পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ৯০ হাজার টাকার আইসিইউ পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সরবরাহ করা হয়। একইভাবে অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট, ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট, বিএইইস মনিটরিং প্ল্যান্ট, ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন এবং হেড কার্ডিয়াক স্টেথিসকোপ কেনাবাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। যা এখনো অনুসন্ধানাধীন। আর এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সরবরাহকারি বা ঠিকাদারই এবার সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি) কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সরবরাহ না করেই সিন্ডিকেটের সহায়তায় ৫৯ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, স্বত্ত্বাধিকারী মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন। টাকা উঠিয়ে নেয়ার পর আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও মালামাল বুঝে পায়নি সিএমএসডি। অথচ সিএমএসডি’র কাগজপত্রে রয়েছে মালামাল বুঝে পাওয়া গেছে।
অবশ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, জুন ক্লোজিং বা অর্থবছর শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই আগে টাকা দিয়েছে সিএমএসডি। একই সঙ্গে টাকা নেয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে মালামাল সরবরাহের নিয়ম রয়েছে। তাই মালামাল দেয়া হচ্ছে। তবে ৪৫ দিন পার হয়ে গতকাল ৭৫ দিনও অতিবাহিত হয়েছে। এখনো কেন মালামাল সরবরাহ করা হয়নি এ বিষয়ে কোন সদুত্তর না দিয়ে মোবাইল কল কেটে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যদিও এ বিষয়ে সিএমএসডি পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সিএমএসডি’র মালামাল গ্রহণ শাখার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ‘সার্ভে বোর্ড কর্তৃক গৃহীত মালামাল বুঝিয়া পাইলাম’ মর্মে স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ইনকিলাবকে বলেন, আমি নিচের কর্মচারী। আমাকে লিখিত এনে বলা হয়েছে ‘স্বাক্ষর’ করতে আমি স্বাক্ষর করেছি। তবে আমি যতটুকু জানি তাতে এখনো মালামাল আসেনি।
অথচ করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে গত বছর বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও থমকে গিয়েছিল। মহামারিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল মানুষ। সরকারি দু’একটি হাসপাতাল ছাড়া অধিকাংশ হাসপাতাল রোগী ভর্তিতেও ছিল অপারগ। চিকিৎসক-নার্সসহ ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে রোগীর সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। আবার সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া সেবা দিতে গিয়ে অনেক ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিছু ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা ইন্তেকালও করেছেন। দেশের সেই ক্রান্তিকালে করোনা থেকে বাঁচতে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি) তৎকালীন পরিচালক মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদউল্লাহের জরুরি পদক্ষেপ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দিক নির্দেশনায় দ্রুত সারাদেশের হাসপাতাল ও ফ্রন্টলাইনারদের কাছে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। দেশের ক্রান্তিলগ্নে অজানা এই মাহামরি থেকে বাঁচাতে জরুরি অবস্থার মধ্যেও সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহকারীদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সাবেক পরিচালক। দেশও করোনা মহামারির প্রথম ধাপ দ্রুত মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক সবরকম যোগাযোগ ও শিপমেন্ট বন্ধসহ আমদানি পণ্যের যোগানে স্বল্পতা এবং দেশের সমস্ত কলকারখানাও বন্ধ ছিল। এর মধ্যেও সরবরাহকারীরাও শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থেই নয়; দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই, মাস্ক, গগলস, পিসিআর মেশিন, পিসিআর কিটস ইত্যাদি) সরবরাহ করে দেশ ও দেশের চিকিৎসকদের পাশে ছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ ব্যাংক ঋণ ও ধার-দেনা করে এসব সরবরাহ করেছেন। দীর্ঘ দেড় বছর পার হলেও সিএমএসডি’র বর্তমান পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামানের একগুয়েমিতে সরবরাহকৃত সুরক্ষা সামগ্রীর বিল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ঋণে জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ওই সময়ের ১৯৬টি প্যাকেজের প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ করে প্রায় দেড় বছর বিলের জন্য বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সরকরারকে দেয়া করোনা সামগ্রীর উপহারের বিলও দেড় বছরে পাননি সরবরাহকারি। অথচ মালামাল না পেয়েই সিএমএসডি পরিচালকের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বড় অঙ্কের বাণিজ্যের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৫৯ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিতে সহায়তা করেছেন।
