পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
গত এক বছরের ভাঙনে দুই উপজেলার চারটি বাজারসহ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও সহস্রাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারানোর পাশাপাশি নদী গিলে খেয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এ অবস্থায় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেয়ার প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই মেঘনা তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ, কাদিরপণ্ডিতেরহাট, লুধুয়া ফলকন ও পাটারীরহাট এবং রামগতি উপজেলার পশ্চিম বালুরচর, জনতা বাজার, আসলপাড়া, চরআলগী, বিবিরহাট ও বড়খেরী গ্রামে নদী ভাঙনের ভয়াবহতা চলছে। ভাঙনে ওইসব এলাকার প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০-১২টি পরিবার বসতভিটা হারাচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ অন্য এলাকায় গিয়ে এক টুকরো জমি নিয়ে কোনো রকম মাথা গোঁজাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। অন্যদের ঠিকানা হচ্ছে সরকারি বেড়িবাঁধের ওপর। আয়-রোজগারের মাধ্যম হারিয়ে সেখানে মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয়রা জানান, গত এক বছরে ভাঙনে কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ ও লুধুয়া বাঘারহাট এবং রামগতি উপজেলার গোয়েন্দাপাড়া মাছঘাট বাজার ও উচখালী বাজার নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ দারুল আমান কাওমি মাদরাসা, চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরজগবন্ধুর মুন্সীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রামগতি উপজেলার চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে হুমকিতে রয়েছে চারটি বাজারসহ আরও ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গেল এক বছরের ভাঙনে দুই উপজেলার প্রায় এক হাজার পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এই সময়ে বিলীন হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনাসহ কয়েকশ’ একর ফসলি জমি।
কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ছাইফ উল্যাহ জানান, মেঘনার ভাঙনে প্রতিনিয়ত তার ইউনিয়নটি ছোট হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ভাঙনের ভয়বহতায় ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ বাজারটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাজার সংলগ্ন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ এখন চরম হুমকিতে রয়েছে।
পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে মেঘনার ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে ইউনিয়নের লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরজগবন্ধু মুন্সীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারিয়েছেন শতাধিক পরিবার।
রামগতি উপজেলার জনতা বাজার এলাকার বাসিন্দা ও লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রিপন পাটওয়ারী জানান, মেঘনার ভাঙন থেকে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনতা বাজার এলাকা রক্ষায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রতি একনেকে ভাঙনরোধে প্রায় ৩১শ’ কোটি টাকার প্রকল্পটি পাশ হওয়ায় তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় তারা এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
একই উপজেলার চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী বলেন, ভাঙনের মুখে পড়ে তার ইউনিয়নের গোয়েন্দা বাজার মাছঘাটটি সম্প্রতি নদীগর্ভে চলে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির শিকার হন। এছাড়া ইউনিয়নের মধ্য চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির খুব কাছাকাছি ভাঙন চলে আসায় স্কুলটি এখন স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। কমলনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান জানান, গেল এক বছরে মেঘনার ভাঙনে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত বিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙনরোধে তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী নভেম্বর মাসে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।