পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা থেকে : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে মংলা বন্দরে গতিশীলতা আসছে না। সমতা না আসায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পিছিয়ে পড়ছে মংলা বন্দর। এছাড়া খুলনা কাস্টমসের শুল্ক-কর জটিলতার কারণে বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দরে বোঝাই-খালাস কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মংলা বন্দরকে গতিশীল করতে গত আগস্ট মাসে শুল্ক-কর জটিলতা নিরসনে ৬টি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে মংলা বন্দর ব্যবহারে ব্যয় কমাতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এ কমিটির প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন অর্থ সচিব। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ২৪ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খানকে ডিও লেটার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ৬টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- মংলা বন্দরে দ্রæত পণ্য খালাস পদ্ধতি গ্রহণ, শুল্ক মুল্যায়ন বিধিমালা ২০০০ এর প্রজ্ঞাপন ৫৭ অনুসরণ, আমদানি পণ্য চালান দৈব চয়নের ভিত্তিতে ১০ শতাংশ কায়িক পরীক্ষা, পণ্য পরীক্ষা একবারের অধিক নয়, কনটেইনার ভাড়া তুলনামূলক কমানো এবং বাজেটে বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ ফাস্ট সিডিউলের চ্যাপ্টার ৮২, ৮৩, ৮৪ ও ৯৪ এ বর্ণিত পণ্য মংলা বন্দর দিয়ে আমদানির বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
অর্থমন্ত্রীকে দেয়া ডিও লেটারে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সমতা আনার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ডিও লেটারে আরো বলা হয়, মংলা বন্দরে দ্রæত পণ্য খালাস পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বর্তমানে তা অনুসরণ না হওয়ায় পণ্য খালাসে বিলম্ব, হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় আমদানিকৃত পণ্য চালানের কনটেইনারের ভাড়া মংলা বন্দরে বেশি। তাই চট্টগামের মতো এ বন্দরে ভাড়া কম করা প্রয়োজন। আর এসব বিষয়ে বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়। ওই কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, এফবিসিসিআই, খুলনা চেম্বার সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে রাখার নিদের্শনা দেয়া হয়। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে অর্থমন্ত্রী এ কমিটির প্রতিবেদন জমাদেয়ার সর্বোচ্চ দুই মাস বাড়াতে পারবেন।
জানা গেছে, এর আগে মংলা বন্দরের সমস্যা নিয়ে মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন একটি চিঠি দিয়েছে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে। পাশাপাশি খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রæপও এ বন্দরকে গতিশীল করতে ৯ দফা প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মংলা বন্দরের ফেয়ার বয়া, পশুর নদী ও মংলা ক্রিক এবং মংলা ঘাষিয়াখালী চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কাজ নিয়মিতভাবে অব্যাহত রাখা। এ চ্যানেলটি সব ধরনের জাহাজ চলাচলের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের শ্যালা নৌ-রুট খুলে দেয়া। এছাড়া এ বন্দরে জ্বালানি তেলের ডিপো বিদ্যুৎ প্লান্ট ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান ক্রেনের ব্যবস্থা গ্রহণ। নৌযান বাঁধার জন্য পর্যাপ্ত বয়া ও বয়া বাতি স্থাপন। পাশাপাশি খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের মিলগুলোয় ব্যবহারের কাঁচামাল ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ১০০ শতাংশ পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে আমদানি বাধ্যতামূলক করা। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এ বন্দর ব্যবহারের জন্য নেপাল, ভুটান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে ট্রানজিট প্রদান করা যেতে পারে।
এদিকে চলমান সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান হোসেন খান বলেন, পণ্যের কায়িক পরীক্ষা জটিলতার কারণে বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে আমদানিকৃত পণ্যের চালানোর পুরোটাই কায়িক পরীক্ষা করা হয়। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যের চালানের দৈব চয়ন ভিত্তিতে মাত্র ১০ শতাংশ পরীক্ষা করা হয়। আমদানিকৃত পণ্যের চালান শুল্কায়নের আগে বিভিন্ন অজুহাতে একাধিকবার পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। অর্থদÐ ও সময় ব্যয় হওয়ার কারণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে একবারেই পণ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা গত ১৯ জুলাই কাস্টমস কমিশনারের বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করি কিন্তু সমস্যা সমাধানে এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। হয়রানি এড়াতে ইতোমধ্যেই ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরাও হতাশ হয়ে পড়েছি। শীঘ্রই সমস্যা সমাধান না হলে এ বন্দর আবারও অচালাবস্থার সৃষ্টি হবে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজি আমিনুল হক বলেন, বন্দরের গতিশীলতা আনার জন্য আমরা সুপারিশ দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সে আলোকে তার দফতর থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ আমাদের নজরে আসেনি। এ পর্যন্ত আমাদেরকে কোনো কিছুই অবহিত করা হয়নি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নসহ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
খুলনা কাস্টমস কমিশনার আল-আমিন প্রামাণিক বলেন, মংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের কোনো সুপারিশ আমার কাছে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শুনেছি, কিন্তু আমাদের কাছে লিখিতভাবে নির্দেশনা আসেনি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর নির্দিষ্ট নিয়মেই চলে। এ বন্দরে ব্যবসায়ীদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।