্রই আপনার সাথে মিলিত হবো। এই চিঠিতেও ইমামের চিত্তে ভাবান্তর হলো না। পরিশেষে হযরত আবদুল্লাহ স্বয়ং উপস্থিত হলেন এবং মদীনার গভর্নর আমরের পরামর্শ সম্বলিত পত্রও তাকে প্রদান করলেন। সবকিছু জানা-শোনার পর ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন, ভাই জাফর এক বিরাট কাজ সমাধান করার জন্য আমি কুফা যাচ্ছি। এ কাজের নির্দেশ নানাজানই আমাকে দিয়েছেন। আমার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সে কথা কাউকে বলতে পারবো না। তোমরা কেন আমাকে বারণ করছো? যা হবে তা তো পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা আছে। এখন এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’ তারপর তিনি পুনরায় পথ চলতে লাগলেন।
গুপ্তচর মারফত ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইন (রা:)-এর কুফা আগমনের সংবাদ পেয়েছিল। সে পুলিশ অফিসার হোসেন বিন নোমায়েরকে ইমামের কাফেলার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দিল। ইবনে নোমায়ের কাদসিয়া হতে জাবালে লাল পর্যন্ত সতর্ক প্রহরী নিযুক্ত করলো। ফলে কোন লোক কুফা হতে বাইরে যেতে পারলো না এবং বাইরের লোক কুফায় প্রবেশ করতে সক্ষম হলো না।
এমন সময় ইবনে নোমায়েরের বাহিনীর হাতে কায়েস নামে এক দূত ধরা পড়লো। তল্লাশি চালিয়ে দেখা গেল সে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর চিঠি নিয়ে কুফা যাচ্ছে। ইবনে নোমায়ের কায়েস থেকে ইমাম দলের অবস্থান ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নিল। পরিশেষে তাকে বন্দি করে চিঠিসমেত ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেল। ইবনে যিয়াদ নির্দেশ দিলো তাকে হত্যা করার জন্য। ইবনে যিয়াদের নির্দেশ প্রতিপালিত হলো। এরই ফাঁকে কায়েস জোর গলায় ইমাম হুসাইন (রা:)-এর প্রশংসা, হযরত আলী (রা:)-এর বীরত্ব গাঁথা ও ইবনে যিয়াদের নিন্দা প্রচার করতে কসুর করলো না।
ইত্যাবসরে ইমাম বাহিনী রমলা অতিক্রম করে আরো সম্মুখে অগ্রসর হলো। পথিমধ্যে আদুল্লাহ বিন মুতীর সাথে ইমামের কাফেলা মিলিত হলো। ইবনে মুতী ইরাকের বর্তমান অবস্থা হযরত হুসাইন (রা:)-এর দরবারে পেশ করলেন এবং বললেন, এখনো সময় আছে আপনি কুফার পথ পরিত্যাগ করুন। নতুবা বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এতে মহামতি ইমাম দমলেন না। তিনি সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। পথিমধ্যে যারুদ নামক স্থানে তাঁবু ফেলা হলো। এমন সময় জুহায়ের বিন কাইয়্যেন অদূরে স্থাপিত তাঁবু হতে বের হয়ে ইমামের (রা:) বাহিনীতে যোগ দিলেন। তারপর ইমাম হুসাইন (রা:) সদলবলে ছাবিয়া নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। সেখানে ইরাক প্রত্যাগত ২ ব্যক্তির সাথে তার দেখা হয়। তিনি তাদের কাছ থেকে কুফার অবস্থা ইমাম মুসলিমের শাহাদাতের খবর পেলেন। এরপর কাফেলার লোকজন অনেকেই ইমামের কাছে আরজ করলেন, হযরত চলুন, আমরা এখান থেকে চলে যাই। কুফার জনগণ চরম দাঙ্গাবাজ ও মুনাফেক। কিন্তু ইমাম মুসলিমের ভাই আত্মীয়-স্বজনরা এ কথায় রাজি হলেন না। তারা বললেন, আমরা ইমাম মুসলিমের হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবো না। ইমাম হুসাইন (রা:) উদাস নয়নে ঊর্ধ্ব আকাশে তাকালেন। মনের গহীনে কি যেন ভাবনার জোয়ার বয়ে যেতে লাগল। তারপরও এগিয়ে চললো কাফেলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহামহিম ইমাম সামনে এগিয়ে চললেন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