সূত্র মতে, গত ২৩ মার্চ একটি দৈনিকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘কম্পিউটার ও ল্যাপটপ’ ক্রয়ের দরপত্র আহবান করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। ১২ মে পর্যন্ত দরপত্র প্রদান করার সুযোগ দেয়া হয়। ওই দিনই দরপত্র খোলা হয়। পরবর্তীতে বড় অঙ্কের কমিশণ বাণিজ্যে পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে ‘কম্পিউটার ও ল্যাপটপ’ ক্রয়ের দরপত্র প্রদান করেন। কিন্তু এরপর যা ঘটেছে তা এককথায় অবিশ্বাস্য। গত ২৮ জুন আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সেলস এন্ড সার্ভিস) মো. মুকিত মন্ডল স্বাক্ষরিত সিএমএসডি পরিচালক বরাবর দেয়া এক চালানপত্রে (সিএমএসডি/প্রকিউর-৯২/জি(আরপিএ)-২০২০-২০২১/১১/আইসিটি/ডিপি-ওয়ান(খ)/১৮২, প্যাকেজ নং-জি (আরপিএ)-২০২০-২১/১১, প্রকিউরমেন্ট অব ‘কম্পিউটার এন্ড ল্যাপটপ’) দেখা যায়, ১. ডেস্কটপ কম্পিউটার (অল ইন ওয়ান), ব্রান্ড ওয়ালটন, মডেল-ডব্লিউএও২২১০৪০৩, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ড্রাস্টিজ লি., কান্ট্রি অব অরিজিন বাংলাদেশের ৫০০০টি। ২. ল্যাপটপ কম্পিউটার (টাইপ-১), ব্রান্ড ওয়ালটন, মডেল প্যাসন বিএক্স ৭১০জি প্রো, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ড্রাস্টিজ লি., কান্ট্রি অব অরিজিন বাংলাদেশের ১০০টি। ৩. ল্যাপটপ কম্পিউটার (টাইপ-২), ব্রান্ড ওয়ালটন, মডেল প্যাসন বিএক্স ৫১০জি প্রো, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ড্রাস্টিজ লি., কান্ট্রি অব অরিজিন বাংলাদেশের ৫৯০০টি।
ওই দিনই সিএমএসডি’র সার্ভে বোর্ডের ৩ সদস্য স্টোর অফিসার, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার মো. মামুন অর রশিদ এবং মেডিকেল অফিসার (এসএন্ডডি) স্বাক্ষর দেয়, এবং উক্ত চালানের মালামাল সার্ভে বোর্ড কর্তৃক গৃহীত হইলো বলে লিখিতভাবে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে সিএমএসডি’র সার্ভে বোর্ডের সদস্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার মো. মামুন অর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি কাগজ না দেখে বলতে পারবো না। কাগজ দেখে পরবর্তীতে জানাবেন বললেও এরপর একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এখানেই অনিয়মের শেষ নয়; চালান দেখিয়ে সিন্ডিকেটের ক্ষমতায় একদিন পর ২৯ জুন, চেক নম্বর ৮৫৯৪৩০৯ এর মাধ্যমে ৫৯ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা উঠিয়ে নেয় আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। আর এর বিনিময়ে বড় অঙ্কের কমিশন হাতিয়ে নেন সিএমএসডি’র পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান, উপ-সচিব ডা. শরীফ মুহম্মদ ফয়েজুল আলম এবং সিনিয়র সহকারি সচিব ও সমন্বয়ক মো. মাহবুব আলমের সিন্ডিকেট।
আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, জুন ক্লোজিং বা অর্থবছর শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই আগে টাকা দিয়েছে সিএমএসডি। তবে মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সরবরাহের সময় শেষ হয়নি। মালামাল কিছু গেছে, বাকীটা দেয়া হচ্ছে। সাড়ে ৪ হাজার কম্পিউটার দেয়া হয়েছে। বাকীটা এমাসেই দিয়ে দিব। এখনো সময় আছে। তবে এ অর্থের বিনিময়ে জামানত দেয়া আছে।
মালামাল সরবরাহের আগেই টাকা নেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিএমএসডি দিয়েছে তাদের কাছ থেকে জানেন কেন দিয়েছে। আমি কিভাবে বলবো। সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারীর ভাষ্য মতে, টাকা নেয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে মালামাল সরবরাহের নিয়ম রয়েছে। তাই মালামাল দেয়া হচ্ছে। তবে ৪৫ দিন পার হয়ে গতকাল ৭৫ দিনও অতিবাহিত হয়েছে। এখনো মালামাল সরবরাহ করা হয়নি এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল কল কেটে দেয়া হয়। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করলেও মুন্সী সাজ্জাদ হোসেনের কাছ থেকে কোন উত্তর মিলেনি।
এদিকে মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন শুধু আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামেই নয়; ভাতিজা অনিকের নামে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স, ভাই ফারুক মুন্সীর নামে আহমেদ এন্টারপ্রাইজ, আরেকভাই আব্ধুল্লাহ আল মামুনের নামেও রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এভাবে বিভিন্ন নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন হাতিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা। মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন ও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এর আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ পর্দা ক্রয়ের নামে সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের াভিযোগ রয়েছে। মাত্র ৯০ হাজার টাকার আইসিইউ পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরে হাসপাাতালে সরবরাহ করা হয়। অবশ্য এ অনিয়ম করেও কিছুদিন জেল খেটে পার পেয়ে যান মুন্সী সাজ্জাদ। তাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নতুন করে আবার শুরু করেছেন সরকারের অর্থ আত্মসাতের এই ব্যবসা।
ফরিদপুর হাসপাতালের আইসিইউ’র পর্দা ও আসবাব কেনায় ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে দুদক। যা এখনো অনুসন্ধানাধীন। অথচ পর্দা কেলেঙ্কারীর রেশ কাটতে না কাটতেই সিএমএসডি’র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সরবরাহ না করেই আবারো ৫৯ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকার বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেছেন, মালামাল না পেয়ে মালামাল বুঝে পাওয়া বলার সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ রকম ঘটলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।