পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারি পাটকল বন্ধের পরেও দেশে পাট আবাদ উৎপাদন ও বিপণন ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসায় দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের পাট চাষিদের মুখে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত হাসি ফিরে এসেছে। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বাজারে এখন পাটের দর প্রতি মণ আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। কোথাও তা ৩ হাজার টাকার ওপরেও বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের আবাদ এবং উৎপাদন গত কয়েক বছরের তুলনায় যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক ধারায় ফিরেছে। দেশে ৭৭.২৫ লাখ বেল এর স্থলে এবার ৮৬ লাখ ১১ হাজার বেল পাটের সম্ভাব্য উৎপাদনের কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় হেক্টর প্রতি উৎপাদন ১১.৪৮ টন। অথচ গত বছর করোনা সঙ্কটের মধ্যেই সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ায় পাট নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা আর দুর্ভোগের শেষ ছিলো না। যেখানে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন ব্যয় দু’হাজার টাকার ওপরে, সেখানে গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। ফলে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের পাট চাষিরাও সর্বশান্ত হতে বসেছিল। অথচ ধানের চেয়ে বেশি দাম পাবার আশায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা গত কয়েক বছর পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছিল।
কিন্তু তারা হতাশ হয়ে দমে থাকেনি। এবার দেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টরে পাটের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৯.৪৫%। তবে গত বছরের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায়ই আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টরে। ডিএই’র মতে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৩০% পাটের আবাদ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেলাতেই পাটের আবাদ গত বছরের চেয়ে এবার বেশি ছিল। বৃহত্ত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় গত বছর ২ লাখ ১৮ হাজার ৭শ’ হেক্টরের স্থলে এবার প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টরে পাটের আবাদ হয়। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতেও পাটের আবাদ বাড়ছে। তবে এখনো পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে আবাদকৃত পাট শাক বিক্রি করে কৃষকরা আগাম অর্থ ঘরে তোলে।
এরপরও বরিশাল, পিরোজপুর ও ভোলাতে পাটের আবাদ এবং উৎপাদন বাড়ছে। গত বছর যেখানে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ২৭ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল, এবার সেখানে ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলাতেই ২৬ লাখ ৩১ হাজার বেল সম্ভাব্য উৎপাদন হয়েছে। এর বাইরে বৃহত্ত্বর বরিশালের জেলাগুলোতেও আরো অন্তত ৩ লাখ বেল পাট উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী ডিএই। এমনকি পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ উপযোগী নোনা পানি সহিষ্ণু পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে। ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে নাবী জাতের পাটবীজ উদ্ভাবন করেছে। যা আমদানিকৃত বীজের চেয়ে উন্নমানের ও উচ্চ ফলনশীল। আগামীতে এ পাট বীজই দেশের মোট আবাদকৃত এলাকার চাহিদা মেটাবে।
বেসরকারি পাটকলগুলো ইতোমধ্যে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাট কেনা প্রায় শেষ করে এনেছে। তবে বোরো ধানের পরে পাটনির্ভর বৃহত্ত্বর ফরিদপুরে বেসরকারি খাতের ১৯টি পাটকলের মধ্যে সচল রয়েছে ১৩টি। বরিশাল অঞ্চলে ছোট ও মাঝারি মাপের আরো ৫টি পাটকল থাকলেও সবগুলোই চলতি মূলধন, আধুনিক মেশিনারির অভাবের সাথে ব্যাংকের দেনার দায়ে বন্ধ। বেসরকারি খাতে দেশের অন্যতম বৃহত করিম জুট মিল ও পারটেক্স গ্রুপের পাটকলও ফরিদপুর অঞ্চলে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশে পাট চাষির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হলেও এ খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। আর জিডিপিতে পাটের অবদান ০.২৬% হলেও কৃষি সেক্টরে একক অবদান ১.১৪%। দেশে উৎপাদিত পাটের ৫১% এখনো স্থানীয় পাটকলে ব্যবহৃত হলেও ৪৪% কাঁচা পাট বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে, পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি আয় প্রায় ১শ’ কোটি ডলারের কাছে। এ খাতে প্রতি বছরই প্রবৃদ্ধি ঘটছে। পাটখাতের রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসছে পাটসুতা থেকে। কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও পাটের বস্তা ও চট রফতানি করেও প্রতি বছর আয় বাড়ছে। পাট খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০%। ফলে দীর্ঘদিন পরে পাটজাত পণ্য রফতানি চামড়াজাত পণ্যকে ছাড়িয়ে গেছে।
অপরদিকে পরিবেশবিদদের মতে, পাটের আবাদ বাড়লে গ্রামের জ্বালানি চাহিদার বড় অংশই মিটবে। পাট উৎপাদন এলাকার বড় জনগোষ্ঠী জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠি ব্যবহার করছে। ফলে গাছপালা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকছে। এছাড়া পাটখড়ি থেকে পারটেক্স বোর্ডসহ গত কয়েক বছর ধরে রফতানি পণ্য চারকল উৎপাদিত হচ্ছে। জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা, দেশি পাটকল সচল রাখা ও রফতানি খাতকে সজীব রাখতে পাট আবাদের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।